ঢাকা, ডিসেম্বর ২১, ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ১৮:২৭:২৪

মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুন্যে আফগানিস্তানকে উড়িয়ে বিশ্বকাপ শুরু টাইগারদের

| ২২ আশ্বিন ১৪৩০ | Saturday, October 7, 2023

ধর্মশালা : মেহেদি হাসান মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুন্যে দারুন জয় দিয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ১৩তম আসর শুরু করলো বাংলাদেশ। টুর্নামেন্টে  আজ নিজেদের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ ৬ উইকেটে হারিয়েছে আফগানিস্তানকে। বল হাতে ৩ উইকেট শিকারের পর ব্যাট হাতে ৫৭ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরা হন মিরাজ।  এছাড়া  দলের জয়ে গুরুত্বপুর্ন অবদান রেখেছেন  ব্যাট হাতে অপরাজিত ৫৯ রান করা  নাজমুল হোসেন শান্ত। সাকিব আল হাসানের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে বিশ^কাপের ম্যাচে ৩ উইকেট শিকার ও ৫০ রান করা খেলোয়াড় হলেন মিরাজ।

দুই স্পিনার সাকিব আল হাসান ও মিরাজের ঘুর্ণিতে পড়ে ৩৭ দশমিক ২ ওভারে  ১৫৬ রানে অলআউট হয় প্রথমে ব্যাট করতে নামা আফগানিস্তান। ৪৪ রানে শেষ ৬ উইকেট হারায় আফগানরা। সাকিব ও মিরাজ ৩টি করে উইকেট নেন। জবাবে মিরাজের ৫৭ ও নাজমুল হোসেন শান্তর অপরাজিত ৫৯ রানের সুবাদে ৯২ বল বাকী রেখেই টানা তিন বিশ^কাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। ২০১৫ ও ২০১৯ সালের বিশ^কাপেও নিজেদের প্রথম ম্যাচে জয় পেয়েছিলো বাংলাদেশ।
ধর্মশালার হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্বান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব। ব্যাট হাতে নেমে বাংলাদেশের তিন পেসার তাসকিন আহমেদ-শরিফুল ইসলাম ও মুস্তাফিজুর রহমানকে দারুণভাবে সামাল দেন আফগানিস্তানের দুই ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান। ৮ ওভারে বিনা উইকেটে ৪৭ রানের সূচনা করেন তারা।
তিন পেসার আফগানিস্তানে উদ্বোধনী ভাঙ্গতে ব্যর্থ হওয়ায় চতুর্থ বোলার হিসেবে নিজেই আক্রমনে আসেন সাকিব। ইনিংসের নবম ও নিজের দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে বাংলাদেশকে প্রথম ব্রেক-থ্রু এনে দেন পঞ্চম বিশ^কাপ খেলতে নামা সাকিব। টাইগার দলপতির অফ স্টাম্পের বাইরের বলে সুইপ করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে তানজিদ হাসানকে ক্যাচ দেন ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ২৫ বলে ২২ রান করা ইব্রাহিম।
দলীয় ৪৭ রানে প্রথম উইকেট পতনের পর জুটি গড়ার চেষ্টা করেন গুরবাজ ও রহমত শাহ। দেখেশুনে খেলে রানের চাকা সচল রাখেন তারা। ১৫ ওভার শেষে ১ উইকেটে ৮৩ রান পেয়ে যায় আফগানিস্তান।
ইনিংসের ১৬তম ও নিজের চতুর্থ ওভারে আবারও বাংলাদেশকে আবারো ব্রেক থ্রু এনে দেন  সাকিব। আবারও সাকিবের অফ-স্টাম্পের বাইরের বলে সুইপ করতে গিয়ে মিস টাইমিংয়ে কাভারে লিটন দাসকে ক্যাচ দেন ১৮ রান করা রহমত।
এরপর অধিনায়ক হাসমতুল্লাহ শাহিদিকে নিয়ে আফগানিস্তানের রান ১শ পার করেন গুরবাজ। ২৫তম ওভারে শাহিদিকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে তৃতীয় সাফল্য এনে দেন মিরাজ। সাবধানে খেলতে থাকা শাহিদি ৩৮ বল খেলে ১৮ রান করেন।
পরের ওভারে উইকেটে সেট ব্যাটার গুরবাজকে ফেরান  মুস্তাফিজ। ডিপ পয়েন্টে তানজিদকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ৬২ বলে ৪৭ রান করা গুরবাজ।
১১২ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে আফগানিস্তান। এ অবস্থায় আফগানিস্তানের মিডল অর্ডারের দুই ব্যাটারকে আউট করে চাপ আরও বাড়ান সাকিব ও তাসকিন। ২৯তম ওভারে নাজিবুল্লাহ জাদরানকে দারুন এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেন সাকিব। ১৩ বলে ৫ রান করেন নাজিবুল্লাহ। পরের ওভারে ১২ বলে ৬ রান করা মোহাম্মদ নবির উইকেট উপড়ে ফেলেন তাসকিন। ১২৬ রানে ষষ্ঠ উইকেট পতন হয় আফগানিস্তানের।
এ অবস্থায় সপ্তম উইকেটে ২৬ বলে ২৪ রান যোগ করে আফগানিস্তানের রান দেড়শতে নেন আজমতুল্লাহ ওমারজাই ও রশিদ খান। ৩৫তম ওভারে রশিদকে ব্যক্তিগত ৯ রানে বোল্ড করে দ্বিতীয় উইকেট শিকার করেন মিরাজ।
৩৫তম ওভারে দলীয় ১৫০ রানে সপ্তম ব্যাটার হিসেবে রশিদ ফেরার পর আফগানিস্তান ইনিংসের শেষ ৩ উইকেট দ্রুতই তুলে নেন শরিফুল ও মিরাজ। ৩৭ দশমিক ২ ওভারে ১৫৬ রানে গুটিয়ে যায় আফগানিস্তান। ১৫৬ রানেই শেষ ৩ উইকেট হারায় আফগানরা।
ওমারজাইকে ২২ রানে এবং নাভিন উল হককে খালি হাতে বিদায় করেন শরিফুল। মুজিব উর রহমানকে রানের খাতা খুলতে দেননি মিরাজ। অর্থাৎ বাংলাদেশী বোলারদের সামনে ধুকতে থাকা আফগানরা ৪৪ রানে শেষ ৬ উইকেট হারায়।
সাকিব ৮ ওভারে ৩০ রানে ও মিরাজ ৯ ওভারে ২৫ রানে ৩টি করে উইকেট নেন। শরিফুল ৩৪ রানে ২টি, তাসকিন ৩২ রানে ও মুস্তাফিজ ২৮ রানে ১টি করে উইকেট শিকার করেন।
জয়ের জন্য ১৫৭ রানের লক্ষে খেলতে নেমে  ৪ ওভারে বিনা উইকেটে ১৯ রান তুলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার তানজিদ হাসান ও লিটন দাস। পঞ্চম ওভারে দলীয় ১৯ রানে রান আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেন ১৩ বলে ৫ রান করা তানজিদ।
এরপর সপ্তম ওভারে প্যাভিলিয়নে তানজিদের সঙ্গী হন লিটন। আফগানিস্তানের পেসার ফজলহক ফারুকির বলে ইনসাইড এজ হয়ে বোল্ড হন ২টি চারে ১৮ বলে ১৩ রান করা  লিটন।
২৭ রানে ২ ওপেনারকে হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় জুটি বাঁধেন মিরাজ ও শান্ত। ফারুকির করা নবম ওভারের চতুর্থ বলে পয়েন্টে নজিবুল্লাহকে ক্যাচ দিয়ে ব্যক্তিগ ১৭ রানে  জীবন পান ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মত তিন নম্বরে খেলতে নামা মিরাজ। ১২তম ওভার করা পেসার নাভিন উল হকের দ্বিতীয় ডেলিভারিতে আবারও জীবন পান মিরাজ। ডিপ থার্ডে মিরাজের ক্যাচ তালুবন্দি করতে পারেননি মুজিব। এবার ২৩ রানে জীবন পান মিরাজ।
দু’বার জীবন পেয়ে শান্তর সাথে ২৩তম ওভারে বাংলাদেশের রান ১শতে নেন মিরাজ। ঐ ওভারেই ওয়ানডেতে তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরি করেন ৫৮ বল খেলা মিরাজ। বিশ^কাপের আগে প্রস্তুতি ম্যাচের দু’টিতেই হাফ-সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি।
হাফ-সেঞ্চুরির পর ইনিংস বড় করতে পারেননি মিরাজ। নাভিনের বলে মিড অফে রহমতকে ক্যাচ দিলে  ৫টি চারে ৭৩ বলে ৫৭ রান করা  ডান হাতি ব্যাটারের ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে। সর্বশেষ এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওপেনার হিসেবে নেমে ১১২ রানের ইনিংস খেলেছিলেন মিরাজ। তৃতীয় উইকেটে শান্ত-মিরাজ  ১২৯ বলে ৯৭ রানের জুটি গড়েন।
মিরাজ যখন ফিরেন তখন জয় থেকে ৩৩ রান দূরে ছিলো বাংলাদেশ। সাকিবকে নিয়ে দলের নিশ্চিত করার পথেই ছিলেন শান্ত। কিন্তু ৩৪তম ওভারে দলীয় ১৪৬ রানে ওমরজাইর বলে শিকার হয়ে জয় থেকে ১৪ রান দূরে থাকতে প্যাভিলিয়নের  ফেরেন সাকিব। সাকিব।শান্ত-সাকিব জুটি ২২ রান যোগ করেন।
সাকিব ফেরার পর মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে প্রয়োজনীয় ১১ রান তুলে ৩৫তম ওভারেই বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন শান্ত। ৮০ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ অধর্শতকের দেখা পাওয়া শান্ত শেষ পর্যন্ত ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ৮৩ বলে  ৫৯ রানে অপরাজিত থাকেন । ২ রানে অপরাজিত থাকেন মুশফিক। আফগানিস্তানের ফারুকি-নাভিন ও ওমরজাই ১টি করে উইকেট নেন।
ধর্মশালায় আগামী ১০ অক্টোবর নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।
স্কোর কার্ড : (টস-বাংলাদেশ)
আফগানিস্তান ইনিংস :
গুরবাজ ক তানজিদ ব মুস্তাফিজ ৪৭
ইব্রাহিম ক তানজিদ ব সাকিব ২২
রহমত ক লিটন ব সাকিব ১৮
শাহিদি ক হৃদয় ব মিরাজ ১৮
নাজিবুল্লাহ বোল্ড সাকিব ৫
নবি বোল্ড তাসকিন ৬
ওমারজাই বোল্ড শরিফুল ২২
রশিদ বোল্ড ব মিরাজ ৯
মুজিব বোল্ড ব মিরাজ ১
নাভিন ক হৃদয় ব শরিফুল ০
ফারুকি অপরাজিত ০
অতিরিক্ত (ও-৮) ৮
মোট (অলআউট, ৩৭.২ ওভার) ১৫৬
উইকেট পতন : ১/৪৭ (ইব্রাহিম), ২/৮৩ (রহমত), ৩/১১২ (শাহিদি), ৪/১১২ (গুরবাজ), ৫/১২২ (নাজিবুল্লাহ), ৬/১২৬ (নবি), ৭/১৫০ (রশিদ), ৮/১৫৬ (ওমারজাই), ৯/১৫৬ (মুজিব), ১-১০/১৫৬ (নাভেন)।
বাংলাদেশ বোলিং :
তাসকিন : ৬-০-৩২-১ (ও-১),
শরিফুল : ৬.২-১-৩৪-২ (ও-২),
মুস্তাফিজুর : ৭-১-২৮-১,
সাকিব : ৮-০-৩০-৩,
মিরাজ : ৯-৩-২৫-৩ (ও-১),
মাহমুদুল্লাহ : ১-০-৭-০।
বাংলাদেশ ইনিংস :
তানজিদ রান আউট ৫
লিটন বোল্ড ফারুকি ১৩
মিরাজ ক রহমত ব নাভিন ৫৭
শান্ত অপরাজিত ৫৯
সাকিব ক ফারুকি ব ওমারজাই ১৪
মুশফিক অপরাজিত ২
অতিরিক্ত (লে বা-৩, নো-১, ও-৪) ৮
মোট (৪ উইকেট, ৩৪.৪ ওভার) ১৫৮
উইকেট পতন : ১/১৯ (তানজিদ), ২/২৭ (লিটন), ৩/১২৪ (মিরাজ), ৪/১৪৬ (সাকিব)।
আফগানিস্তান বোলিং :
ফারুকি : ৫-০-১৯-১ (ও-১),
মুজিব : ৭-০-৩০-০ (ও-২),
নাভিন : ৫.৪-০-৩১-১,
রশিদ : ৯-০-৪৮-০ (ও-১),
নবি : ৬-১-১৮-০,
ওমারজাই : ২-০-৯-১।
ফল : বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী।