ঢাকা, এপ্রিল ২০, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ০৩:২২:২৫

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

একীভূত হতে চাওয়া ব্যাংকের সম্পদের দাম যেভাবে নির্ধারণ করা হবে টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি বিএফইউজে’র দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিএনপির মাথাব্যথার কারণ নেই : ওবায়দুল কাদের বিএনপি একটি রাজনৈতিক দৈত্যের দল : পররাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তি বজায় রাখার জন্য যা-যা করার আমরা করবো: বান্দরবানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবারের ঈদ যাত্রাও স্বস্তিদায়ক হচ্ছে: সেতুমন্ত্রী কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট শিশুদের নতুন করে বাঁচার পথ খুলে দেয় : সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ আসন্ন পবিত্র রমজানে সরকারিভাবে বড় ইফতার পার্টি না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর পুলিশকে জনগণের বন্ধু হয়ে নিঃস্বার্থ সেবা দেয়ার নির্দেশ রাষ্ট্রপতির

কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যাতে অপরাধে না জড়ায় সে ব্যাপারে অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে হবে : রাষ্ট্রপতি

| ২৬ অগ্রহায়ন ১৪২৮ | Friday, December 10, 2021

ঢাকা : রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যাতে কিশোর গ্যাং এর মতো অপরাধমূলক কর্মকান্ড থেকে দূরে থাকে সে ব্যাপারে অভিভাবকদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। ‘সতর্ক থাকতে হবে যাতে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা টিকটক, লাইকির লোভনীয় ফাঁদে পা দিয়ে মানব পাচারের শিকারে পরিণত না হয়,’ রাষ্ট্রপতি মানবাধিকার কমিশনের এক আলোচনায় এ কথা বলেন।
‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশন’ আয়োজিত ‘মানবাধিকার দিবস- ২০২১’ উপলক্ষে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ-অডিটোরিয়ামে এক আলোচনায় বঙ্গভবন থেকে পূর্বে ধারণকৃত রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা সম্প্রচার করা হয়।
আবদুল হামিদ বলেন, মানব পাচার ও মাদকের ভয়াবহতা সমাজে নানা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। মাদকের ছোবলে অনেক পরিবার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমাদের তরুণ প্রজন্মকে এ সব থেকে দূরে রাখতে হবে।
তিনি সমাজে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর পাশাপাশি সকলকে এগিয়ে আসার ও আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন ‘মাদক, মানব পাচার ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণে আরও ব্যাপক জনসচেতনতা দরকার। সচেতনতা, দৃঢ় পারিবারিক বন্ধন, সামাজিক প্রতিরোধ ও প্রশাসনের কঠোর নজরদারি এই অপরাধ প্রবণতা ঠেকাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।’
দেশে নারী উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে নারীর পাশাপাশি পুরুষেরও সমান ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি শিক্ষার সাথে মানবিক মূল্যবোধকে গুরুত্ব দিয়ে বলেন, পরিবার, সমাজ ও প্রাতিষ্ঠানিক সকল ক্ষেত্রে মানবিক মূল্যবোধ বিকাশে আমরা যেন বিশেষভাবে সচেতন থাকি।
রাষ্ট্রপতি বলেন, মিয়ানমার, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন ও সিরিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মানবিক সংকট চলছে। এ সকল সংকট বা মানবাধিকার লঙ্ঘন ঠেকাতে বিশ্বের সকল দেশকে একযোগে কাজ করতে হবে।
মানবাধিকার কর্মীদের দায়িত্ব পালনকালে যাতে মানবাধিকার লঙ্ঘিত না হয় সেদিকেও বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করার তাগিদ দেন তিনি।
করোনাভাইরাস প্রসঙ্গ রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, করোনা মহামারি বিশ্বব্যাপী মানবিক বিপর্যয় বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা ধনী ও দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে টিকা বৈষম্য বাড়তে দেখছি। জরুরি ভিত্তিতে এই বৈষম্য দূর করতে হবে।
আবদুল হামিদ বলেন, সবার জন্য ন্যায়সঙ্গত ও সাশ্রয়ী মূল্যে টিকার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করে মানবাধিকারকে সমুন্নত রাখতে হবে। বিশ্বকে করোনার ছোবল থেকে বাঁচাতে হলে সবার জন্য টিকা নিশ্চিতের বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, ‘অন্যদিকে এই মহামারি জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোকেও অতিমাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।’
তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, উন্নত বিশ্ব মানবিকতার সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর পাশে দাঁড়াবে।
‘রোহিঙ্গারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন নিজের দেশে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার প্রায় ১১ লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
রাষ্ট্রপতি রোহিঙ্গাদের তাদের মানবাধিকার সুরক্ষা ও নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের জন্য সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন দেশের মানুষের মানবাধিকারের উন্নয়ন ও সুরক্ষায় একটি প্রধান সংস্থা হিসেবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, এই কমিশন জনগণের অধিকার সুরক্ষায় আরও দৃশ্যমান অবদান রাখবে।
জনসাধারণ যেন তাদের অধিকার সম্পর্কে আরও বেশি সচেতন হতে পারে এবং মানবাধিকার কমিশনের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা পেতে পারে সে লক্ষ্যে কমিশনকে তৃণমূল পর্যায় থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সামগ্রিক কার্যক্রম আরও জোরদার করার ও আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি হামিদ।
মানবাধিকার সুরক্ষায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে অভিহিত করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, দলিত, হিজড়া, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীসহ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ও অন্যান্য ভুক্তভোগীদের মানবাধিকার সুরক্ষায় এ কমিশনকে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।’
তিনি প্রত্যাশা করেন যে, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার ব্যক্তিদের ভরসার স্থল হিসেবে কাজ করবে।
বক্তব্যের শুরুতে রাষ্ট্রপতি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন- স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহিদদের, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক-সমর্থক, বিদেশি বন্ধু, যুদ্ধাহত ও শহিদ পরিবারের সদস্যসহ সর্বস্তরের জনগণকে, যাঁদের অসীম সাহস ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে আজকের এই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাসিমা বেগমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব মো. মইনুল কবীর, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জী  এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বক্তব্য রাখেন।