ঢাকা, এপ্রিল ২৭, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ০১:৩৬:৩৮

চিকিৎসকের ভবিষ্যদ্বাণী ভুল প্রমাণ করে ৭৬ পূর্ণ করলেন স্টিফেন হকিং

| ৪ মাঘ ১৪২৪ | Wednesday, January 17, 2018

 

‘চিকিৎসকরা ভেবেছিলেন, আমি মারা যাচ্ছি, তাই তাঁরা লাইফ সাপোর্ট যন্ত্রটি খুলে দিতে বলেন জেনকে (স্টিফেন হকিংয়ের প্রথম স্ত্রী জেন ওয়াইল্ড)। কিন্তু জেন তাঁদের কথায় পাত্তা দেয়নি। সে যন্ত্রটি খুলতে নিষেধ করে। জোর দিয়ে বলে, আমি কেমবিজ্রে ফিরে যাব। এর পরের নিবিড় পরিচর্যার সপ্তাহগুলো আমার জীবনের অন্ধকার সময়’। এভাবেই ২০১৩ সালের করা এক প্রামাণ্যচিত্রে বলছিলেন জীবন্ত কিংবদন্তি, তাত্ত্বিক পদার্থবিদ, মহাবিশ্বতত্ত্ববিদ ও লেখক স্টিফেন হকিং।

গত ৮ জানুয়ারি চলে গেল এই কিংবদন্তির ৭৬তম জন্মদিন। মজার ব্যাপার হলো, ১৯৬৩  সালে মাত্র ২১ বছর বয়সে যখন তিনি মরণব্যাধি মোটর নিউরন ডিজিজ, যা এমায়োট্রফিক ল্যাটারাল স্ক্লেরোসিস (এএলএস) আক্রান্ত হোন, চিকিৎসকরা বলেছিলেন তিন আর দুই বছর বাঁচবেন। আরো বলেন, হয়তো তিনি তাঁর ২৫তম জন্মদিনটি পাবেন না।

কেননা, এই রোগে আক্রান্ত বেশির ভাগ মানুষই রোগ ধরা পড়ার তিন থেকে চার বছরের মধ্যে মারা যান। তবে চিকিৎসকের ভবিষদ্বাণী আর সব অতীত ইতিহাসকে ভুল প্রমাণ করে স্টিফেন হকিং পা রাখলেন ৭৭ বছরে।

বেঁচে গেলেও হকিংয়ের কথা বলার, চলাফেরার ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে যায় মোটর নিউরন ব্যাধি । তবে এতেও থেমে থাকেননি তিনি। ১৯৮৮ সালে তিনি লেখেন ‘এ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’। সারা বিশ্বে বইটির এক কোটিরও বেশি কপি বিক্রি হয়।

যেহেতু হকিং কথা বলতে ও নড়াচড়া  করতে পারেন না, তাই তিনি কথা বলেন ভয়েস সিনথেসাইজারের মাধ্যমে। তাঁর মুখের পেশির নড়াচড়ার অনুযায়ী কথা বলে যন্ত্র। এছাড়া গলার কম্পাংক ও চোখের পাতার নড়াচড়ার মাধ্যমে তিনি কম্পিউটারে লিখতে পারেন বা ভয়েস জেনারেট করতে পারেন।

প্রতিবন্ধীদের জন্যও এই পদার্থবিদ এক উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। ২০১২ সালের লন্ডন প্যারা অলিম্পিকেও স্টিফেন হকিং কথা বলেন। তাঁর এই প্রতিবন্ধিতা তাঁকে জীবনের নতুন এক লক্ষ্যের সন্ধান দেয় বলেও জানান তিনি । প্রামাণ্যচিত্রে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিনই আমার জীবনের শেষ দিন হতে পারে। তাই আমি প্রতি মিনিটকে কাজে লাগাতে চাই।’

তবে মাত্র দুই বছর সময় দেওয়ার পরও কীভাবে বেঁচে আছেন স্টিফেন হকিংস? মার্কিন এএলএস সেন্টারের চিকিৎসা পরিচালক এবং নিওরোলজির সহকারী অধ্যাপক লিও ম্যাকক্ল্যাস্কি এর ব্যাখ্যা দেন । তিনি বলেন, বলেন, এই মানুষটির ক্ষেত্রে একটা কথা বলা যায় যে, রোগটি অবিশ্বাস্যভাবে ভিন্ন ভিন্ন মানুষে ভিন্ন হয়। গড়ে বেশির ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে রোগ ধরা পড়ার দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে মারা যায় রোগী।

তবে কেউ কেউ অনেক দীর্ঘ জীবনও পায়। জীবনের আশা নির্ভর করে দুটি বিষয়ের ওপর। মোটর নিউরন সচল রাখে শ্বাসযন্ত্রের পেশি। তাই সাধারণত শ্বাসযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়েই রোগীরা মারা যায়। আরেকটি কারণ হলো, পেশির ক্ষয়, যার ফলে দেহে পুষ্টিহীনতা ও পানিশূন্যতা দেখা দেয়। তাই এই দুটি সমস্যা না থাকলে আপনি হয়তো দীর্ঘজীবন পেতেও পারেন।

তবে কারণ যাই হোক অদম্য প্রতিভাধর এই বিজ্ঞানী শুধু ৭৬ না, শত বছর পূর্ণ করবেন এবং বিজ্ঞানের জগৎকে আর সমৃদ্ধ করবেন আশা করাই যায়।

11.7k Shares

Share

Tweet

Shar