ঢাকা, মে ৮, ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ১২:২৯:০৫

ধাত্রীবিদ্যা পেশার স্বীকৃতিতে বাংলাদেশ ‘রোল মডেল’

| ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৩ | Monday, May 16, 2016

           

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা একত্র হয়েছেন ডেনমার্কের কোপেনহেগেনের বেলা সেন্টারে। ৩২ জন তরুণ মিডওয়াইফ (ধাত্রী) নেতা, চিকিৎসক, সাংবাদিক, সরকারি-বেসরকারি ও দাতাগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা নিজ নিজ জায়গা থেকে মিডওয়াইফারি (ধাত্রীবিদ্যা) পেশাকে তুলে ধরলেন। তবে আলোচনা শেষে পাকিস্তান থেকে আসা প্রতিনিধিসহ প্রায় সবাই এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে দিলেন রোল মডেলের স্বীকৃতি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার, সঠিক নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার কারণে এ পেশার অগ্রগতির বর্ণনা শুনে বিশ্বের প্রতিনিধিরা বাহবা দিলেন। সেই সঙ্গে চলতে থাকে হাততালি।

তৃতীয় গ্লোবাল মিডওয়াইফারি সিম্পোজিয়ামে বাংলাদেশের সাংসদ এবং ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য) উপদেষ্টা মো. হাবিবে মিল্লাত মিডওয়াইফারি পেশাকে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে দেশটির বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরেন। এরপর মিলনায়তনের বিভিন্ন বক্তা বাংলাদেশের প্রশংসা করে বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানের পরও তার রেশ থেকে যায়। প্রশ্নোত্তর পর্বেও ঘুরেফিরে বাংলাদেশের প্রতিনিধির কাছেই প্রশ্ন করেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা।

হাবিবে মিল্লাত দেশের অগ্রগতি তুলে ধরার পাশাপাশি চ্যালেঞ্জও তুলে ধরেন। তিনি জানান, দেশে প্রায় ২২ হাজার মিডওয়াইফ দরকার। বর্তমানে আছে মাত্র ৫৯৭ জন। তবে গত কয়েক বছরে দেশে মিডওয়াইফ তৈরির নানা উদ্যোগ শুরু হয়েছে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালে জাতিসংঘে তিন হাজার মিডওয়াইফ তৈরি করার কথা বলেছিলেন। ২০১৩ সাল থেকে মিডওয়াইফ তৈরির শিক্ষা কার্যক্রম ও প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। তিন হাজার পদ তৈরি হয়েছে। আলাদা ক্যাডার হিসেবে ৫৯৭ জন নিবন্ধন পেয়ে পেশাচর্চার অপেক্ষায় আছেন। ইউএনএফপিএর সহায়তায় দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশেই মিডওয়াইফারি প্রশিক্ষকদের জন্য অনলাইনে মাস্টার্স ডিগ্রি চালু হয়েছে। বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিলের নামের সঙ্গে মিডওয়াইফারি যুক্ত হয়ে হয়েছে বাংলাদেশ নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কাউন্সিল।

‘ইয়াং মিডওয়াইফস ইন দ্য লিড’ শীর্ষক সিম্পোজিয়ামে আফ্রিকা, আফগানিস্তান, লাইবেরিয়া, ইথিওপিয়া, সুইডেন, কেনিয়াসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা আবারও জানালেন, মাতৃমৃত্যু ও নবজাতকের মৃত্যু কমাতে মিডওয়াইফারি সেবার বিকল্প নেই। মানসম্মত এই সেবা নিশ্চিত করতে মিডওয়াইফদের জন্য অবকাঠামো ও কাজের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। মিডওয়াইফদের সেবা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের সচেতনতা বাড়াতে হবে।

জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইন্টারন্যাশনাল কনফেডারেশন অব মিডওয়াইফস, ড্যানিশ মিডওয়াইফস অ্যাসোসিয়েশন, নিউইয়র্ক-ভিত্তিক এনজিও উইমেন ডেলিভারসহ বিভিন্ন সংগঠন দুই দিনব্যাপী এ সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করে।

বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন এজেন্সি (সিডা) মিডওয়াইফারি পেশার স্বীকৃতিতে বড় দাতাগোষ্ঠীর ভূমিকা পালন করছে। সিডার জ্যেষ্ঠ প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট (শিক্ষা ও স্বাস্থ্য) রেবেকা ওরেনিয়াস আলফ্রাম জানালেন, সুইডেনে মিডওয়াইফারি পেশার শুরু ১৭১১ সালে। সরকারের নানা অঙ্গীকারের কারণে দেশটিতে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মায়ের মৃত্যুর ঘটনা নেই বললেই চলে। অনিরাপদ গর্ভপাতে কোনো মাকে মরতে হচ্ছে না।

আফগানিস্তান মিডওয়াইফারি অ্যাসোসিয়েশনের তরুণ নেতা মাসুমা জাফারি জানালেন, নানান প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও দেশটিতে মিডওয়াইফ নেতারা কাজ করছেন। যেখানে প্রায় ক্ষেত্রেই পুরুষের অনুমতি ছাড়া নারীরা একা ঘর থেকে বের হতে পারেন না, সেখানে মিডওয়াইফরা ঘর থেকে বের হয়েছেন। আর এঁরাই নারীর ক্ষমতায়নের পাশাপাশি এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সক্রিয় ভূমিকা রাখবেন।

ইন্টারন্যাশনাল কনফেডারেশন অব মিডওয়াইফসের জ্যেষ্ঠ মিডওয়াইফারি উপদেষ্টা নেসতার ময়ো এ সংগঠনের তৈরি মিডওয়াইফারি সার্ভিসেস ফ্রেমওয়ার্কে কোন বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, তা তুলে ধরেন। শুধু আইন ও নীতি তৈরি করে ফেলে না রেখে নিজ নিজ দেশে তা বাস্তবায়নের জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

মুঠোফোনের ব্যবহার বাড়িয়ে নারীদের সঙ্গে মিডওয়াইফদের যোগাযোগ বাড়ানো, এ পেশা নিয়ে গবেষণার সংখ্যা বাড়ানোসহ নানা সুপারিশ করেন আলোচকেরা।