ঢাকা, এপ্রিল ২৬, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ০৮:১৬:৩০

আদালতে কান্নাজড়িত কণ্ঠে র‌্যাবের ৫ সদস্য:৭ খুনে ‘বসদের’ নির্দেশ ও ‘হুকুম’ পালন করেছি

| ১৪ ভাদ্র ১৪২১ | Friday, August 29, 2014

280814-02.jpg

চাঞ্চল্যকর সাত খুনের ঘটনার পুরো পরিকল্পনাতে ছিল র‌্যাবের উর্ধ্বতন তিনজন কর্মকর্তা। তারা হলেন-আমাদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা তথা বস। মূলত তাদের নির্দেশ পালন করতে গিয়েই আজ আমরা সাত খুনের ঘটনায় ফেঁসে যাচ্ছি।

শুধুমাত্র চাকরী বাঁচানোর জন্যই আমরা ৭ জনকে অপহরণ ও পরে হত্যার কাজে সম্পৃক্ত ছিলাম। সিনিয়র অফিসারদের নির্দেশে অপহরণ থেকে শুরু করে ৭ জনকে অজ্ঞান করে গাড়িতে করে বিভিন্ন স্থানে নেওয়া, ৭ জনকে হত্যার পর কাঁচপুরে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ইঞ্জিন চালিত ট্রলারে করে লাশ লোড করে শীতলক্ষ্যা নদীতে নিয়ে ফেলা দেওয়ার পুরো প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ততা ছিল বাধ্যবাধকতার কারণে।

গতকাল বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট চাঁদনী রূপমের আদালতে ৭ খুনের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত র‌্যাব-১১ এর ৫ সদস্যের রিমান্ড শুনানীর সময়ে তারা আদালতে এসব কথা বলেন। ওই সময়ে র‌্যাবের সবকয়জন কান্নায় ভেঙে পড়েন। তার বার বার বলতে থাকেন, ‘আমরা শুধুমাত্র হুকুম পালন করেছি

৫জনকে গ্রেফতারের পর ১০ দিন করে রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ওসি মামুনুর রশিদ মন্ডল। শুনানী শেষে ৫জনকে ৮দিন করে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয় আদালত।

এই পাঁচজন হলেন র‌্যাব-১১ এর হাবিলদার এমদাদুল হক, আরিফ হোসেন, ল্যান্স নায়েক মো. হিরা মিয়া, বিল্লাল হোসেন ও সিপাহী আবু তৈয়ব।

জেলা পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদউদ্দিন জানান, গত মঙ্গলবার দিনগত গভীর রাতে এ ৫জনকে গ্রেফতার করেছে। এর আগে অনেকে স্বাক্ষীর জবানবন্দী দিলেও হত্যাকান্ডে ভূমিকা অনুযায়ী ওই ৫জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. সাখাওয়াত হোসেন খান জানান, এর আগে র‌্যাব-১১ এর সাবেক তিনজন কর্মকর্তা তারেক সাঈদ মাহমুদ, আরিফ হোসেন ও এম এম রানা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। এছাড়া হত্যাকান্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত আরো কয়েকজন আদালতে স্বাক্ষির জবানবন্দী দেয়। এ ঘটনায় র‌্যাবের অনেক সদস্য সম্পৃক্ত ছিল। এ কারণে ডিবি পুলিশ র‌্যাব-১১ তে কর্মরত ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে। তারা এ হত্যাকান্ডে সম্পৃক্ত। আরো তথ্য উদঘাটনের জন্যই তাদেরকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আদালতে গতকাল বুধবার দুপুরে রিমান্ড শুনানীর সময়ে র‌্যাবের ওই ৫জন কান্নায় ভেঙে পড়েন। তার বার বার আদালতে বলতে থাকেন যে, তারা শুধুমাত্র উর্ধ্বতনদের হুকুম পালন করতে গিয়েই এ কাজটি করেছেন।

জেলা আদালতের পরিদর্শক হাবিবুর রহমান জানান, ৭ খুনের টনায় দায়ের করা দুটি মামলাতেই ৫ জনকে গ্রেফতার করে তদন্ত তদারক সংস্থা ডিবি। এর মধ্যে নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটির মামলায় গ্রেফতারকৃত ৫ জনকে ১০ দিন করে রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হলে ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। এর আগে ৭ খুনের ঘটনায় ১৭ জুন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয় র‌্যাব-১১ এর চাকরীচ্যূত অধিনায়ক ও অবসরে পাঠানো সেনা বাহিনীর লে. কর্ণেল তারেক সাঈদ। এর আগে আগে ৪ জুন র‌্যাব-১১ এর উপ অধিনায়ক ও অবসরে পাঠানো মেজর আরিফ হোসেন ও ৫জুন নৌ বাহিনীর কমান্ডার এমএম রানা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়ে খুনের দায় স্বীকার করেন। আদালতের নির্দেশমত পুলিশ গত ১৬ মে দিনগত রাতে র‌্যাবের চাকরীচ্যূত তারেক সাঈদ ও আরিফ হোসেন, ১৭ মে এম এম রানাকে গ্রেফতার করে। জবানবন্দীতে তিনজনই হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করেন।