ঢাকা, এপ্রিল ২৮, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ০৬:৫৩:৩৪

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

পূর্ব লেবাননে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল জিম্মি চুক্তিতে হামাসকে রাজি করাতে মিসর ও কাতারের দ্বারস্থ বাইডেন দক্ষিণ চীন সাগরে সামরিক মহড়া চীনের গাজা যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে রমজানে মুসলমানদের আল আকসায় নামাজ পড়ার অনুমতি দিতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ গাজায় তুমুল যুদ্ধ ॥ চলছে যুদ্ধবিরতির বৈঠক জর্ডানে মার্কিন সৈন্য হত্যা ॥ দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনার অঙ্গীকার যুক্তরাষ্ট্রের গাজা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে জাতিসংঘ দূতদের সাক্ষাত জি৭ নেতাদের ভিডিও শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী না হলে বাইডেন ও অনিশ্চিত

‘আমি মুসলিম, সন্ত্রাসবাদী নই, তবে কেন এই নজরদারি?

| ২৪ মাঘ ১৪২২ | Saturday, February 6, 2016

 

 

‘আমি মুসলিম, সন্ত্রাসবাদী নই, তবে কেন এই নজরদারি?’ নয়াদিল্লী, ০৬ ফেব্রুয়ারি- হিন্দু না ওরা মুসলিম,ওই জিজ্ঞাসে কোন জন?

অসংখ্য জন! সন্তান মোর মা’র বলে কাণ্ডারীও আর কাউকে সতর্ক করে না!

ভারতের প্রেক্ষাপটে ভাবতে গেলে, গুজরাত দাঙ্গার পূর্ববর্তী ভারত ও দাঙ্গা পরবর্তী ভারত। অতি সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে দাদরি-পূর্ববর্তী বা পরবর্তী ভারত! আর আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে ৯/১১ পূর্ববর্তী বিশ্ব এবং ৯/১১ পরবর্তী বিশ্ব!
১৪ বছরেরও বেশি কেটে গিয়েছে। অথচ, এখনও ৯/১১-র জাল কেটে বেরোতে পারল না সংখ্যালঘু সমাজ। ৯/১১-র সন্ত্রাসবাদী হামলার আতঙ্ক তো ছিলই, তার সঙ্গেই পাল্টে গেল মুসলিম মননও। দুনিয়া জুড়ে অবিশ্বাসের দম বন্ধ বাতাবরণের মধ্যে নির্বিরোধ, সমাজমনস্ক, বিবেকবান মুসলিম মনন আর্তনাদ করে বলার চেষ্টা করল, আমি এক জন মুসলিম, সন্ত্রাসবাদী নই! তা হলে আমিও কেন নজরদারির বাইরে নই?

এই প্রশ্নটিই আরও এক বার তুললেন মহম্মদ এলশিনবি (Mohammad Elshinawy)। ‘নিউ ইয়র্ক শহরের বিভিন্ন মসজিদে ইসলামের উপর বলতে শুরু করার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই অদ্ভুত কিছু ঘটনা ঘটতে লাগল। আমার সহযোগী এবং অনুগামীরা জানালেন, নিউ ইয়র্ক শহরের আইনরক্ষকেরা আমার এবং আমার বক্তৃতা সম্পর্কে তাঁদের নানা কথা জিগ্যেস করছেন। এর কয়েক দিনের মধ্যেই দেখলাম, আমার শ্রোতাদের মধ্যে কয়েকটি সন্দেহজনক চেহারা দেখা যাচ্ছে। এদের মধ্যে এক জনকে প্রায়ই দেখতাম, কিন্তু আমার কথার মধ্যেই তিনি প্রায়ই ঘুমিয়ে পড়তেন।’

‘ওয়াশিংটন পোস্ট’-এ মহম্মদ এলশিনবি লিখেছেন, ২০০৩-এ তিনি ব্রুকলিন কলেজে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়তেন। তিনি বড় হয়েছেন নিউ ইয়র্ক শহরে। শহরটাকে ভালওবাসেন আরও পাঁচ জন আমেরিকাবাসীর মতো। কিন্তু বিশেষ করে ৯/১১-র পরে তিনি বুঝলেন, মুসলিমদের সঙ্গে কী ভাবে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। তাঁদের প্রতি ঘৃণা ছ়ড়িয়ে পড়ছে বহু গুণ! এলশিনবি বলছেন, এই ঘৃণা ও বৈষম্য সত্ত্বেও আমি মানুষকে তাদের বিশ্বাসে অটুট থাকার কথা প্রচার করেছি। আমি কোনও অন্যায় করিনি। বরং হিংসা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধেই বলে এসেছি। অথচ, গত এক দশক ধরে অনুভব করেছি, আমি লাগাতার নজরদারির মধ্যে রয়েছি।’ তাঁর ধারণা, কেউ বা কারা তাঁর পিছনে ছায়ার মতো লেগে রয়েছে। যে অপরাধের কোনও অস্তিত্বই নেই সেই অপরাধেরই সন্ধানে নিমগ্ন আইনরক্ষকেরা!

কিন্তু, ২০১৩-য় এলশিনবি-র আশঙ্কাই সত্য বলে প্রমাণিত হয়। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের এক অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদনে সামনে আসে, ৯/১১-র পরে মুসলিমদের উপর নিউ ইয়র্ক পুলিশের আগ্রাসী নজরদারির শিকার তিনিও। ওই প্রতিবেদন অনুসারে, পুলিশ অফিসারেরা নিউ ইয়র্কের সব মসজিদকে গোপনে জঙ্গি সংগঠনের তকমা দিয়ে দেন। ইমামদের উপরে গোয়েন্দাগিরি চলেছে, ধর্মীয় কথকতাও রেকর্ড করা হয়েছে। অথচ, কোনও কিছুই প্রমাণ করতে পারেনি পুলিশ।

ভয় পেতেন এলশিনবি! তীব্র ভয়। যা আশঙ্কা ছিল তাঁর, তার থেকেও বেশি নজরদারি চলত তাঁর উপরে। তিনি যেখানেই যেতেন, সেখানেই তাঁকে অনুসরণ করা হত। তিনি ভয় পেয়েছিলেন তাঁর স্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়েও। তিনি লিখছেন, ‘অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের ওই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পরে মনে হত, আমি দেওয়ালবিহীন এক বাড়িতে বাস করছি।’ এফবিআই তাঁকে নিরপরাধ মনে করলেও পুলিশ তারও পরে অনেক বছর তাঁর উপরে নজরদারি চালিয়ে গিয়েছে।

অবশ্য দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পরে কিছু দিন আগে এলশিনবি ও আরও পাঁচ জনের সঙ্গে এক সমঝোতায় আসে নিউ ইয়র্ক পুলিশ। পুলিশি ‘তদন্ত’-এ বেশ কয়েকটি রক্ষাকবচ রাখার কথা বলা হয়। স্রেফ ধর্মের উপর ভিত্তি করে নজরদারির উপরেও রক্ষাকবচ আনা হচ্ছে বলে তিনি লিখছেন। যদিও গোটা বিষয়টি আদালতের অনুমতি সাপেক্ষ।

এর পরেও এলশিনবি জানাচ্ছেন, তাঁর দেশ আমেরিকা সাম্য, বাকস্বাধীনতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষা করে।

তাঁর দেশকে ভালবাসেন এই মানুষটি, আরও অসংখ্য মুসলিমের মতোই। তা হোক না ৯/১১ অথবা দাদরি-পরবর্তী দেশ!