নতুন ইতিহাসের জন্ম দিলেন মুশফিকুর রহিম। নতুন অভিজ্ঞতা হলো মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনে ‘অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ড’ আউট হয়েছেন মুশফিক। টেস্ট ইতিহাসের মাত্র দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে এই ধরনের আউট হলেন তিনি। আর বাংলাদেশের হয়েি। আর বাংলাদেশের হয়েি। আর বাংলাদেশের হয়েি। আর বাংলাদেশের হয়েি। আর বাংলাদেশের হয়ে প্রথমে জানা যাক, কীভাবে আউট হয়েছেন মুশফিক? ‘অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ড’ আউটই-বা কী? খেলার মধ্যে কোনও ব্যাটার ইচ্ছাকৃতভাবে বল হাত দিয়ে আটকালে বা থামালে ‘হ্যান্ডলড দ্য বল’ হিসেবে ধরা হতো। সেক্ষেত্রে আউটের বিধান আছে। তবে ২০১৭ সাল থেকে এই আউটকে ‘অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ড’-এর আওতায় ধরা হয়।
ক্রিকেট আইনে ‘অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ড’-এর ৩৭.১১ ধারায় বলা আছে, বল খেলার মধ্যে থাকাকালীন ব্যাটার যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কথা বা কাজের মাধ্যমে ফিল্ডিং দলকে বাধা দেন কিংবা মনোযোগ নষ্ট করেন, তাহলে তিনি আউট। তবে ৩৭.২ ধারায় আবার বলা আছে, চোট থেকে বাঁচতে এমন কিছু করলে ব্যাটার আউট হবেন না।
এর আইনের ৩৭.১২ ধারা অনুযায়ী, বোলার বল করার পর ব্যাটার যদি যে হাতে ব্যাট ধরা নেই সেই হাত দিয়ে বলে আঘাত করেন বা ছুঁয়ে সরিয়ে দেন, তবে আউট ঘোষিত হবেন (এখানে ব্যতিক্রম ৩৭.২ ধারা)।
এই আইনে, যেহেতু খেলার মধ্যে থাকার সময়ই মুশফিক ‘ইচ্ছা’ করে বল হাত দিয়ে সরিয়ে দিতে চেয়েছেন, তাই তিনি আউট। থার্ড আম্পায়ার সেই সিদ্ধান্তই দিয়েছেন।এখন প্রশ্ন হলো, মুশফিক কি নিয়মটি জানতেন না? বাংলাদেশের ইনিংসের ৪১তম ওভারে কাইল জেমিসনের বল ডিফেন্ড করেছিলেন মুশফিক। বল যাচ্ছিল স্টাম্পের অনেক বাইরে দিয়ে। কিন্তু কী বুঝে বলটি থামাতে চাইলেন এই ব্যাটার। তাতেই সর্বনাশ। আউটের আবেদন করেন নিউজিল্যান্ডের খেলোয়াড়রা। এরপর থার্ড আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে আউট।
ততক্ষণে মুশফিক নিজেও বুঝে গেছেন কী ভুল তিনি করেছেন। চোখেমুখে হতাশা। ওই সময় ধারাভাষ্য কক্ষে তামিম ইকবাল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবার ধারাভাষ্য দিতে গিয়েই মাঠের সতীর্থের এমন ‘পাগলামি’ দেখে স্বাভাবিকভাবে তিনিও হতাশ। তামিম যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না।
বিস্ময়ভরা কণ্ঠে বলে উঠলেন, ‘মুশফিকের এমন আউট খুবই হতাশাজনক, খুবই হতাশাজনক।’ধারাভাষ্য কক্ষে ওই সময় তামিমের পাশে বসা আতহার আলী খান। তার চোখেমুখেও বিস্ময়। মুশফিকের মতো এত অভিজ্ঞ একজন ব্যাটার এমন ভুল করলেন কীভাবে! তামিম তো বলেই ফেললেন, ‘৮০টিরও বেশি টেস্ট খেলেছে মুশফিক। তার জানা উচিত ছিল এটা (হাত দিয়ে বল থামানো) করা যায় না।’
এখন বিষয় হলো, ১৭ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে থাকা মুশফিক এটা করলেন কেন? তামিমের কাছে একটা ব্যাখ্যা পাওয়া গেছে। তার মতে, নেট অনুশীলনের অভ্যাস থেকেই এটা হয়তো করে ফেলেছেন মুশফিক। নেটে ব্যাটিং অনুশীলন করার সময় স্টাম্পের পেছনে কেউ থাকে না। বল কাছাকাছি থাকলে ব্যাটার নিজেই ফিল্ডিং করে থাকেন। যাতে বোলারের কাছে দ্রুত বলটি পৌঁছে যায়। সেই অভ্যাস থেকেই মুশফিক এমনটা করে থাকতে পারেন। তবে এইসব অজুহাত যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে করা যায় না, সেটিও জানা আছে তামিমের। তাই বললেন, ‘এ ধরনের আউটে এটা কোনও অজুহাত হতে পারে না।’ প্রথম দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে আসা মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যাখ্যা অবশ্য ভিন্ন। তার মতে, খেলার ফ্লোতে মুশফিক এমনটা করে ফেলেছেন। সঙ্গে যুক্তি দিয়েছেন, ‘কোনও ব্যাটার তো আর ইচ্ছা করে আউট হতে চাইবেন না।’
মুশফিকও নিশ্চয় সেটি করেননি। তবে ‘অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ড’ আউট হওয়ার আগে আরেকবার একই কাজ করতে গিয়েছিলেন তিনি। সেটি ছিল ২৮তম ওভারের ঘটনা। যদিও সেবার বল স্টাম্পের খুব কাছেই ছিল। হাত দিয়ে থামানো চেষ্টা করলেও সেবার হাতে বল লাগেনি মুশফিকের।
৪১তম ওভারে আর রক্ষা হয়নি। টেস্ট ক্রিকেটের মাত্র দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে ‘অদ্ভূত’ এক আউটের শিকার মুশফিক। তার মতো একই ধরনের ভুলে আউট হয়েছিলেন মাইকেল ভন। সাবেক ইংলিশ অধিনায়কের নামের পাশে অবশ্য লেখা ‘হ্যান্ডলড দ্য বল’ আউট। বেঙ্গালুরুতে ২০০১ সালে ভারতের বিপক্ষে ‘হ্যান্ডলড দ্য বল’ আউট হয়েছিলেন ভন।
মুশফিকের আউটটি নাম পাল্টে হয়েছে ‘অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড’। একই ভুলের আউট হওয়ায় মুশফিককে উদ্দেশ্যে করে টুইটও করেছেন ভন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে সাবেক ইংলিশ তারকা লিখেছেন, ‘বিরল হ্যান্ডলড বল ক্লাবে তোমাকে স্বাগতম, মুশফিক। শুধু উপযুক্ত ক্রিকেটাররাই এই ক্লাবের সদস্য।’
ছেলেদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১২তম ব্যাটার হিসেবে ‘অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ড’আউট হলেন মুশফিক। টেস্টে ক্রিকেটে দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে। ১৯৫১ সালে ওভাল টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম এভাবে আউট হয়েছিলেন ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি ওপেনার লেন হাটন।