ঢাকা, মে ৫, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ১৭:৫৩:৩৬

ভোলা পৌরসভায় পরিকল্পিত উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধণে বদলে যাচ্ছে সার্বিক চিত্র

| ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৩ | Monday, June 6, 2016

ভোলা : ভোলা পৌরসভায় পরিকল্পিত উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনে অবকাঠামোগত পরিবর্তন এসেছে। সৌন্দর্যবর্ধন ও পরিবেশ সুরক্ষা কর্মসূচী, অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প ও অবকাঠামো উন্নয়নসহ মাস্টার প্লান প্রণয়ন প্রকল্প’র আওতায় অর্ধশত কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে পৌর এলাকার রাস্তাঘাট, ফুটপাত, ড্রেন, ব্রিজ, পার্ক, বিনোদন স্পট, মাঠের সৌন্দর্যবর্ধন, ওয়াকওয়ে নির্মাণ, পানির ফোয়ারাসহ বিভিন্ন সৌন্দর্যমন্ডিত স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। আর পৌর এলাকায় এই প্রথম উন্মুক্ত পার্ক ও সৌন্দর্যমন্ডিত স্থান বিনোদনের নতুন মাত্রা যোগ করেছে পৌরবাসীর মধ্যে।
পৌর মেয়র মো. মনিরুজ্জামান মনির জানান, বিগত দিনে পৌরবাসীদের এখানে বিনোদনের কোন ব্যবস্থা ছিলো না। ছুটির দিনগুলোতে পরিবার পরিজন নিয়ে শহরে নিশ্চিন্তে ভ্রমণের নিরাপদ কোন স্থান ছিলো না। তাই এখানে বেশ কয়েকটি পার্ক, বিনোদন কেন্দ্র ও সৌন্দর্যমন্ডিত স্থান নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া নাগরিকদের সার্বিক জীবনমান উন্নয়নে রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, বিকল্প সড়ক, ফুটপাত-ড্রেনসহ নানান উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। পৌর এলাকার প্রত্যেক বাসিন্দার শতভাগ নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে সচেষ্ট রয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ।
৩টি প্রকল্পের আওতায় মোট ৫৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকার উন্নয়ন কাজ হবে এখানে। এসব উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে পৌরসভা সৌন্দর্যবর্ধন ও পরিবেশ সুরক্ষা কর্মসূচী প্রকল্পের আওতায় ১০ কোটি টাকার কাজ হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ সৌন্দর্যবর্ধন ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ। এখানে রয়েছে খেলার মাঠ, বসার বেঞ্চ, দোলনা, বাচ্চাদের বিভিন্ন রাইডসহ বিনোদনের যাবতীয় ব্যবস্থা। প্রতিদিন বিকেল হলেই এখানে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার দর্শনার্থীরা ভিড় করেন প্রশান্তির জন্য।
৩ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে পৌরভবন সংলগ্ন জেলা পরিষদ পুকুর সৌন্দর্যবর্ধন ও ফোয়ারা নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে পুকুরের চারপাশে ওয়াকওয়ে স্থাপন ও মধ্যে ৬টি বকের প্রতিকৃতি রয়েছে। সন্ধ্যা হলেই বকের চারপাশ থেকে ফোয়ারায় নানা রং ছড়িয়ে পানি ঝড়ায়। এটিও স্থানীয়দের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এছাড়া শহরে প্রবেশ পথে যুগীর খোলে চার রাস্তার মোড়ে ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ফোয়ারা নির্মাণ। ২ কোটি ২৫ লাখ টাকায় হেলিপ্যাড সংলগ্ন পার্ক উন্নয়নের প্রথম পর্যায়ের কাজ উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া ২১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয়ে পৌরসভা অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’র আওতায় কাজের বাস্তবায়ন শেষ পর্যায়। ইতোমধ্যে ৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫.৫১ কিমি ১২টি রাস্তা, ১০ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫.৩৮ কিমি ফুটপাতসহ ১৪টি ড্রেন, ৮১ লাখ ৫১ হাজার টাকায় উকিলপাড়া গোরস্থান, ১ কোটি ৬ লাখ টাকায় গ্যারেজ, ১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন ফোয়ারা ও বিনোদন কেন্দ্র, প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে টাউন স্কুল মাঠ সৌন্দর্যবর্ধন ও ওয়াকওয়ে স্থাপন এবং চকবাজার দৃষ্টিনন্দন ব্রীজ স্থাপন অন্যতম। চকবাজারের এ ব্রিজটি রাজধানীর হাতিরঝিলের আদলে নির্মিত হওয়ায় এটিকে হাতিরঝিল বলা হয়। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর সেতুটিতে লাল, নীল, সবুজ বাতির শৈল্পিক আলোকসজ্জায় মুগ্ধ করে আগতদের।
অন্যদিকে পৌরসভা অবকাঠামো উন্নয়নসহ মাস্টার প্লান প্রণয়ন প্রকল্পের আওতায় পরিকল্পিত নগরায়নের জন্য ২২ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে সরকারের উন্নয়ন বাজেটের (জিওবি) অধীনে প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। এখানে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫০ বর্গ কিমি এলাকার মাস্টার প্লান প্রণয়ন ছাড়াও ৬ কোটি টাকা খরচে ১৫ কিমি রাস্তা, ৪ কোটি ৮০ লাখ টাক ব্যয়ে ৪ কিমি ফুটপাত ড্রেন, ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪টি দৃষ্টিনন্দন ব্রীজ, প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে ব্যায়ামাগারসহ অন্যান্য উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হবে। পাশাপাশি পৌরসভার অন্যান্য প্রকল্পের আওতায় শত কোটি টাকারও বেশি উন্নয়ন কাজ চলমান ও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
পৌর মেয়র আরো জানান, ভোলা পৌরসভাকে একটি আধুনিক পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে শেখ হাসিনার সরকারই প্রথম কাজ শুরু করে। তাই বর্তমানে পৌরসভার উন্নয়নে ‘মহাপরিকল্পনা’ প্রণয়ন করে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলছে পৌর পরিষদ। চলমান উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হলে ব্যাপক অবকাঠামোগত পরিবর্তনসহ বদলে যাবে শহরের সার্বিক চিত্র এমনটাই জানালেন মেয়র।
স্থানীয় পত্রিকা দ্বীপবানী’র সম্পাদক মো. আবু তাহের বলেন, প্রায় শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ভোলা পৌরসভায় বিগত কোন সরকারের আমলে এত উন্নয়ন কাজ হয়নি। যতটা হয়েছে বর্তমান সরকারের আমলে। পুরানো ভাঙ্গাচোরা অনগ্রসর পৌরসভা থেকে বর্তমানে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্মিলিত একটি পর্যটন নগরীর দিকে ধাবিত হচ্ছে এটি। এছাড়া পৌরভবনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ময়লা-আবর্জনা দূর হয়ে প্রতিনিয়ত পরিচ্ছন্ন হচ্ছে প্রিয় শহর ভোলা।