ঢাকা, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ১৭:০৫:১৭

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

কালিপদ মজুমদারের বাড়িতে হামলা: ঘটনাস্থল পরিদর্শনে হিউম্যান রাইট ডেভলপমেন্ট সেন্টার ও জাতীয় হিন্দু ফোরাম ইসলামী ছাত্রশিবিরের অগ্রযাত্রাকে গঠনমূলক সমালোচনায় গতিশীল করবে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় হাইকোর্টের রায় আগামীকাল সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার কলকাতায় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা ও ড. ইউনূসের কুশপুত্তলিকা দাহের নিন্দা জানাল ঢাকা কাল থেকে সেন্টমার্টিনে যাচ্ছে পর্যটকবাহী জাহাজ : অনুমোদন পেয়েছে ৩ জাহাজ পলিথিন ও ওয়ানটাইম প্লাস্টিক কমাতে নেমেছে পরিবেশ অধিদপ্তরের ১০টি টিম আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ নিশ্চিত করলো বাংলাদেশ জাতীয় ঐক্যের ডাক দিলেন ৫০ বিশিষ্ট নাগরিক কোন ষড়যন্ত্র সফল হতে দেওয়া হবে না : ধর্ম উপদেষ্টা

কুমিল্লার মহেশাঙ্গন: একদা পূর্ববঙ্গের শান্তিনিকেতন

| ২৪ আশ্বিন ১৪২২ | Friday, October 9, 2015

কুমিল্লার মহেশাঙ্গন সমগ্র উপমহাদেশে একটি ব্যতিক্রম ইতিহাস। কুমিল্লার মহামূল্যবান সাংস্কৃতিক সম্পদ এবং ঐতিহ্য। স্বাধীনতা পূর্ব সময়ে এটাই ছিল পূর্ববঙ্গের শান্তিনিকেতন। যার নাম এখন কুমিল্লা শহরেই বিস্মৃতপ্রায়, সারাদেশের মানুষ জানে না বললেই চলে। মোট ৮ একর জমির ওপর এই প্রতিষ্ঠানটি অবস্থিত। বর্তমানে ১০-১১টি প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত একটি পবিত্র ভূমি এই মহেশাঙ্গন যা দু’বাংলা মিলিয়ে একটিই মাত্র। এখানে রয়েছে এখন ঈশ্বর পাঠশালা, রামমালা গ্রন্থাগার, রামমালা ছাত্রাবাস, নিবেদিতা ছাত্রী নিবাস, নিবেদিতা বালিকা বিদ্যালয়, পুঁথি সংগ্রহশালা, নাটমন্দির, আয়ুর্বেদ ভেষজ গবেষণাগার, হোমিওপ্যাথ স্টোর, সংস্কৃত কলেজ ও ঈশ্বর পাঠশালা ব্যায়ামাগার। এছাড়া আছে একটি পুকুর। একটি ট্রাস্টি বোর্ডের অধীনে সরকারি সাহায্য ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। একদা এই মহেশাঙ্গনের নির্মাতার বাসভবন নামেও খ্যাত ছিল। বর্তমানে এটা নির্মাতার নামের সঙ্গে অঙ্গীভূত হয়ে ‘মহেশাঙ্গন’ নাম ধারণ করে তাঁর মহাযজ্ঞের কর্মকৃতিত্বের সাক্ষর বহন করে চলেছে। কৌতূহল জাগা স্বাভাবিক যে কে এই প্রতিষ্ঠানের নির্মাতা? এই কৌতূহল নিবৃত্তির জন্য নাতিদীর্ঘ ইতিহাস তুলে ধরেছেন এই প্রতিষ্ঠানের সর্বশেষ অতন্দ্র প্রহরী পন্ডিত ইন্দ্র কুমার সিংহ ‘কর্মযোগী মহেশচন্দ্র ও কুমিল্লা মহেশাঙ্গন’ নামক ইতিহাস গ্রন্থে। অবশ্য গ্রন্থটিতে ১৯৬৯ সালে প্রকাশিত পন্ডিত ড. রাসমোহন চক্রবর্তী লিখিত ‘মহাপ্রাণ মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্য্য’ (প্রথম খন্ড) গ্রন্থটির সরব প্রতিধ্বনি বর্তমান।  মহেশাঙ্গনের নির্মাতা দানবীর মহাপ্রাণ মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্য্য (১৮৫৮-১৯৪৪)। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর থানার বিটঘর গ্রামের এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম। তাঁর পিতা ঈশ্বরদাস তর্কসিদ্ধান্ত দরিদ্র হলেও প্রতিভাশালী পন্ডিত ছিলেন। নিজ গ্রামে সংস্কৃত ভাষার টোল খুলে ৪৫ জনকে শিক্ষা দিতেন। তার মধ্যে ১৫ জনকে নিজগৃহে রাখতেন। মহেশচন্দ্র পিতা এবং মাতা রামমালা দেবীর চারিত্রিক সদগুণ ও উদারতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছিলেন বিধায় কুমিল্লার দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিনামূল্যে থাকার আবাস ও পড়ালেখার ব্যবস্থা করেছিলেন এই মহেশাঙ্গন এবং তৎসংলগ্ন শাকতলায়। অসচ্ছলতার কারণে নিজে বেশি দূর শিক্ষা লাভ করতে পারেননি ব্যবসায় আত্মনিয়োগ করেছেন, অমানুষিক পরিশ্রম করে ধনসম্পত্তি অর্জন করেছেন কিন্তু সেসব কুক্ষিগত করে রাখেননি। দরিদ্রসেবা, নিজে স্বনির্ভর হওয়া, জনহিতকর কাজে নিয়োজিত থাকা এবং প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত শক্তিশালী জাতি গঠনের লক্ষ্যে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করার মধ্যে তাঁর যে বিশুদ্ধ বাঙালি জাতীয়তাবাদের পরিচয় যাওয়া যায় সেটা সেযুগেই ছিল অত্যন্ত বিরল। এক শাকতলাতেই ২৪ একর জমিতে তিনি মায়ের নামে বিশাল রামমালা ছাত্রাবাস নির্মাণ করান। তিনি এতটাই দানশীল ছিলেন যে, দান সম্পর্কে নিজস্ব নীতিরীতি প্রণয়ন করেছিলেন। গোপনে দান করা ছিল নীতিগত কাজ। আত্মপ্রচারকে তিনি আত্মহত্যার সামিল বলে বিশ্বাস করতেন। ডান হাতে কী দান করছেন তাঁর বাঁ হাতও জানত না। বিপুল অর্থ খরচ করে তিনি রাস্তাঘাট, মন্দির, সেতু, ধর্মশালা, টোল প্রতিষ্ঠা করেছেন বিটঘর, কুমিল্লা, কলকাতা এবং কাশিতে। কত দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রী, কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা, অসুস্থ মানুষ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সংস্থা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন তার হিসাব নেই। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ, অভয় আশ্রম, ত্রিপুরা হিতৈষী পত্রিকার মুদ্রিত সংস্থা সিংহ প্রেস তাঁর দানে সমৃদ্ধ হয়েছে। নিজের সহায়সম্পত্তিকে তিনি সকলের বলে মনে করতেন। তাঁর আত্মজীবনী প্রমাণ করে অতিসূক্ষ্ম কর্তব্য ও দায়িত্ববোধ, সময়জ্ঞান এবং সংবেদনশীলতা কখনো তাঁর দৃষ্টি এড়াত না। সম্পূর্ণ মানুষ তিনি হতে পেরেছিলেন বলেই ছাত্ররা যাতে মানবিক আদর্শে নিজেকে আদর্শায়িত করে জীবন গড়ে তুলতে পারে সে বিষয়ে তিনি সর্বদা সজাগ ছিলেন এবং শিক্ষক ও কর্মচারীদের সেভাবে নির্দেশ দিতেন। খুঁজে খুঁজে তিনি শিক্ষক নিয়োগ করতেন। তাঁর মৃত্যুর মাত্র ৬৮ বছরের মধ্যে বাঙালি জাতির এমন কাউকে কি এখন খুঁজে পাওয়া যাবে যিনি মহেশচন্দ্রের স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন!  নীতি থেকে চুল পরিমাণ বিচ্যুত হওয়া ছিল যার প্রবল অনীহা সেই আদর্শ বাঙালি মহেশচন্দ্রের শেষ ভাবশিষ্য, আদর্শ শিক্ষক ইন্দ্র কুমার সিংহ এখন অশীতিপর বৃদ্ধ এবং শয্যাশায়ী। মহেশচন্দ্রকে তাঁর দেখা হয়নি কিন্তু সেই তেজস্বী পুরুষের জীবন ও কর্মকান্ডের উত্তাপ দেহমনের গভীরে জড়িয়ে গেছে কৈশোরেই যখন তিনি রামমালা ছাত্রাবাসে আশ্রিত ছিলেন। সাধারণ কোনো ছাত্রাবাস ছিল না রামমালা! ইন্দ্র কুমার সিংহ রচিত আলোচ্যমান গ্রন্থের ভূমিকাতেই তিনি তা সুস্পষ্ট করেছেন। রামমালা ছাত্রাবাসের মূল আদর্শ ছিল: সর্ব্বম আত্মবশং সুখম্ সর্ব্বং পরবশং দুঃখম্ অর্থাৎ আত্মনির্ভরতা পরম সুখ ও পরনির্ভরতা পরম দুঃখ। এখানে ছিল ১) কৃষি বিভাগ ২) সেবা বিভাগ ২) খাদ্য বিভাগ ৪) মুদিদোকান ৫) সভা-সমিতি ৬) ক্রীড়া ও আমোদ প্রমোদ ৭) রামমালা পল্লীমঙ্গল সমিতি ৮) ধর্মশিক্ষা। সকাল বিকাল প্রার্থনা পরিচালিত হত ছাত্রাবাসের অধ্যক্ষ পন্ডিতপ্রবর ড.রাসমোহন চক্রবর্তীর তীক্ষè তত্ত্বাবধানে। সুস্থ ও স্বাভাবিক মানবজীবন গড়ে তোলার জন্য জরুরি সব শিক্ষাই ছাত্রাবাসে অন্তর্ভুক্ত ছিল। মহেশচন্দ্র রামমালা ছাত্রাবাসকে তাই নিজের মানসপুত্র বলে বিবেচনা করতেন। শুধু ছাত্রাবাসেই তাঁর কর্মকান্ড থেমে থাকেনি। সর্বমোট ১৪টি প্রতিষ্ঠানের নাম লেখক লিপিবদ্ধ করেছেন যথাক্রমে: ১) ঈশ্বর পাঠশালা টোল ও টোল বোর্ডিং (১৯১২), ২) ঈশ্বর পাঠশালা স্কুল ও রিচ হোস্টেল (১৯১৪), ৩) রামমালা ছাত্রাবাস (১৯১৬), ৪) রামমালা গ্রন্থাগার (১৯১২), ৫) রামমালা জাদুঘর, ৬) রামমালা রোড (রাণীর বাজার হতে শাকতলা পর্যন্ত), ৭) রামমালা পোস্ট অফিস, ৮) নিবেদিতা ছাত্রী নিবাস (১৯১৯), ৯) নিবেদিতা বালিকা বিদ্যালয় (৬ষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত, ১৯১৯), ১০) এম. ভট্টাচার্য্য এন্ড কোং মহেশাঙ্গন, কুমিল্লা হোমিওপ্যাথ ওষুধের দোকান, ১১) বৈদিক ঔষধালয়, ১২) কাশী হরসুন্দরী ধর্মশালা, কাশী, ইউ.পি. ভারত, ১৩) ঈশ্বর পাঠশালা ব্যায়ামাগার, ১৪) মন্দির (১৯১৭) এবং ১৫) নাটমন্দির (১৯২৫)। এই সবগুলো প্রতিষ্ঠানই তখনকার সময় ছিল জাতীয় প্রতিষ্ঠানের মর্যাদাপ্রাপ্ত। ২৪টি কোরেসিনের টিনের চালাঘরে এইসব প্রতিষ্ঠানের কাজ শুরু হয়েছিল। ব্যবসার প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে তিনি এগুলোকে সংস্কার ও দালানে রূপান্তরিত করেন। কত বড় দয়ালু এবং মহৎ হৃদয়ের মানুষ হলে পরে এতগুলো জনহিতকর প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে সুচারুরূপে পরিচালনা করতে পারেন তা ভেবে বিস্মিত হতেই হয়! আরও বিস্ময়কর তথ্য লেখক আমাদের কাছে উপস্থাপন করেন মহেশচন্দ্রের চিন্তা-চেতনা সম্পর্কে যা আজকের বাংলাদেশে চিন্তা করাও কঠিন। গ্রামে নিতান্ত বালক বয়সে দারিদ্রে জর্জরিত মহেশচন্দ্র যজমান বাড়িতে ভোজন ও দক্ষিণা পেতেন। তা মাকে না দিয়ে নিজের কাছে জমা রেখে শহর থেকে খাতাপত্র, পেন্সিল ইত্যাদি ক্রয় করে এনে বিক্রি করে কিছু লাভ করতেন। লাভের অংশ দিয়ে প্রয়োজনীয় পুস্তকাদি কিনতেন। তাতে মহেশচন্দ্রর বিশ্বাস জন্মে যে, তিনি ব্যবসা বুঝবেন এবং ব্যবসা করে ধনী হতে পারবেন। এরপর গ্রাম ছেড়ে শহরে এসে কুমিল্লা জেলা স্কুলে ভর্তি হয়ে দু’দুবার পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে ম্যাট্রিক পরীক্ষার আগেই চিরদিনের জন্য ক্ষান্ত দেন। অর্থের অন্বেষণে মহানগর কলকাতায় যান, একাধিক দোকানে ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন, লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সহ্য করেন, খেয়ে-নাখেয়ে থেকে দারিদ্রের যত দুর্ভোগ তার স্বাদ ও অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। কিন্তু হতাশ না হয়ে জেদী এবং সংকল্পে অটল মহেশচন্দ্র ২৪ বছরের হাড়ভাঙা পরিশ্রম ও একাগ্র সাধনাবলে সফল ব্যবসায়ীতে নিজেকে উন্নীত করতে সক্ষম হন। ব্যবসা শুরু করেছিলেন কলকাতার ৮২ নং কলেজ স্ট্রিটে স্টেশনারি ও বইয়ের দোকান দিয়ে। পাশাপাশি পাইকারি হারে কাগজও বিক্রি করতেন কিন্তু একমাত্র লাভ দেখা গেল বই বিক্রিতে সুতরাং সেটাকেই অবলম্বন করলেন। বাংলা ১২৯৬ (১৮৮৯) সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কালীকচ্ছ নিবাসী হোমিওপ্যাথ চিকিৎসক ডাঃ শরৎচন্দ্র দত্তর পরামর্শে ৮১ নং কলেজ স্ট্রিটে হোমিওপ্যাথিক স্টোর খোলেন। এবার তিনি সঠিক পথে উপনীত হন। তাঁর সততার গুণে অল্প সময়ের মধ্যে দোকানের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। বিজ্ঞ ডাক্তার প্রতাপচন্দ্র মজুমদার, চন্দ্রশেখর কালী প্রমুখ তাঁকে পৃষ্ঠপোষক হিসেবে সহযোগিতা করেন। মহেশচন্দ্র ব্যয়বহুল জার্মানির ফার্মাকোপিয়ার ফর্মূলাসহ বিভিন্ন পুস্তক ইংরেজি, বাংলা, হিন্দি, উর্দু, অহমীয়, উড়িয়া, গুজরাটি প্রভৃতি ভাষায় অনুবাদ করিয়ে সস্তায় ছাপিয়ে সমগ্র ভারতব্যাপী গ্রাহক ও অনুগ্রাহকদের বিলি করতে থাকেন। তখন বাংলা ভাষায় হোমিওপ্যাথ চিকিৎসার ভালো কোনো গ্রন্থ নেই দেখে উপযুক্ত মানুষের সহায়তায় পারিবারিক চিকিৎসা গ্রন্থ নাম দিয়ে হোমিওপ্যাথের প্রচার করেন। এভাবে মহেশচন্দ্র তৎকালীন ভারতে হোমিওপ্যাথ চিকিৎসার ক্ষেত্রে সুপরিচিত হন এবং প্রতিষ্ঠা পেতে থাকেন। এরপর ১২৯৯ (১৮৯২) সালে এলোপ্যাথিক ওষুধের দোকানও খোলেন। তাতেও তাঁর লাভ হতে থাকে। ক্রমে ১৩০২ সালে (১৮৯৫) ১১ নং বনফিল্ড লেনে ক্ষুদ্রাকারে ইকোনোমিক ফার্মেসী খুলে হোমিওপ্যাথিক ওষুধের মূল্য ৪ আনার স্থলে মাত্র ৫ পয়সায় বিক্রি করতে থাকেন। এতে করে দরিদ্র দেশের সাধারণ মানুষের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার বিশেষ সুবিধা হয়। ক্রমে ঢাকা, কুমিল্লা, কাশী শহরে অনুরূপ দোকান খুলতে থাকেন। কাজেই বলা যায় যে, তিনিই হচ্ছেন ভারতে সস্তায় হোমিওপ্যাথ চিকিৎসাসংক্রান্ত ওষুধ বিস্তারের পথিকৃৎ। যদিওবা তাঁর পূর্বে বিদ্যাসাগর, রাজেন্দ্রলাল দত্ত (রাজাবাবু), ডাঃ মহেন্দ্রলাল সরকার প্রমুখ ভারতে হোমিওপ্যাথ চিকিৎসার ব্যাপক প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হয়েছিলেন। তাঁদের অবদানও বিশাল। ওষুধ ব্যবসায় সাফল্যের পর মহেশচন্দ্র  লৌহ সিন্দুক নির্মাণের কারখানা প্রতিষ্ঠাসহ কাঠের করাত কল স্থাপন করেন। কিন্তু সৎ, অভিজ্ঞ ও কর্মঠ কর্মীর অভাবে লৌহ কারখানা ব্যর্থতায় পর্যবশিত হয়। তিনি কুমিল্লায় একদরবিশিষ্ট কাপড়ের দোকানও খুলেছিলেন। এরপর শেষ ব্যবসা হিসেবে একদল সৎ ও অভিজ্ঞ কবিরাজের তত্ত্বাবধানে কুমিল্লায় আয়ুর্বেদীয় ওষুধ তৈরির ভেষজখানা স্থাপন করে সেথায় প্রস্তুত ওষুধসমূহের বিক্রয়ার্থ বৈদিক ঔষাধালয় প্রতিষ্ঠা করেন। যা এখনো মহেশাঙ্গনে বিদ্যমান। তাঁর ব্যবসায়ে বিপুল সাফল্য লাভের পেছনে কাজ করেছে বিভিন্ন ব্যবসায় তরুণকালে অর্জিত মহামূল্য বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং সততা।  এহেন কষ্টসহিষ্ণু ব্যবসায়ী যাঁর হওয়ার কথা শুধুই ব্যবসায়ী তা না হয়ে জনকল্যাণে একদিন একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে বাসস্থানÑÑতাদের জ্ঞানপিপাসা পূরণকল্পে ব্যয়বহুল মহামূল্য গ্রন্থাদির সংগ্রহশালা এবং জাদুঘর প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসবেন তা অকল্পনীয় বলে মনে হয়। শুধু তাই নয়, রামমালা গ্রন্থাগারে তিনটি বিভাগ তিনি স্থাপন করেন, ১) গবেষণা বিভাগ ২) সাধারণ বিভাগ ৩) হস্তলিখিত প্রাচীন পুঁথি বিভাগ। তিনি যে একজন খাঁটি স্বদেশী ছিলেন তার প্রমাণই হল ৮ হাজার পুঁথি সংগ্রহ। এইপুঁথিগুলো আজকে স্বদেশ ছাড়িয়ে বহির্বিশ্বের খ্যাতিমান উচ্চবিদ্যাপীঠগুলোতে গবেষিত হচ্ছে। ছড়িয়ে পড়ছে বাংলার লোকজ তথা প্রকৃত সংস্কৃতির ইতিহাস। পুঁথির এত বড় সংগ্রহ সম্ভবত উপমহাদেশে আর কোথাও নেই। রামমালায় এখনো দেশ-বিদেশের গবেষকরা তথ্য সংগ্রহ করতে আসেন। মহেশচন্দ্রের নীতিজ্ঞান এবং মিতব্যয়ী জীবনাচার এযুগের মানুষের জন্য শিক্ষার ক্ষেত্রে এক অনন্য উদাহরণ। ব্যয়বহুল গাড়ির মালিক হওয়া সত্ত্বেও প্রয়োজন ছাড়া তাতে চড়তেন না। মোটা সস্তা কাপড়ের ধুতি ও ফতুয়া ছিল নিত্যপরিধান। একবার বিষম ঠান্ডা লেগে পায়ে মোজা ও গরম কাপড় পরে জনসম্মুখে আসতে দারুণ কুন্ঠাবোধ করেছিলেন। ব্যক্তিজীবনে এতই সৎ ছিলেন যে, দান করার সময় যাতে তাঁর নাম প্রকাশ না পায় বারংবার অনুরোধ জানাতেন। ছবি তোলা ও প্রকাশ করারও ছিলেন ঘোরবিরোধী। তারপরও একবার ‘চুণ্টা প্রকাশ’ পত্রিকায় তাঁর নাম ও ছবি প্রকাশিত হলে পরে দারুণ ক্ষোভ ও দুঃখে কাতর হয়ে পড়েছিলেন। একবার কিভাবে রেলযোগে তাঁর কোম্পানীর মালামাল চলে এলে পরে তাতে মাশুল ছিল না দেখে কর্মচারীকে দু’টাকার টিকিট কিনে ছিঁড়ে ফেলতে নির্দেশ দেন। রাষ্ট্রীয় কর পরিশোধের দিকে ছিল তাঁর কড়া দৃষ্টি। এমনটি এখন চিন্তাই করা যায় না! বিশুদ্ধ ব্রাহ্মণ হওয়া সত্ত্বেও রামমালা গ্রন্থাগারে তুলনামূলক ধর্মবিষয়ে জ্ঞান লাভ করার জন্য হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ, ইহুদি, খ্রিস্টান, ইসলাম, পার্শি, কনফুশিয়ান, তাও, মিশরীয়, বেবিলনীয়, আসিরীয় প্রভৃতি ধর্মীয় গ্রন্থাদির বিশাল সংগ্রহ গড়ে তুলেছেন। তাছাড়া প্রাচীন যত দুর্লভ গ্রন্থাদি তিনি যথাসম্ভব সংগ্রহ করার চেষ্টা করেছেন। কুমিল্লার ব্রাহ্মধর্মাবলম্বীদের পত্রিকা ‘ত্রিপুরা হিতৈষী’ একবার বন্ধ হয়ে গেলে তাঁর তাৎক্ষণিক আর্থিক সহযোগিতায় পুনরায় চালু হয়েছিল। সর্বদা আড়ালে থাকাই ছিল যাঁর স্বভাব_নিজের জীবনবৃত্তান্ত লেখারও পক্ষপাতি ছিলেন না। কিন্তু একবার তাঁর পরিচয়ের মিথ্যা অপ্রপচার জানতে পেরে জীবনবৃত্তান্ত লেখায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তিনি সর্বমোট চারটি গ্রন্থ লিখে রেখে গেছেন, ১) ব্যবসায়ী ২) দানবিধি ৩) ঋণবিধি এবং ৪) আত্মকথা। তাঁর প্রতিষ্ঠিত ঈশ্বর পাঠশালা ভারতভাগের পূর্বে দীর্ঘ সোনালি যুগের ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল প্রথম প্রধান শিক্ষক পন্ডিত জানকীনাথ সরকারের কল্যাণে। পাকিস্তান আমলেও এই প্রতিষ্ঠানের সুনাম ছিল সর্বত্র। স্বাধীনতার পর পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে দ্রুত এর ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে থাকে। এই বিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্র দেশ-বিদেশে সুপ্রতিষ্ঠা লাভ করেন। যেমন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড.অম্লান দত্ত, কবি অমিয় চক্রবর্তী, চিত্রশিল্পী অজিত চক্রবর্তী, চিত্রশিল্পী বিমল কর, ব্যাকরণবিদ অধ্যাপক ড.হরলাল রায়, শিক্ষাবিদ অজিতকুমার গুহ, ত্রিপুরার শিক্ষামন্ত্রী কবি অনিল সরকার, নজরুলসঙ্গীতশিল্পী ও গবেষক সুধীন দাশ প্রমুখ।  কর্মযোগী মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্য্য এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত মহেশাঙ্গনের ইতিহাস দু’চার কথায় লিখে শেষ করা সম্ভব নয়। কুমিল্লা মহেশাঙ্গনের ইতিহাস সমগ্র বাংলাদেশের ইতিহাসের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। ১৯০৬ সাল থেকে বর্তমান কাল এই  শতবর্ষ ধরে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে যে প্রচন্ড তরঙ্গাভিঘাত প্রবাহিত হয়েছে বাংলাদেশ তথা সমগ্র ভারতবর্ষের সেইসব পরিবর্তনের ইতিহাস মহেশ প্রাঙ্গণের সঙ্গে জড়িত। স্বদেশী আন্দোলনের সঙ্গেও মহেশাঙ্গন জড়িত ছিল গভীরভাবে। রামমালা ছাত্রাবাসের অধ্যক্ষ রাসমোহন চক্রবর্তী মনেপ্রাণে স্বদেশী ছিলেন ফলে আন্দোলনে জড়িত এমন সন্দেহে ৬ মাস রাজবন্দি হিসেবে ঢাকা ও কুমিল্লায় জেল খেটেছেন। ভারতীয় উপমহাদেশে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ক্ষেত্রে যাঁরা আলোড়ন তুলেছেন এবং পরিবর্তনের ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন তাঁদের অধিকাংশই মহেশাঙ্গনে পদার্পণ করেছেন, সভা করেছেন তাঁরা হলেন, এ. রসুল, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, নৃপেন বসু, বিপিন পাল, মহাত্মা গান্ধী, চিত্তরঞ্জন দাশ, যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সিসি রায়, সুভাষচন্দ্র বসু, অরবিন্দ ঘোষ, কস্তুরীবাই গান্ধী, মৌলভী লিয়াকত হোসেন, রাজা গোপাল আচারিয়া, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, ড.দীনেশচন্দ্র সেন, সরলাদেবী চৌধুরানী, নরেন্দ্রনাথ দেব, ড.নলিনী ভট্টশালী, বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্র বসু, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, কাজী নজরুল ইসলাম, ক্ষিতিমোহন সেন, কালীমোহন ঘোষ, মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দী, আশ্রাফ উদ্দিন চৌধুরী, ত্রিপুরার মহারাজা মাণিক্য বাহাদুর, সরোজিনী নাইডু, হেমপ্রভা মজুমদার, মহেন্দ্রনাথ দাস, ভীম ভবানী, রাম মূর্তি, এ.ভি. থাক্কার, প্রাণগোপাল গোস্বামী, রামদাস বাবাজী, ভোলানাথ গিরি, আলোক বাবা, মা আনন্দময়ী, শ্রীমং পুরুষোত্তমানন্দ অবধূত, শশিভূষণ বিদ্যালঙ্কার, শ্রীমৎ সমাধিপ্রসাদ আরণ্য, শ্রীমৎ মহানামব্রত ব্রহ্মচারী, প্যারীমোহন ভট্টাচার্য্য, ডাবলিউ. এম. ক্লার্ক, বিধূশেখর শাস্ত্রী, ড.নীহাররঞ্জন রায়, ড.ধীরেন্দ্রনাথ সেন, ড.সুধীর সেন, স্বামী প্রাণবানন্দ, সীমান্ত গান্ধী আবদুল গাফফার খান, আইসিএস আলী ব্রাদার্স, মেজর এ.সি. চ্যাটার্জী, আচার্য এ.বি.কৃপালনি, সুচেতা কৃপালনি, মেঘনাদ সাহা, আনন্দশঙ্কর রায়, হুমায়ুন কবির প্রমুখ। এই মহেশাঙ্গনে স্বদেশী যুগের সম্মেলন, নিখিল বঙ্গ আইনজীবী সম্মেলন, অল বেঙ্গল পেট্রোল কনফারেন্স, অল বেঙ্গল  পোস্টার কনফারেন্স, অল বেঙ্গল টিচার্স কনফারেন্স, ওলেমা কনফারেন্সসহ সর্ববিধ নিখিল বঙ্গ সম্মেলনের আদর্শ স্থান হিসেবে পরিচিত ছিল। তাছাড়া সেইসময় ভাগবৎ গীতাপাঠ, মিলাদ মাহফিল, ইসলামিক ওয়াজ মাহফিল, মুকুন্দ দাশের যাত্রাগান, রামকমল ভট্টাচার্য্যরে কীর্তন, বৈষ্ণব সম্মেলন কতকিছু যে এখানে অনুষ্ঠিত হয়েছে তার ইতিহাস কে লিখবে? সেইসময় নামকরা শিক্ষকরা ঈশ্বর পাঠশালায় শিক্ষকতা করেছেন। মহেশাঙ্গনের সঙ্গে একাত্মতা স্থাপন করেছিলেন বৃহত্তর কুমিল্লার বিশিষ্ট প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ, তাঁরা হলেন, জাতীয় তথা কংগ্রেস নেতা অখিলচন্দ্র দত্ত, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, এ. রসুল, মথুরামোহন দেব, কৈলাশচন্দ্র দত্ত, রায়বাহাদুর ভূধর দাশগুপ্ত, কামিনীকুমার দত্ত, রায়বাহাদুর অনঙ্গমোহন নাহা, বিশ্বেশ্বর চট্টোপাধ্যায়, প্রতুল দাশ ভৌমিক, গোবিন্দ সাহা, রাখাল রায়, অতীন্দ্রমোহন রায়, যতীন ভদ্র, অক্ষয় পাল, অতীন্দ্রমোহন ভদ্র, অধ্যক্ষ রেজাউর রহমান (কুমিল্লার প্রথম ল কলেজ), মজিবুর রহমান, ডাঃ সুলতান আহম্মদ, আশ্রাফ উদ্দিন চৌধুরী, ভুবন ধর, হাবিবুর রহমান, সুরেশ সিংহ রায়, প্রকাশ সিংহ রায় (ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ভাতৃদ্বয়), বসন্ত মজুমদার, গুরুদয়াল সিংহ, ঊর্মিলা সিংহ প্রমুখ। এছাড়া অধ্যাপকবৃন্দ, ব্যবসায়ীবৃন্দ, কুমিল্লা অভয় আশ্রমের নেতৃবৃন্দও মহেশচন্দ্রকে সর্বদা সমীহ করতেন এবং উৎসাহ দিতেন। বলা বাহুল্য, মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রতিষ্ঠানটি পাকসেনাদের নির্ঘাৎ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে আইনজীবী রেজাউর রহমান, ডাঃ সুলতান আহম্মদ, আইনজীবী মজিবুর রহমান প্রমুখের বদৌলতে। দানবীর মহেশচন্দ্র সম্পর্কে এইসব দুর্লভ তথ্য ইন্দ্র কুমার সিংহ প্রকাশ করে নতুন গবেষণার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। মহেশচন্দ্রের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত না থাকলেও গ্রন্থের শেষাঙ্গে সংযুক্ত আছে আরও তিনটি দুর্লভ প্রবন্ধ যথাক্রমে ‘কবি ও গীতিকার অজয়কুমার ভট্টাচার্য্য’, ‘বিরাগো সেট্ঠো ধম্মানং’ এবং ‘অদ্বৈতবাদ ও স্বামী বিবেকানন্দ।’ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এবং পন্ডিত ইন্দ্র কুমার সিংহ শেষোক্ত দুটি প্রবন্ধে তাঁর ধর্ম, মানবতা ও শান্তি সম্পর্কে যে গভীর জ্ঞানলব্ধ অভিমত ব্যক্ত করেছেন তা নিয়ে কেউ এখন আলোচনা করেন না বলেই জরুরি এবং এটা অনুভব করেছেন বিধায় জীবনসায়াহ্নে এসে শাশ্বত সত্যকে বর্তমান প্রজন্মকে স্মরণ করিয়ে দিতে চেয়েছেন। অবশিষ্ট প্রবন্ধটি অত্যন্ত মূল্যবান এই জন্য যে, বর্তমান প্রজন্মের অধিকাংশই বিস্তারিতভাবে জানে না কে শচীনদেব বর্মণ বা অজয় ভট্টাচার্য্য? ৪০-৫০-৬০ এর দশকে সিনেমার গান ও কাহিনী লিখে প্রভূত খ্যাতি অর্জন করেছিলেন কবি ও সাহিত্যিক অজয় ভট্টাচার্য্য। তাঁর অনুজ কবি ও প্রাবন্ধিক সঞ্জয় ভট্টাচার্য্য ১৯৩২ সালে কুমিল্লা থেকে সাড়াজাগানো সাহিত্য কাগজ ‘পূর্ব্বাশা’র প্রকাশক ও সম্পাদক ছিলেন। অজয় ভট্টাচার্য্যরে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন ত্রিপুরা রাজবংশের সন্তান সঙ্গীতজ্ঞ শচীনদেব বর্মণ, অজয়ের লিখিত অনেক গানের সুর করেছেন আবার গেয়েছেনও। অজয় ভট্টাচার্য্য ও সঞ্জয় ভট্টাচার্য্য উভয়েই ঈশ্বর পাঠশালার ছাত্র ছিলেন। তাঁরা যে এখনো কুমিল্লার গৌরব সেই ইতিহাস পুনরুদ্ধারে সংস্কৃতি গবেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন গ্রন্থকার।  তবে প্রায় দু’শ পৃষ্ঠার গ্রন্থটি বার্ধক্যজনিত কারণে লেখকের মনোযোগছিন্নতাবশত তথ্যের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে বেশ কয়েক জায়গায়। মুদ্রণ প্রমাদ বিস্তর হওয়াতে প্রতি পৃষ্ঠায় হোঁচট খেতে হয়। অথচ এ রকম মূল্যবান একটি গ্রন্থ যার সুসম্পাদনা ও প্রুফ না দেখার অবেহলা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। সুন্দর প্রচ্ছদ এঁকেছেন ঈশ্বর পাঠশালার প্রাক্তন ছাত্র স্বনামধন্য চিত্রশিল্পী অধ্যাপক সমরজিৎ রায়চৌধুরী। প্রকাশকাল: আগস্ট ২০১১।  জাপান প্রবাসী লেখকঃ প্রবীর বিকাশ সরকার,গবেষক ও মাসিক কিশোরচিত্র সম্পাদক   আলোকচিত্র: ১) ইন্দ্র কুমার সিংহ ২) শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক ঞযরনধঁঃ উ-ঐঁনবৎঃ পুঁথি ক্যামেরায় তুলে নিচ্ছেন ৩) মহেশাঙ্গনের ফটক ৪) রামমালা গ্রন্থাগার ৫) ঈশ্বর পাঠশালা ৬) মহেশাঙ্গনের নাটমন্দির ৭) গ্রন্থ ৮) দানবীর মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্য