ঢাকা, মে ৬, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ০৩:০২:৩৬

ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের কী ধরনের দাঁতের সমস্যা হয়?

| ২৬ বৈশাখ ১৪২৩ | Monday, May 9, 2016

ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে বিভিন্ন ধরনের দাঁতের সমস্যা হয়। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৩৮০তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. সৈয়দ আহসান রতন। বর্তমানে তিনি রতন’স ডেন্টালের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন।

প্রশ্ন : ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখলে দাঁতের ক্ষেত্রে সাধারণ কী কী সমস্যা হতে পারে?

উত্তর : ডায়াবেটিস রোগীদের মুখে সংক্রমণ হতে পারে। সংক্রমণ প্রথমে মুখে শুরু হয়। প্রতি পাঁচজন লোকের মধ্যে দেখা যায় দুজন লোকেরই ডায়াবেটিস আছে। রোগীর সংখ্যা কম নয়। আমরা সবাই বিষয়টি নিয়ে ভুগছি। যদিও এটা রোগ নয়। তবে ডায়াবেটিসের কারণে শরীরের মধ্যে অনেক ধরনের রোগ হয়। মুখ থেকে শুরু করে আমাদের দেহের এমন কোনো অঙ্গ নেই, যেখানে ডায়াবেটিস আক্রান্ত হয় না। কারণ কিডনি, চোখ, লিভার, অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও আক্রান্ত হয়।

দাঁতে যে সমস্যাগুলো হয়, সেটা হলে দেখা যায়, প্রথমে ডেন্টাল ক্যারিজ বা দাঁতের ক্ষয়রোগ তৈরি হয়। এর পর তার পেরিওডেন্টাল সমস্যা হয়। মাড়ি ও দাঁতের মধ্যে যে সংযোগ সেখানে, তার সমস্যা হয়। তার মুখের মধ্যে স্যালাইভা বা লালার নিঃসরণ কমে যায়। এর পর তার হৃদরোগ হয়। মুখ থেকে বুকের অংশের মধ্যে কোনো ভাল্‌ভ নেই। তাই সরাসরি সংক্রমণ ছড়িয়ে যেতে পারে। দাঁতের সংক্রমণ থেকে যে হৃৎপিণ্ডে সমস্যা হতে পারে, এটি অনেকে বোঝে না। অনেক রোগীর মুখ সম্বন্ধে ধারণা থাকে না। কিন্তু দাঁত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রথমে তাঁর দাঁতগুলো নড়ে যায়। দাঁতগুলো তখন পড়তে থাকে। এগুলো হলো প্যারিওডেন্টাল সমস্যা।

প্রশ্ন : অনেক ক্ষেত্রে কিন্তু দেখি, ডায়াবেটিস যাঁর আছে, তিনি হয়তো নিজেও জানেন না ডায়াবেটিক রয়েছে। দাঁত নড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে কী করেন?

উত্তর : হ্যাঁ, এমনটা হয়। দাঁত নড়বড়ে হয়ে যাওয়ার একটি কারণ ডায়াবেটিস। তাই ডায়াবেটিস চিহ্নিত রোগীর চিকিৎসকের কাছে গিয়ে বলতে হবে আমার ডায়াবেটিস আছে। আর রোগীর ডায়াবেটিস আছে কি না, সেটি চিকিৎসককেও জিজ্ঞেস করতে হবে। দায়িত্বটা কিছুটা ডেন্টাল সার্জনদের ওপরও চলে আসে।

একজন সাধারণ রোগীর চেয়ে ডায়াবেটিস রোগী যাঁরা আছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে চিকিৎসা পদ্ধতিটা একটু ভিন্ন।

তাঁদের সংক্রমণ দ্রুত ছড়াতে পারে। তাঁদের সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হয়। আগেই রোগ প্রতিরোধ করার জন্য আমরা অ্যান্টিবায়োটিক কোর্স শুরু করি। যে চিকিৎসক তাঁর চিকিৎসা করবেন, তাঁর সব জিনিস পরিষ্কার আছে কি না, জীবাণুমুক্ত আছে কি না, হ্যান্ডগ্লাভস আছে কি না, সেসব জিনিস খেয়াল করতে হবে।

তাঁকে বলতে হবে, প্রতি তিন মাস, ছয় মাসের মধ্যে ডেন্টাল সার্জনের পরামর্শ নিতে হবে, যেন আবার তাঁর দাঁতগুলো নষ্ট না হয়ে যায়।

প্রশ্ন : নড়বড়ে দাঁতের ক্ষেত্রে আপনারা কী ধরনের পরামর্শ দেন?

উত্তর : স্যালাইভা নিজে থেকেই মুখ পরিষ্কার করে। মুখের মধ্যে যখন স্যালাইভা নিঃসরণ কমে যায়, তখন খাদ্যকণাগুলো দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে ঢুকে থেকে যায়। তখন ডেন্টাল প্লাকের পরিমাণ বেশি বাড়ে। ব্যাকটেরিয়া বিষাক্ততা বেশি শুরু হয়ে যায়। তখন দাঁতের ক্ষয় হয়ে যায়। খাদ্যকণাগুলো লেগে থাকার কারণে মাড়িতে প্রদাহ হয়। তখন স্পর্শ করলে দেখা যায় রক্তপাত হচ্ছে। তখন আস্তে আস্তে হাড়গুলো খেতে থাকে। যখন হাড়গুলো খেতে থাকে, তখন দাঁতটা নড়তে থাকে। আমাদের যদি সামান্য সমস্যা থাকে, আমরা দাঁত ফেলি না। আমাদের সেন্টারে আমরা প্রতি শনিবার ডায়াবেটিস রোগীদের ফ্রি চেকআপ করি, তাঁরা ইচ্ছা করলে আমাদের কাছে চেকআপ করিয়ে যেতে পারেন। আর তাঁদের রোগ প্রতিরোধ করার জন্য কিছু পরামর্শ দিয়ে দিই।

প্রশ্ন : ডায়াবেটিস অনেক বেশি থাকলে কি আপনারা চিকিৎসা শুরু করেন?

উত্তর : ডায়াবেটিসে চিহ্নিত কোনো রোগী যদি আসে, আমরা চেকআপ করে দিই, যে হাড় কতটুকু ক্ষয় হচ্ছে, অন্যান্য দাঁত তাঁর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কি না। আমরা একটি এক্স-রে করে নির্ধারণ করি তাঁর কতটা দাঁত ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে। তাঁকে আমরা ঠিকমতো ব্রাশ করার নিয়ম শিখিয়ে দিই। তাঁর দাঁতের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার জন্য সাধারণ একটি স্কেলিং করে দিই। অবশ্যই রক্তের সুগার কমাতে হবে। সুগারের মাত্রা যদি ভালো রাখতে পারে, তাহলে ভালো। কিন্তু সুগারের মাত্রা ঠিক থাকে না বলে তাঁর স্যালিভার গ্রন্থি থেকে শুরু করে অন্য সব জায়গায় সমস্যা হয়। নিঃসরণ কমে যায়। স্যালিভার গ্রন্থিতে টিউমার দেখা দেয়। আমরা ছয় মাস পরপর ডায়াবেটিস রোগীদের আসতে বলি। এতে তাঁর মুখের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।

প্রশ্ন : টুথ এক্সট্রাকশন বা অন্যান্য চিকিৎসার ক্ষেত্রে কী করবেন?

উত্তর : রক্তে সুগারের পরিমাণ তো কমাতেই হবে। অ্যান্টিবায়োটিক দিই। আর রোগীর যদি খুব ব্যথা হয়, তাহলে দাঁতকে রুট ক্যানেল করে ব্যথা কমিয়ে দিই।

প্রশ্ন : ওই মুহূর্তে কি রুট ক্যানেল শুরু করা সম্ভব?

উত্তর : হ্যাঁ, সম্ভব। রুট ক্যানেলে সার্জারির কোনো কাজ নেই। আধা ঘণ্টা আগে একটি অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স শুরু করলেই কোনো সমস্যা হয় না। তাঁর ব্যথা কমে যায়। আমরা খুব গভীরভাবে জিনিসটাকে ঠিক করে দিই। এতে তাঁর ভেতরে যে মৃতকোষগুলো থাকে, সেগুলো বেরিয়ে যায়। তখন তাঁর ব্যথা কমে যায়। একবার করলেই মুক্তি পেয়ে যায়। এর পর তাঁর সুগারের মাত্রা কমিয়ে এনে দাঁতকে ফেলে দিতে হয়, যদি ফেলার প্রয়োজন হয়।