ঢাকা, মে ৭, ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ১৬:৩২:৫৬

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

পূর্ব লেবাননে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল জিম্মি চুক্তিতে হামাসকে রাজি করাতে মিসর ও কাতারের দ্বারস্থ বাইডেন দক্ষিণ চীন সাগরে সামরিক মহড়া চীনের গাজা যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে রমজানে মুসলমানদের আল আকসায় নামাজ পড়ার অনুমতি দিতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ গাজায় তুমুল যুদ্ধ ॥ চলছে যুদ্ধবিরতির বৈঠক জর্ডানে মার্কিন সৈন্য হত্যা ॥ দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনার অঙ্গীকার যুক্তরাষ্ট্রের গাজা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে জাতিসংঘ দূতদের সাক্ষাত জি৭ নেতাদের ভিডিও শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী না হলে বাইডেন ও অনিশ্চিত

বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানালো ভারত

| ২২ ফাল্গুন ১৪২২ | Saturday, March 5, 2016

পঞ্চগড়ে পুরোহিত হত্যাকাণ্ড

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ‘শ্রেষ্ঠ সময়ে’ও অল্প হলেও ছন্দপতন ঘটল। দিল্লি সফরে আসা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীকে ভারত স্পষ্ট জানিয়ে দিলো- সে দেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর আক্রমণের যেসব ঘটনা ঘটছে তাতে ভারত মোটেই খুশি নয়। ঈষৎ বিব্রত পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী জবাবে বললেন, মৌলবাদী শক্তির মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকার সবসময়ই বদ্ধপরিকর।
দিল্লিতে সাউথ ব্লকের সূত্রগুলো বলছে, সম্প্রতি বাংলাদেশের পঞ্চগড়ে সনাতন গৌড়ীয় মঠের প্রধানকে যেভাবে আততায়ীরা নৃশংস হামলা চালিয়ে খুন করে গেছে – সেটা ভারতকে যথেষ্ট বিচলিত করেছে। তাছাড়া দিনকয়েক আগে হিন্দুদের সরস্বতী পূজা ও গত বছরের দুর্গাপূজার সময়েও বেশকিছু প্রতিমা ভাঙার ঘটনা ঘটেছে। এমনকি, প্রগতিশীল লেখালেখির জন্য যে ব্লগাররা বাংলাদেশে খুন হয়েছেন তাদেরও অনেকেই হিন্দু সম্প্রদায়ের। এসব কারণেই ভারত বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।
সাধারণত প্রতিবেশী দেশের ভেতরকার কোনও ঘটনায় ভারত সরকারিভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায় না, সেগুলোকে তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলেই পাশ কাটিয়ে থাকে। নরেন্দ্র মোদি সরকারের পৌনে দু’বছরেও ভারত বাংলাদেশের ভেতরকার কোনও বিষয় নিয়ে কখনও কোনও মন্তব্য করেননি, এমনকি বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন যখন তুঙ্গে, তখনও তারা তা নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে চায়নি। কিন্তু এবারেই প্রথম হিন্দুদের ওপর হামলা নিয়ে ভারত মুখ খুললো – এমনকি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীর কাছে দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবিও জানানো হলো। এখানেই শেষ নয়, সরকারিভাবে বিবৃতি দিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সে কথা প্রকাশও করলো – যা একেবারেই নজিরবিহীন বলা চলে।

এই প্রসঙ্গের অবতারণা হয়েছিল মঙ্গলবার বিকেলে, যখন দিল্লির পাঁচতারা হোটেল তাজ প্যালেসে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠকে বসেন তার বাংলাদেশি কাউন্টারপার্ট এ এইচ মাহমুদ আলী। সন্ধ্যায় রাইসিনা ডায়ালগের আলোচনা শুরুর ঠিক আগে ওই দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসেছিলেন দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সেখানেই সুষমা স্বরাজ তাকে বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার যেসব ঘটনা ঘটেছে ভারত চায় তাতে সে দেশের কর্তৃপক্ষ দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিক।

ভারত সফরে আসা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্ভবত আশা করেননি, এই প্রসঙ্গটি ভারতের দিক থেকে তোলা হবে। সে যাইহোক, জবাবে তিনি বলেন- মৌলবাদী শক্তিগুলোকে প্রতিহত করা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, বাংলাদেশ সে বিষয়ে পুরোপুরি অবহিত। বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ, উদার ও প্রগতিশীল চরিত্র অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার যে অঙ্গীকারাবদ্ধ, সে কথাও সুষমা স্বরাজকে জানিয়ে দেন তিনি।

ওই বৈঠকের প্রায় চব্বিশ ঘণ্টা পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই কথোপকথনের প্রায় পুরোটাই সরকারি বিবৃতির মধ্যে প্রকাশ করে দেয়। এটাও একটা খুব বিরল পদক্ষেপ, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

দিল্লিতে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ভারতের বিজেপি সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে দেশের ভেতর পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে আসন্ন নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এই দুই রাজ্যে বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ একটা বড় নির্বাচনি ইস্যু এবং বাংলাদেশে হিন্দুরা কোনও কারণে নির্যাতিত হলে বা আতঙ্কিত বোধ করলে তারা সীমান্ত পেরিয়ে মূলত এই দুটো রাজ্যেই আশ্রয় নিয়ে থাকেন। কাজেই বাংলাদেশে হিন্দুদের দুঃসময়ে বিজেপি তাদের পাশে আছে, এটা প্রমাণ করার তাগিদ থেকেই মাহমুদ আলীর কাছে দোষীদের গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে ২০১৪’র আগে যখন এক দশক ধরে বিজেপি বিরোধী দল ছিল, তখন তারা বাংলাদেশে হিন্দুদের নির্যাতনের প্রসঙ্গ বারে বারেই তুলেছে। ২০১৪’র ভোটের মাত্র কিছুদিন আগেই বর্তমানে কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী ও তখনকার বিজেপি মুখপাত্র নির্মলা সীতারামন নিয়ম করে ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, দিনাজপুর বা সাতক্ষীরায় হিন্দুদের ওপর কী কী অত্যাচার চলছে তার নিয়মিত ফিরিস্তি পেশ করে এসেছেন। কিন্তু ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসার পর তারা কখনও এ প্রসঙ্গ আর তোলেননি।

চোদ্দ বছর আগে কাঠমান্ডুর সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের তখনকার প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী বাংলাদেশের সে সময়কার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কাছে হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের কথা তুলেছিলেন। খালেদা জিয়া তখন সবে জিতে ক্ষমতায় এসেছেন, আর তার ভোটে জেতার পর পরই ২০০১-র অক্টোবরে সারা বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর তুমুল অত্যাচার ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ ওঠে। অভিযোগের তীব্রতা এতটাই ছিল, বিজেপি নেতা বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী হয়েও চুপ থাকতে পারেননি।

আজ সেই ঘটনার এত বছর পর নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকারও বাংলাদেশের কাছে একই বিষয়ে অভিযোগ জানানোর ঘটনার পুনরাবৃত্তি করল। তবে সে সময় সামনে কোনও নির্বাচন ছিল না, কিন্তু এখন রাজ্যে নির্বাচনই বড় বালাই।

সূত্র-http://www.banglatribune.com/national/news/83443/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6%E0%A7%87-%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%93%E0%A6%AA%E0%A6%B0-%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A6-%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A7%8B