দীর্ঘদিনের গবেষণা ও অধ্যাবসায়ের ফল মিলল। ৪৪ বছর বয়সী এক ব্রিটিশ নাগরিক সম্পূর্ণ এইচআইভি মুক্ত হলেন। বর্তমানে তার রক্তে এই রোগের কোনো জীবাণু দেখা যাচ্ছে না। যদি আরও বেশ কিছু দিন এমনই থাকে, তবে এটা বিশ্বের চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে এক বিরাট সাফল্য বলে ধরা হবে এবং এই ব্রিটিশ নাগরিক হবেন ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তি যিনি এইডস থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি পাবেন।
বেশ কয়েক বছর ধরে যুক্তরাজ্যর ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা মিলে ৫০ জন এইডস রোগীর ওপর এই পরীক্ষা চালাচ্ছেন। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ রিসার্চ অফিস এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর মার্ক স্যামুয়েল্স বলেন, “এইডস নিরাময়ের জন্য আমরা সম্ভাব্য সমস্ত রকম পরীক্ষা চালাচ্ছি। এখনই এ বিষয়ে বিশদে কিছু বলছি না। তবে এটুকু বলতে পারি আমরা বেশ খানিকটা এগিয়েছি।”
এইচআইভির চিকিৎসা করা যে খুবই কঠিন তা বলাই বাহুল্য। এই রোগের জীবাণু সরাসরি মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে আক্রমণ করে এবং ডিএনএ’র T-Cell এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। এর ফলে শরীর স্বাভাবিক রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তো হারিয়েই ফেলে তার সঙ্গে ক্রমাগত ভাইরাস তৈরি করতে থাকে। বর্তমানে অ্যান্টি-রেট্রোবাইরাল থেরাপির সাহায্যে এই রোগকে অনেকাংশে ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব হয়েছে। এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে সক্রিয় এইচআইভি সংক্রামিত T-Cell গুলিকে মেরে ফেলা সম্ভব। কিন্তু যে কোষ গুলি সক্রিয় নয় তা শরীর থেকে বের করতে পারে না। তাই ভাইরাস তৈরির কাজ বন্ধ হয় না।
এই গবেষণায় দু’টি পদ্ধতিতে এই রোগ নিরাময়ের রাস্তা খোঁজা হচ্ছে। একটি ভ্যাকসিনের সাহায্যে সংক্রামিত কোষগুলিকে খুঁজে শরীর থেকে বার করে। দ্বিতীয়ত একটি নতুন ওষুধ (Vorinostat)-এর সাহায্যে লুকিয়ে থাকা সংক্রামিত কোষগুলিকে সক্রিয় করে তোলা হচ্ছে, যাতে সেগুলিকে শরীর থেকে বার করা যায়। ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের চিকিৎসক সারা ফিডলার বলেন, ”এই থেরাপির সাহায্যে শরীর থেকে সমস্ত সংক্রামিত কোষ বার করা সম্ভব হচ্ছে।” তিনি আরও জানিয়েছেন, আগামী ৫ বছর ধরে আরও পরীক্ষা চালানো হবে। আশা করা যায়, এই পদ্ধতিতেই এইডস থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি পাওয়া সম্ভব।