ঢাকা, এপ্রিল ২৭, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ০১:০৯:৪৯

নারায়ণগঞ্জে মোট ১৮৬টি মন্ডপের মধ্যে উৎসবে মাতাবে পাঁচটি মন্ডপ

| ১২ আশ্বিন ১৪২১ | Saturday, September 27, 2014

 

আগামী সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মালম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গাপূজা। চলতি বছর নারায়ণগঞ্জে মোট ১৮৬টি মন্ডপের মধ্যে শহর এলাকায় ৩৪টি মন্ডপে এই পূজা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও শহরের ৫টি মন্ডপ আলোচনায় রয়েছে।বড় বাজেটে অনুষ্ঠিত এই মন্ডপগুলোর পূজার প্রতিমা,লাইটিং এবং তোরণসজ্জায় এনেছে ভিন্নতা এবং নতুনত্ব।ফলে শহরের সকল সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে ঐ ৫টি মন্ডপের আয়োজনের প্রতিযোগিতা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা কল্পনা,উৎসাহ,উদ্দীপনা। বড় বাজেটে পূজা উদযাপন করা মন্ডপ সর্ম্পকে জানতে চাইলে দেওভোগ আখড়া রাম সীতা মন্দিরের কর্তা শ্যামলাল মোহন্ত জানান,শহরে যে সব মন্দিরে বড় বাজেটের পূজা উদযাপন হয়ে থাকে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আমলাপাড়া সার্বজনীন পূজা কমিটি,উকিলপাড়া হোসিয়ারী পূজা,সাহাপাড়া পূজা উদাযাপন কমিটি,টানবাজার বঙ্ক বিহারী পূজা কমিটি,নিতাইগঞ্জ বলদেব জিউর আখড়া ও শিব মন্দির,শীতলক্ষ্যা তামাকপট্টি সত্য নারায়ণ জিউর মন্দির। আমলাপাড়া সার্বজণীন পূজা কমিটির সভাপতি প্রবীর কুমার সাহা জানান, গতবছরের তুলনায় এবার প্রতিমা ভিন্নরূপে গড়া হয়েছে।এবার প্রতিমা তৈরী করেছেন শ্রীনগরের সুরেশ পাল। প্রতিমার পোশাক সজ্জা করেছেন ঢাকা শাখারীবাজারের শংকর দাস। প্রতীমা,পোশাক এবং অলংকার সজ্জা নিয়ে এবার বাজেট হয়েছে ৫লাখ টাকা। আমলাপাড়া মন্ডপের মূল তোরণ নির্মান করেছেন নারায়ণগঞ্জের মানিক এবং তাকে সহযোগীতা করেছেন মাগুরা জেলার কারিগররা। তোরণ নির্মাণ ব্যায় ধরা হয়েছে ৭ লাখ টাকা। আলোকসজ্জা করেছেন ঢাকার গ্লোনাইট এন্ড ইফেক্ট এর শরীফ। সব মিলিয়ে এবার পূজার বাজেট ধরা হয়েছে ৩০/৩২ লাখ টাকা। কমিটির যুগ্ন সম্পাদক বিশ্বজিত সাহা জানান,এবারের পূজায় রোড এবং ষ্টেজ লাইটিংয়ে চমক থাকবে। উকিলপাড়া হোসিয়ারী পূজা কমিটির সাধারন সম্পাদক কৃষ্ণ কুমার সাহা জানান,উকিলপাড়া মন্ডপে এবার প্রতীমা নির্মান এবং সাজসজ্জায় মোট বাজেট ধরা হয়েছে ৫লাখ টাকা।এই বছরে মন্ডপের প্রতীমা নির্মান করেছেন শ্রীনগরের সুরেশ পাল।প্রধান সড়কে পূজার প্রধান তোরণ নির্মান করেছে মাগুরা জেলার কারিগর।গতবছর এই মন্ডপের তোরণ ভেঙ্গে পড়ায় এবার বাড়তি সর্তকতামূলক ব্যাবস্থা নেওয়া হয়েছে।তোরণ নির্মান বাবদ এবার খরচ হচ্ছে ৪/৫ লাখ টাকা।এবারের পূজায় সব মিলিয়ে মোট বাজেট ধরা হয়েছে ২৫ লাখ টাকা। শহরের বড় বাজেটের পূজাগুলোর মধ্যে অন্যতম রয়েছে সাহাপাড়া পূজা কমিটি।এই মন্ডপে উৎসব উদযাপনে কোন বাজেট দরা হয়না বলে জানান কমিটির সাধারন সম্পাদক দেবদাস সাহা।তিনি বলেন উৎসবে যা কিছুর প্রয়োজন হয়,তার সবকিছুই করা হয়।কোনকিছুরই ঘাটতি রাখা হয়না।উৎসবের পরে আমরা সবাই মিলে মোট খরচ বহন করে থাকি।এবার সাহাপাড়ার প্রতীমা নির্মান করেছেন মানিকগঞ্জের সুকুমার পাল।প্রতীমার অলংকার সজ্জা করেছেন ঢাকা শাখারী পট্টির রাজু।এবং আলোকসজ্জা করেছেন ঢাকার ডি জে প্রো লাইটিং।আগে থেকে কোন বাজেট করা না হলেও এবারের পূজায় সব মিলিয়ে ২৫/২৬ লাখ ব্যায় হবে বরে জানান দেবদাস সাহা। সবচেয়ে ব্যাতিক্রম ধারনা নিয়ে এবারের পূজায় মূল তোরণ নির্মান করেছে নিতাইগঞ্জ বলদেব জিউর আখড়া ও শিব মন্দির পূজা কমিটি।কমিটির সাধারন সম্পাদক জয় কে রয় চৌধুরী বাপ্পী জানান,এই মন্দিরে প্রতীমা নির্মানে কোন খরচ বহন করতে হয়না।মন্দিরের ভিতরে জায়গায় প্রায় ৪/৫টি মন্ডপের প্রতীমা নির্মান করেন সুধীর পাল।তাই এই মন্দিরের প্রতীমা গড়ার কাজে কোন পারিশ্রমিক নেননা সুধীর পাল।এবার প্রতীমার পোশাক সজ্জায় পৃষ্ঠ পোষকতা করেছে ফ্যাশন হাউস রঙ।বরাবরের মতো এবারও প্রতীমার গায়ে পড়ানো হবে দেশীয় জামদানী অথবা টাঙ্গাইলের শাড়ি।সবচেয়ে ব্যাতিক্রম ধারনা থাকছে এবার মূল তোরণে।বাংলায় একটা কথা আছে ১২ মাসে ১৩ পূজা।এই ১৩ পূজার দেবদেবীকে বাংলার ঐতিহ্য টেপা পুতুলের আদলে রূপ দেওয়া হয়েছে।যেহেতু উৎসবের ভাষা হলো রঙ্গীন।তাই তোরণ কে আরো রঙ্গীন করতে ঐ ১৩টি দেবদেবীর রেপ্লিকা মূল তোরণে সংযুক্ত করা হবে।অনেকটা ফোক মোটিভ কনসেপ্ট দেওয়া হয়েছে,যা এবারের পূজায় একেবারেই নতুন ধারনা।আমাদের মন্দিরের পূজায় মোট বাজেট ধরা হয়েছে ৮/৯ লাখ টাকা। মূলত শহরের এই ৪/৫টি পূজাকে কেন্দ্র করেই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে চলছে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা।এই ৪/৫টি মন্ডপের আয়োজকবৃন্দ সবসময়ই উন্নত এবং আধুনিক ধারনা দেওয়ার প্রতিযোগিতায় মেতে উঠে।একজন আরেকজনের তুলনায় কতটা ভালো করতে পারে তার পরীক্ষক হিসাবে দর্শকবৃন্দই উপনিত হয়।শহরের এই ৪/৫টি পূজা মন্ডপই শারদীয় দূর্গাপূজার উৎসব ছড়িয়ে দেয় সকলের মাঝে।এছাড়া সদর থানা এলাকায় মোট ৩৪টি পূজা মন্ডপেই জাকঝমক ভাবেই দূগোর্ৎসব উদযাপিত হয়ে থাকে। নারায়ণগঞ্জে এবার মোট ১শ ৮৬ মন্ডপে পূজা উদযাপিত হচ্ছে। তার মধ্যে সদর থানা এলাকায় ৩৪টি,ফতুল্লা থানায় ২৫টি,বন্দরে ২১টি,আড়াইহাজারে ৩০টি,রূপগঞ্জে ৪১টি এবং সিদ্বিরগঞ্জে ৭টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।