ঢাকা, এপ্রিল ৩০, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ০৫:২৭:৪৩

গ্যাস্ট্রিক/এসিডিটি মুলত কি কারণে এবং কেন হয়? এর থেকে মুক্তির উপায় কি?

| ২৯ কার্তিক ১৪২৩ | Sunday, November 13, 2016

আমরা সবাই কমবেশী গ্যাস্ট্রিক এ ভুগি। গ্যাস্ট্রিক হলে বিবিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়। যেমন-গ্যাস্ট্রিক হলে খিদে কম পায়, পেটে গ্যাস হয় এবং বুক জ্বালা করে, পেটের মাঝখানে চিনচিনে ব্যথা হতে পারে। বুক ও পেটে চাপ অনুভূত হয়, হজমে অসুবিধা হয়, বারবার বমি হতে পারে।

গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তির উপায় গুলো হল-

১)প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে দুপুর ও রাতের খাবার খাবেন।
২)একবারে বেশি পরিমাণে না খেয়ে অল্প করে বারবার খান।
৩)বমি হলে শক্ত খাবার কম খাবেন। পানি ও পানিজাতীয় খাবার বেশি খান।
৪)বেশি চিনিজাতীয় পানীয় কম খাবেন।
৫)ঘুমানোর কমপক্ষে ২ ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খেয়ে নেবেন।
৬)চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া পেট খারাপ বা বমির ওষুধ কিনে খাবেন না।
৭)তাজা খাবার খান, স্টোর করা বা ফ্রোজেন ফুড কম খাবেন।
৮)শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমান। নিয়মিত ব্যায়াম করুন।

৯)ধূমপান এড়িয়ে চলুন।

১০)অতিরিক্ত তেল ও মসলা দেওয়া খাবার খাবেন না।
১১)বাইরের খাবার না খেয়ে বাড়ির তৈরি খাবার খান।
১২)মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা অনেক সময় এসব সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। তাই মানসিক চাপ নেবেন না।
১৩)তৈলাক্ত খাবার বাদ দিতে চেষ্টা করুন। খেতে হলে খাবার আগে বা পরে পানি খাবেন না। অন্তত ৩০ মিনিট পরে এক গ্লাস পানি পান করুন।
১৪)মাংস, ডিম, বিরিয়ানি, মোগলাই, চায়নিজ খাবার যা-ই খান না কেন, তা দুপুরের মেন্যুতে অন্তর্ভুক্ত করুন। রাতের খাবারটি যেন হালকা হয়। শাকসবজি, ছোট মাছ এসব দিয়ে রাতের মেন্যু সাজান।
১৫)সাইনাসের সমস্যা না থাকলে ঠাণ্ডা পানি পান করুন। আবার খুব বেশি ঠাণ্ডা যেন না হয়। তবে গরম পানি পান না করাই মঙ্গলজনক।
১৬)ভাত খাওয়ার আগে এক বা দুই গ্লাস পানি পান করুন। তারপর ভাত খান। খাওয়ার পরপরই অনেক বেশি পানি পান করার প্রবণতা বাদ দিন। ভাত খাওয়ার অন্তত ৩০ মিনিট পর পানি পান করুন।
১৭)প্রতিদিন খাবারের মেন্যুতে অন্তত একটি হলেও যেন ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার থাকে, তা নিশ্চিত করুন। সেটা ল্যাক্সিটেভ হিসেবে কাজ করবে। দূর করবে কোষ্ঠকাঠিন্য। এতে গ্যাস তৈরি হবে না। যেমন- শাকসবজি, কলা, ঢেঁড়স ইত্যাদি।
১৮)সরাসরি গ্লুকোজ অর্থাৎ চিনি যথাসম্ভব কম খান। যদি খেতেই হয় চেষ্টা করুন গুড় দিয়ে চিনির অভাবটা পূরণ করতে।
১৯)বাইরের জুস বাদ দিন।
২০)অনেকে রাতে খাওয়ার পর আইসক্রিম খেতে পছন্দ করেন। এটাও বাদ দিন।

২১)দিনে কিংবা রাতে খাওয়ার পরপরই অনেকে শুয়ে পড়তে পছন্দ করেন। এটা না করে কিছুক্ষণ আস্তে আস্তে হাঁটাচলা করতে পারেন অথবা বসে থাকতে পারেন সোজা হয়ে। অন্তত ৩০ মিনিট পর ঘুমাতে যান।
প্রাকৃতিক উপায়ে নিরাময়ের উপায়-
লং :
দুটি লং মুখে নিয়ে চিবোতে থাকুন, যেন রসটা পেটে যায়।
জিরা :
এক চা চামচ জিরা ভেজে নিন। এবার এমনভাবে গুঁড়া করুন যেন পাউডার না হয়ে যায়, একটু ভাঙা ভাঙা থাকে। ওই গুঁড়াটি এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে প্রতিবার খাবারের সময় পান করুন।

গুড় :

গুড় আপনার বুক জ্বালাপোড়া এবং এসিডিটি থেকে মুক্তি দিতে পারে। যখন বুক জ্বালাপোড়া করবে, সঙ্গে সঙ্গে এক টুকরো গুড় মুখে নিয়ে রাখুন যতক্ষণ না সম্পূর্ণ গলে যায়। তবে ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে নয়।

মাঠা :
মাঠা এসিডিটি দূর করতে টনিকের মতো কাজ করে। তবে এর সঙ্গে সামান্য গোলমরিচ গুঁড়া দিতে হবে।
পুদিনা পাতা :
প্রতিদিন পুদিনা পাতার রস বা পাতা চিবিয়ে খেলে এসিডিটি ও বদহজম হবে না।

বোরহানি :
ভারী খাবারের পর এক গ্লাস বোরহানি খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হবে।

তুলসীপাতা :
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হলে ৫-৬টি তুলসীপাতা চিবিয়ে খেলে এসিডিটি কমে যাবে। এ ছাড়া তুলসীপাতা প্রতিদিন বেটে পানিতে মিশিয়ে খেলে এসিডিটি হওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে।
আদা :
খাওয়ার আধাঘণ্টা আগে ছোট এক টুকরো আদা খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থাকবে না।
দুধ :
রাতে এক গ্লাস দুধ ফ্রিজে রেখে দিয়ে পরদিন সকালে খালিপেটে সেই ঠাণ্ডা দুধটুকু খেলে সারা দিন এসিডিটি থেকে মুক্ত থাকা যাবে। তবে কারো ক্ষেত্রে দুধ অতিসংবেদনশীল, তাদের ক্ষেত্রে দুধ খেলে সমস্যা আরো বাড়তে পারে।

লেবু :
একটি মাঝারি আকৃতির লেবু চিপে রস বের করে নিন। এরপর লেবুর রসের সঙ্গে আধা টেবিল চামচ বেকিং সোডা ও এক কাপ পানি মিশিয়ে নিন। বেকিং সোডা ভালো করে মিশে যাওয়া পর্যন্ত নাড়ুন। এবার মিশ্রণটি খেয়ে নিন। নিয়মিত খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় আরাম পাওয়া যায়।
প্রাকৃতিক চা :
বিভিন্ন রকম প্রাকৃতিক চা, যেমন সবুজ চা, পুদিনা চা, তুলসী চা- এগুলো হজমক্ষমতা বাড়ায় এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সমাধান করে।
তেঁতুল পাতা : তেঁতুল পাতা মিহি করে বেটে নিন। এবার তেঁতুল পাতা বাটা এক গ্লাস দুধের সঙ্গে মিশিয়ে প্রতিদিন পান করুন। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

ডাবের পানি :
ডাবের পানি খেলে হজমক্ষমতা বাড়ে এবং সব খাবার সহজেই হজম হয়ে যায়। এ ছাড়া গ্যাসের সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। প্রতিদিন ডাবের পানি খাওয়ার অভ্যাস করুন। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হবে না।
আলুর রস : আলু বেটে কিংবা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে চিপে রস বের করে নিন। এবার ওই রস প্রতিবার খাওয়ার আগে খেয়ে নিন। এভাবে তিনবেলা খাওয়ার আগে আলুর রস খেলে কয়েক দিনের মধ্যেই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থাকবে না।