ঢাকা, মে ২, ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ০৪:১২:২০

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

পূর্ব লেবাননে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল জিম্মি চুক্তিতে হামাসকে রাজি করাতে মিসর ও কাতারের দ্বারস্থ বাইডেন দক্ষিণ চীন সাগরে সামরিক মহড়া চীনের গাজা যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে রমজানে মুসলমানদের আল আকসায় নামাজ পড়ার অনুমতি দিতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ গাজায় তুমুল যুদ্ধ ॥ চলছে যুদ্ধবিরতির বৈঠক জর্ডানে মার্কিন সৈন্য হত্যা ॥ দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনার অঙ্গীকার যুক্তরাষ্ট্রের গাজা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে জাতিসংঘ দূতদের সাক্ষাত জি৭ নেতাদের ভিডিও শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী না হলে বাইডেন ও অনিশ্চিত

সীমান্তচুক্তি নিয়ে শঙ্কা কংগ্রেসের বিরোধিতা

| ২২ বৈশাখ ১৪২২ | Tuesday, May 5, 2015

বহুল আলোচিত ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় চুক্তি বা ল্যান্ড বাউন্ডারি এগ্রিমেন্ট ২০১৫ আজ মঙ্গলবার রাজ্যসভায় তোলার কথা। তবে এ নিয়ে বেশ জটিলতা দেখা দিয়েছে। প্রথমত, ২০১১ সালে ভারতে কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় বিলটি তৈরি করা হয়। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি, এখন সেই কংগ্রেসই বিজেপির তোলা সংশোধিত বিলের বিরোধিতায় নামছে। আর দ্বিতীয় জটিলতা হলো চুক্তির বিষয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আসাম রাজ্য সরকারের তথ্যের গরমিল নিয়ে। তবে বিলটি পাস হলে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের একটি সমস্যার সমাধান হবে।

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, সীমান্ত চুক্তি সম্পাদিত হলে আসাম কোনো জমি পাবে না, বরং বাংলাদেশকে ওই রাজ্য থেকে ২৬৮ একর জমি দিতে হবে। কিন্তু আসাম সরকার দাবি করছে, এ চুক্তি সম্পাদিত হলে তারা ৪৪৫.৬০ একর জমি পাবে। ফলে রাজ্য সরকার এ চুক্তিতে আসামকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানাচ্ছে। আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ তাঁর রাজ্যকে বাদ দিয়ে বিল উত্থাপন না করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠিও লিখেছেন। তবে দিল্লি রাজ্যটিকে বাদ রেখেই চুক্তি করতে চাচ্ছে।

এদিকে স্থলসীমান্ত চুক্তির খণ্ডিত বাস্তবায়নের কোনো প্রস্তাব ভারত দিলে বাংলাদেশ তা বিবেচনা করে দেখতে পারে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। গতকাল সোমবার বিকেলে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।

রাজ্যসভায় বিলটি পাস করতে হলে বিজেপির কমপক্ষে ১২৩ জন সদস্যের সমর্থন লাগবে। কিন্তু বিজেপি তা জোগাড় করতে পারবে কি না সেটি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কেননা এ বিলের ক্ষেত্রে কংগ্রেসের ৬৮ জন সদস্যই বিরোধিতা করতে চলেছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ২৪৫ আসনের রাজ্যসভায় বিজেপির সদস্য সংখ্যা ৪৭। যদি তৃণমূল কংগ্রেসের ১২ সদস্য বিলের পক্ষে ভোট দেন, সে ক্ষেত্রেও তা কংগ্রেসের সমান হবে না।

তবে বামফ্রন্ট (১০ আসন) কিংবা অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এআইএডিএমকে (১১ আসন), বহুজন সমাজবাদী পার্টি বিএসপি (১০ আসন), সমাজবাদী পার্টি এসপি (১৫ আসন), জনতা দল জেডিইউ (১২ আসন) এবং বিজু জনতা দলের (সাত আসন) অবস্থানও কিন্তু এ চুক্তি পাসের ক্ষেত্রে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

কেন এ বিলের বিরোধিতায় নামছে কংগ্রেস- এর উত্তরে কংগ্রেস আমলের কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী এবং প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী এমপি দিল্লি থেকে কালের কণ্ঠকে টেলিফোনে বলেন, ‘আসামকে বাদ দিয়ে এ চুক্তির দিকে এগোচ্ছে বিজেপি। ল্যান্ড বাউন্ডারি বিল আমরাই তৈরি করেছিলাম। তবে আমরা এমনভাবে তা করিনি। আসাম নিয়েই এ চুক্তি বিজেপিকে পাস করতে হবে। একটি কম্প্রিহেনসিভ এগ্রিমেন্ট চায় জাতীয় কংগ্রেস। বিজেপি আসামে ধর্মীয় সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগাতে চাইছে। কারণ সেখানে বিজেপির তেমন জনপ্রিয়তা নেই।’

তাহলে তো কংগ্রেসের সময় থেকে চেষ্টা করা চুক্তিটি এ যাত্রায়ও পাস হওয়া অনিশ্চিত আপনাদের বিরোধিতায়- এ প্রশ্নের উত্তরে ওই কংগ্রেস নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের সামগ্রিক স্বার্থ বিবেচনা করে ল্যান্ড বাউন্ডারি বিল করেছিল কংগ্রেস। বিজেপি, তৃণমূল তখন এর বিরোধিতা করেছিল। আজ ক্ষমতায় গিয়ে তারা ভালো হয়ে গেছে, আর আমরা শয়তান হয়ে গেলাম, তাই না?’ তিনি দৃঢ়ভাবে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কোনোভাবে ভারতের স্বার্থ লঙ্ঘিত হয় এমন আংশিক চুক্তি আমরা মানব না। পশ্চিমবঙ্গ, আসামকে নিয়ে সামগ্রিকভাবেই এ চুক্তি হতে হবে। এটাই কংগ্রেসের অবস্থান।’

আসাম কংগ্রেসও একই অবস্থান নিয়েছে বলে বেশ কয়েকজন কংগ্রেস নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। যদিও রাজ্যসভায় আজ এই বিল উত্থাপনের কথা সরকারিভাবে জানানো হয়নি। তবে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বিলটি আজই তোলার খবর দিয়েছে। কংগ্রেসের শীর্ষস্থানীয় নেতা অধীর চৌধুরীও আজ বিল তোলা হচ্ছে বলে স্বীকার করেন।

জানা গেছে, সীমান্ত চুক্তির সংশোধিত বইটিতে যে সীমানা আঁকা হয়েছে সেখানে আসামের করিমগঞ্জ জেলার লাঠিটিলা-দুমাবাড়ী সেক্টরের লাঠিটিলা এলাকায় বাংলাদেশের দখলে থাকা ৭১৪ একর বিতর্কিত জমি আসামের হাতে আসবে। এর বিপরীতে বড়ইবাড়ী কালাবাড়ী এলাকার ১৯৩.৮৫ একর জমি ও পাল্লাঠাল এলাকার ৭৪.৫৫ একর জমি পাবে বাংলাদেশ।

যদিও আসামের প্রদেশ কংগ্রেস মনে করছে ২৬৮.৪০ একর জমি নামেই ভারতের সীমান্তভুক্ত। আসলে ওই এলাকার দখল বাংলাদেশের হাতেই আছে। জমি বিনিময় হওয়ার পর আসাম বা ভারত ৪৪৫.৬০ একর জমি বেশি পাবে। নতুন এই চুক্তি হলে আখেরে লাভ হবে আসামেরই।

তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যসভায় আজ এই বিলের পক্ষে ভোট দেবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। দুই দিন আগে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে টেলিফোনে তিনি এ বিষয়ে আশ্বস্ত করেন এবং বলেন, এই চুক্তিতে পশ্চিমবঙ্গের সায় আছে। প্রায় ৬০ হাজার মানুষকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবে বলে জানান মমতা।

এই চুক্তি অনিশ্চয়তার দিকে যাওয়ার খবর পৌঁছেছে ছিটমহলগুলোতেও। ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত সন্ধ্যায় টেলিফোনে কালের কণ্ঠকে জানান, এই চুক্তি পাস করা প্রয়োজন মানবিক স্বার্থে। রাজনীতি না করে তিনি সব রাজনৈতিক দলের নেতাকে এই চুক্তির পক্ষে ভোট দেওয়ার অনুরোধ জানান। তবে তিনি বলেন, কংগ্রেস এর বিরোধিতা করলে এটা খুবই দুঃখজনক হবে। তিনি এও বলেন, ইচ্ছা থাকলে বিজেপি জরুরিভাবে যৌথ অধিবেশন ডেকে এই চুক্তি পাস করাতে পারে। এটা বিজেপির কাছেও চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন দীপ্তিমান সেনগুপ্ত।

খণ্ডিত বাস্তবায়নের প্রস্তাব পেলে বিবেচনা করবে বাংলাদেশ : আমাদের কূটনৈতিক প্রতিবেদক জানান, ভারতের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তির খণ্ডিত বাস্তবায়নের কোনো প্রস্তাব পেলে বাংলাদেশ তা বিবেচনা করে দেখতে পারে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। গতকাল সোমবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান। তিনি আরো বলেন, ‘ভারতের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে স্থলসীমান্ত চুক্তি বিষয়ে যেসব কথা বলা হচ্ছে এটা সম্পূর্ণ তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কোনো মতামত নেই।’

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ-ভারত স্থলসীমান্ত চুক্তি এবং এটি বাস্তবায়নে ২০১১ সালে যে প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়েছে তা এখনো বহাল আছে। এখন শুধু তা বাস্তবায়নের অপেক্ষা। তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারত স্থলসীমান্ত চুক্তি লোকসভায় উঠতে যাচ্ছে, যা অত্যন্ত আশার ও খুশির খবর।’

চুক্তি বাস্তবায়নে দেরি প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, চুক্তি বাস্তবায়নে অনেক সময় লেগে যায়। তবে অচিরেই তা বাস্তবায়িত হচ্ছে। স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়িত হলে দুই দেশের মধ্যে অপদখলীয় ভূমি বিনিময়, অচিহ্নিত সীমান্ত চিহ্নিতকরণ ও ছিটমহল সমস্যার সমাধান হবে। স্থলসীমান্ত চুক্তি ও প্রটোকলের আওতায় ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের মোট সাত হাজার ১১০ একর আয়তনের ৫১টি এবং বাংলাদেশের ভেতরে ভারতের মোট ১৭ হাজার ১৬০ একর আয়তনের ১১১টি ছিটমহল বিনিময়ের কথা রয়েছে।