নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের দুই নং প্যানেল মেয়র হতে যাচ্ছেন মেয়র ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচতি ১৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনির হোসেন।
আগামীকাল বুধবার বেলা ১১টায় সিটি করপোরেশনের মাসিক সভায় প্যানেল মেয়র নির্বাচিত করার এজেন্ডা থাকলেও মনির হোসেন ছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী না থাকায় বিনে বাধায় তিনি হতে চলেছেন প্যানেল মেয়র-২।
গতকাল সোমবার দুপুরে সিটি করপোরেশনের নগর ভবনে কাউন্সিলারদের অনেকের উপস্থিতিতে প্রথম দিকের প্রতিদ্বন্দ্বি অনেক প্রার্থী নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসার পরেই বদলে যেতে থাকে দৃশ্যপট। শেষতক সকলের ইঙ্গিত আসে মনিরের পক্ষেই।
নজরুল ইসলাম সাত হত্যাকান্ডের ঘটনায় মারা যাওয়ার পর পদটি শূন্য হয়। আগামীকাল বুধবার মাসিক সভায় প্যানেল মেয়র-২ নির্বাচনের এজেন্ডা হওয়ার পর থেকেই আগ্রহী কাউন্সিলররা বেশ নড়েচড়ে বসেন। শুরু হয় লবিং। শুরু দিকে বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর এ পদে আগ্রহ দেখালে মনির হোসেন সিটি মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর ঘনিষ্টজন হওয়ায় অন্যরা পরে সরে আসে।
মনির হোসেনের বিরুদ্ধে প্রার্থী হলে সিটি মেয়র মনক্ষুন্ন হতে পারে এমন ধারণাও পোষণ করেছেন কয়েকজন কাউন্সিলর। তাদের আশঙ্কা মনিরের পক্ষে না গেলে সিটি করপোরেশনের সামনের দুই বছরে অনেক উন্নয়ন কাজের বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত হতে পারে। এ আশঙ্কাটি গত কয়েকদিন ধরেই কাউন্সিলরদের মধ্যে বিরাজ করছিল। যদিও মেয়র এ নির্বাচনের ব্যাপারে প্রকাশ্যে কোন কথা বলেনি। মনির হোসেনকে ভোট দিতে হবে এমন কথাও কাউকে বলেননি মেয়র। তবে মেয়রের নাম বলে কয়েকজন কাউন্সিলর মনিরের পক্ষে অন্যদের কাছে অনুরোধ ও লবিং করেছেন জানা গেছে। এটা নিয়ে বন্দরে সম্প্রতি কয়েকজন কাউন্সিলরদের মধ্যে বাকবিতন্ডাও হয়েছে।
সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও ৯জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলের ভোটে নির্বাচিত হবেন প্যানেল মেয়র-২। আগে এ পদে সিটি করপোরেশনের ২নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম বিজয়ী হয়েছিলেন। সাত হত্যার ঘটনায় তাঁর মৃত্যুতে এ পদটি শূন্য হয়। ৩৬ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ইতোমধ্যে ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল ও ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেন রয়েছেন বাইরে। সাত খুনের মামলায় নূর হোসেন ভারতে গ্রেপ্তার রয়েছেন। তার আসনটি শূন্য করতে ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছেন সিটি করপোরেশন। অন্যদিকে শাহজালাল বাদল রয়েছেন পলাতক।
প্যানেল মেয়র-২ পদে সিটি করপোরেশনের বেশ কয়েকজন কাউন্সিললের নাম শোনা যাচ্ছিল। তাঁরা হলেন- এক নং ওয়ার্ডের আবদুর রহিম, ১৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্না ও ১৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনির হোসেন।
গতকাল সোমবার দুপুরে সিটি করপোরেশনে বেশ কয়েকজন কাউন্সিলরদের উপস্থিতিতে আন অফিসিয়াল একটি সভা হয়। সভায় কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্না, মনির হোসেনসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় মনির হোসেন নিজেই প্যানেল মেয়র-২ হওয়ার ইচ্ছে পোষণ করে। তখন অন্য কাউন্সিলররা আলাপ আলোচনা করে মনির হোসেনকেই সমর্থন দেন।
এ ব্যাপারে কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্না জানান, ‘আমি নিজেদের মধ্যে কোন ধরনের বিভেদ সৃষ্টি করতে চাই না। আমরা সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর নেতৃত্বেই নারায়ণগঞ্জের উন্নয়ন করতে চাই। প্যানেল মেয়র-২ পদে যদি একাধিক প্রার্থী থাকে তাহলে ভোট হবে। আর নির্বাচন প্রক্রিয়াতে গেলে নিজেদের মধ্যে বিভেদ ও দূরত্ব বাড়বে। এ কারণেই দল মত উর্ধ্বে নিজেদের ঐক্য ধরে রাখতেই আমি নিজেই মনির হোসেনকে সমর্থন দিয়েছি। কাউন্সিলর মনির হোসেন জানান, আমি সকলের দোয়া চাচ্ছি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাউন্সিলর মুন্না ও মনির হোসেন দুইজনই সিটি করপোরেশন মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর ঘনিষ্টজন। গত ২৬ জুন অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের উপ নির্বাচনে সেলিম ওসমানের পক্ষে কাজ করেন কামরুল হাসান মুন্না। তিনি এর আগে ২০০৩ সালে অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনেও বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছিলেন মুন্না। সিটি করপোরেশন বিষয়ে তাঁর যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে। নারায়ণগঞ্জে রাজউক বিরোধী আন্দোলন, নিতাইগঞ্জে অবৈধ ট্রাক স্ট্যান্ড উচ্ছেদে মুন্নার ছিল ভূমিকা। অন্যদিকে মনির হোসেনের রাজনীতি ও সমাজ সেবার চেয়েও হোটেল ব্যবসায়ে তার রয়েছে অধিক পরিচিতি ।