ঢাকা, এপ্রিল ২৮, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ০০:০১:২৪

স্বাদ বদলাতে নিরামিষ খাবার

| ১৪ কার্তিক ১৪২৩ | Saturday, October 29, 2016

তাঁতীবাজারের একটি রেস্তোরাঁর নিরামিষ খাবার l প্রথম আলো

প্রথমে টেবিলে আসবে স্টিলের থালাভর্তি ধোঁয়া ওঠা সাদা ভাত। তারপর ট্রেতে সাজানো ছোট ছোট বাটিতে ৮-১০ পদ। সবই নিরামিষ। কাশ্মীরি পনির, ছানার ধোকা, সয়াবিন সবজি, পটোল-সরিষা ভুনা, ডালের বড়ার রসা—আরও নানা কিছু। শেষ পাতে চাটনি আর আলু-গাজরের পায়েস। তাঁতীবাজারের সম্পূর্ণ নিরামিষ খাবারের রেস্তোরাঁ বিষ্ণুপ্রিয়াতে পাওয়া যাবে এ পদগুলো।
পুরান ঢাকায় কাবাব-বিরিয়ানির ভিড়ে কয়েকটি নিরামিষ রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে তাঁতীবাজার এলাকায় আছে পাঁচটি। এখানকার সবচেয়ে পুরোনো বিষ্ণুপ্রিয়া হোটেল। তাঁতীবাজার শিবমন্দির থেকে ডান দিকে একটু এগোলোই হাতের বাঁ দিকে পড়বে রেস্তোরাঁটি। ভেতরে পাঁচটি টেবিল পাতা। রেস্তোরাঁর সাজসজ্জা সাধারণ, তবে বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। টেবিলে বসার পর পরিবেশনকারী ব্যক্তিরা ওই দিনের নিরামিষ পদগুলো ট্রেতে করে নিয়ে আসেন। ক্রেতাকে সেখান থেকে তাঁর পছন্দ অনুযায়ী বেছে নিতে হয়।
তিন ভাই মিলে রেস্তোরাঁটি চালান। ছোট ভাই অমল কৃষ্ণ দাস বলেন, এখানে কোনো বাসি খাবার পরিবেশন করা হয় না। প্রতিদিন বাজার করে রান্না হয়। হিন্দু-মুসলমান সবাই এখানে খেতে আসেন। বিষ্ণুপ্রিয়া প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত খোলা থাকে। দুপুর ও রাতে ১৫ থেকে ২০ ধরনের নিরামিষ পাওয়া যায়। যে মৌসুমে যে শাকসবজি সহজলভ্য, সেগুলোর তরকারি রান্না হয়। নিয়মিত পদের তালিকায় আছে সয়াবিন সবজি, পাঁচ সবজি, কাশ্মীরি পনির, ছানার রসা, আলু-পটোলের রসা, মুগ ডাল, বুটের ডাল, বিভিন্ন ধরনের শাকভর্তা, চাটনি, পায়েস। সঙ্গে থাকে অন্ন বা সাদা ভাত। শীতকালে ভাতের পাশাপাশি ‘পুষ্পান্ন’ (পোলাও) আর খিচুড়িও পাওয়া যায়। আর সকাল-বিকেলে নাশতার ব্যবস্থাও আছে। সব খাবারের দাম ১০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে। মেজ ভাই মণি শংকর দাস বলেন, তাঁদের এখানে ১০০ টাকার কমে একজন পেট পুরে খেতে পারেন।
তাঁতীবাজার এলাকার বাকি নিরামিষ খাবারের রেস্তোরাঁগুলো হলো জগন্নাথ ভোজনালয়, আদি গোবিন্দ রেস্টুরেন্ট, জয় মা তারা আর গোপীনাথ নিরামিষ ভোজনালয়। দোকানগুলোর সবই তাঁতীবাজার শিবমন্দিরের আশপাশে। এসব দোকানেও একই রকম নিরামিষ খাবার পাওয়া যায়, দামও প্রায় কাছাকাছি।
স্বামীবাগের আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) আশ্রম এলাকাতেও কিছু নিরামিষ খাবারের দোকান রয়েছে। আশ্রমের ভেতর গোবিন্দ মহাপ্রসাদ ক্যানটিনে সকাল সাতটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত ভাত, খিচুড়ি আর পরোটার সঙ্গে নানা ধরনের নিরামিষ পরিবেশন করা হয়। তাদের জনপ্রিয় নিরামিষ পদগুলোর মধ্যে আছে বেগুন বা ফুলকপির সাম্বর, সয়াবিন সবজি, সরিষা দিয়ে ঢ্যাঁড়স-পটোল-কাঁঠালের সবজি, বাঁধাকপির কোপতা। আর মিষ্টির মধ্যে আছে গুড়ের সন্দেশ, চিনির সন্দেশ, রসগোল্লা, লালমোহন, রসমালাই, টক-মিষ্টি দই ইত্যাদি। ক্যানটিনের ব্যবস্থাপক পলাশ দাস বলেন, সব মিষ্টিই এখানে গাভির দুধ দিয়ে তৈরি করা হয়। এখানে নিরামিষ পদগুলোর দাম ১৫-৪০ টাকা, আর মিষ্টির দাম কেজিপ্রতি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা।
মাছ-মাংসে অভ্যস্ত জিবের স্বাদ বদলাতে ঘুরে আসা যেতে পারে এ দোকানগুলো থেকে।