ঢাকা, মে ৮, ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ১০:৩৬:৪৩

আগে আমরা ব্রিটিশ হওয়ার চেষ্টা করেছি, এখন ইন্ডিয়ান : অরুণা বিশ্বাস

| ১৬ বৈশাখ ১৪২৩ | Friday, April 29, 2016

দেশের চলচ্চিত্র জগতের প্রিয় মুখ অরুণা বিশ্বাস। দীর্ঘদিন ধরে চলচ্চিত্রে তিনি অনুপস্থিত। বর্তমানে নাটকে অভিনয় ও টিভি উপস্থাপনা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। নাটকে অভিনয়, চলচ্চিত্র ও অন্যান্য প্রসঙ্গ নিয়ে সম্প্রতি এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে আলাপ করেছেন অরুণা বিশ্বাস।প্রশ্ন : ধারাবাহিক নাটকে এখন আপনি বেশি অভিনয় করছেন। দর্শকের কাছ থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?

উত্তর : সত্যি বলতে, আমাদের দেশের নাটক দর্শক এখন কম দেখছেন। তুলনামূলকভাবে ভারতের সিরিয়ালগুলোর প্রতি দর্শকের আকর্ষণ বেশি।

প্রশ্ন : কেন দর্শক ভারতের সিরিয়াল বেশি দেখছেন? আপনার অভিমত কী?

উত্তর : এর পেছনে কারণ আছে। আমাদের দেশের গল্প, পরিচালক ও শিল্পীরা অনেক ভালো। কিন্তু আমি মনে করি, আমাদের উপস্থাপনের জায়গাটা বেশ দুর্বল। চ্যানেলগুলো একটা নাটক সঠিকভাবে দেখায় না। মানে আমি বলতে চাইছি, চ্যানেলের নাটক প্রমোশন করার ক্ষেত্রে উদাসীনতা রয়েছে। একটা নাটকের প্রমো তারা সঠিকভাবে প্রচার করে না। এখন নাকি এজেন্সি নির্ভর সবকিছু চলছে। যে ছেলেটা এজেন্সিতে জব করে, সে কীভাবে একজন শিল্পীর মর্যাদা দেবে? এজেন্সিতে চাকরি করা লোকেরা নাটকের শিল্পী বেশি নির্বাচন করছেন।

এজেন্সির লোকদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। যেমন খুশি তেমনভাবে তাঁরা নাটকের গল্প ও শিল্পী নির্বাচন করছেন। এ জন্যই এখন মিডিয়াতে অস্থিরতা চলছে। এমনকি আমি নিজেও স্টার জলসার নাটক দেখি। তাঁদের অভিনয় ও সংলাপ মনোযোগ দিয়ে শুনি। ওদের অভিনয় অতি নাটকীয়তা মনে হয়। তবে ওদের গল্প কিন্তু অতটা খারাপ নয়। আর আমাদের দেশের দুর্বলতা অনেক। আমরা নাটক প্রচারের মাঝে অনেক বিজ্ঞাপন দেখি। বিজ্ঞাপনের কোনো ব্যালান্স নেই।

প্রশ্ন : আপনি তো দীর্ঘদিন চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। এখন চলচ্চিত্রের বাজার আগের মতো নেই কেন?

উত্তর : এখন তো দুদিন পরপর শুনি অমুক স্টার আসছে, তমুক স্টার আসছে। কিন্তু কোনো ছবিই হিট হচ্ছে না। আমাদের সময় তো সব ছবিই হিট ছিল। আমাকে ব্যক্তিগতভাবে কেউ বলতে পারবে না চলচ্চিত্রে আমি সফল নই। আর আমি বলব, আমাদের চলচ্চিত্রে এখন মেধা কমে গেছে। চলচ্চিত্রের গল্পের বিশাল ঘাটতি রয়েছে। এটা খুব ফানি লাগে এখন সবাই পরিচালক ও প্রযোজক হতে চায়।

আমাদের ঘরে ঘরে দশজন করে পরিচালক নেই। এত প্রতিভাও আমাদের নেই। এখন নকল গল্পের ছবি বেশি। অথচ আমাদের দেশে প্রচুর ভালো ভালো সাহিত্য রয়েছে। সব সাহিত্যও যদি কেউ না পড়ে থাকে, শুধু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্প ভেঙেও কিন্তু চলচ্চিত্র নির্মাণ করা সম্ভব। গল্পগুলো অনেক আধুনিক। ফিউশন করে নির্মাণ করলেও দর্শক দেখবেন। আমরা দিন দিন আমাদের নিজস্বতা হারাচ্ছি।

এই ভুল আমরা বাঙালিরা অনেক করেছি। আগে আমরা ব্রিটিশ হওয়ার চেষ্টা করেছি, এখন ইন্ডিয়ান। আমি কাউকে অশ্রদ্ধা করছি না। কিন্তু আমি আমার দেশের সংস্কৃতি তো অস্বীকার করতে পারব না। আমাদের দেশে যাত্রা ও থিয়েটারও আছে।

প্রশ্ন : চলচ্চিত্রে নতুনরা এখন অনেক কাজ করছেন। তাঁদের সম্পর্কে আপনি কী বলবেন?

উত্তর : এখন তো তরুণদের সংখ্যা বেশি। তাঁরা কাজ করতে চাইছেন। আমি তাঁদের বলতে চাই, পড়াশোনা প্রচুর করতে হবে। নকলের প্রবণতা ছেড়ে দিতে হবে। দায়িত্ব নিয়ে গল্প লিখতে হবে। তামিলদের লাইফস্টাইল তো আমাদের মতো নয়। তাহলে কেন আমরা তাঁদের নকল করব?

প্রশ্ন : আপনি তো উপস্থাপক হিসেবেও বেশ জনপ্রিয়। এ বিষয়ে কিছু বলুন।

উত্তর : এই জগতের প্রতি মমত্ববোধ থেকে উপস্থাপনা করছি। দর্শকরা পছন্দ করছেন। তাই হয়তো উপস্থাপনায় আমাকে বেশি দেখা যাচ্ছে।

প্রশ্ন : অবসরে আপনি কী করেন?

উত্তর : অবসর আমি খুব কম পাই। টিভিতে আমাদের দেশের ক্রিকেট খেলা দেখতে অনেক পছন্দ করি। টিভি দেখার সময় না পেলে রেডিও শুনি।