ঢাকা, মে ২, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ২০:৪৩:৪৮

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

পূর্ব লেবাননে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল জিম্মি চুক্তিতে হামাসকে রাজি করাতে মিসর ও কাতারের দ্বারস্থ বাইডেন দক্ষিণ চীন সাগরে সামরিক মহড়া চীনের গাজা যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে রমজানে মুসলমানদের আল আকসায় নামাজ পড়ার অনুমতি দিতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ গাজায় তুমুল যুদ্ধ ॥ চলছে যুদ্ধবিরতির বৈঠক জর্ডানে মার্কিন সৈন্য হত্যা ॥ দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনার অঙ্গীকার যুক্তরাষ্ট্রের গাজা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে জাতিসংঘ দূতদের সাক্ষাত জি৭ নেতাদের ভিডিও শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী না হলে বাইডেন ও অনিশ্চিত

ওলামা লীগ এতো সাহস পায় কোত্থেকে?

| ২১ পৌষ ১৪২২ | Monday, January 4, 2016

শিতাংশু গুহ:

অবশেষে বাংলাদেশে আত্মঘাতী বোমা ফুটেছে। মুসলমানদের পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী ও খ্রিস্টানদের বড়দিনে রাজশাহীর বাগমারায় একটি আহমদিয়া মসজিদে এ ঘটনা ঘটে। এতে ঘাতকসহ বেশ ক’জন হতাহত হয়। এরআগে বগুড়ায় শিয়া মসজিদে গুলি ও মুয়াজ্জিন নিহত হবার ঘটনা আমরা জানি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কি এবারো বলবেন যে এই ঘটনা ইহুদীদের মদতে হয়েছে!

গত বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) ফার্মগেট কৃষি ইন্সটিটিউটে আলেম-ওলামাদের সাথে এক বৈঠকে মন্ত্রী ‘ইহুদিদের মদদে দেশে হত্যাকাণ্ড হচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি আরো বলেছিলেন, ‘দেশে দুই বিদেশি ও পুলিশ হত্যার সাথে বহির্বিশ্বের সংশ্লিষ্টতা আছে। মন্ত্রীর এ বক্তব্য ২১ ডিসেম্বর ১৯৬৫ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণায় পরিপন্থী তা তিনি জানেন কিনা কে জানে? তবে ভারতের উত্তর প্রদেশে সদ্য ওমপাল মেহেরা নামের এক মন্ত্রীর চাকুরী গেছে। কারণ তিনি এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণে মুসলমানদের উচিত হবে হিন্দুদের সহায়তা করা।

প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে কত তফাৎ, একদেশে অসহিষ্ণুতা নিয়ে কত কাণ্ডই না হয়ে গেলো, আর এক দেশে অসহিষ্ণুতা কি জিনিষ তা কেউ খবরই রাখে না, অথবা অসহিষ্ণুতা লালন করে!

আত্মঘাতী বোমা আবারো প্রমাণ করলো বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক না হলে রক্ষা নেই। পাকিস্তানের মত বাংলাদেশে ধর্মীয় রাজনীতি যত জোরদার হচ্ছে, সমস্যা ততই বাড়ছে। বাড়বাড়ন্ত ধর্মান্ধতায় বাংলাদেশ ডুবে যাচ্ছে এবং অচিরেই হয়তো আমাদের অসাম্প্রদায়িকতা কোথায় আছে তা খুঁজে বেড়াতে হবে।

তবে সামাজিক মাধ্যমে একজন মানিক রক্ষিত ঠাট্টা করে লিখেছেন, “অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত জঙ্গিরা। ওরা শুধু হিন্দুদের মন্দির, খ্রিষ্টানদের গির্জা বা বৌদ্ধদের প্যাগোডাতেই হামলা চালায় না, মুসলমানদের মসজিদেও হামলা চালায়। ইতোপূর্বে মাজার ও শিয়া মসজিদে হামলা হয়েছে। এবার আহমদিয়া মসজিদে আত্মঘাতী হামলা করে অসাম্প্রদায়িকতা(!) প্রতিষ্ঠা করতে জীবনটাই দিয়ে দিলেন এক জঙ্গি। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে ওরা আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেল বাংলাদেশকে”।

তবে জঙ্গিরা কিন্তু বলেকয়েই সবকিছু করে, ক্রিকেটার রকিবুলদের মত ‘মুখে শেখ ফরিদ বগলে ইট’ নিয়ে ভণ্ডামি করে না। অথবা ‘পলিটিক্যালি কারেক্ট’ থাকার জন্যে লম্বা বক্তৃতা দিয়ে বলে বেড়ায় না যে, বাংলাদেশে সম্প্রীতির সু-বাতাস বইছে। অবশ্য আমাদের দেশের রাজনীতিবিদদের আবোলতাবোল বলার রেওয়াজ বেশ পুরানো। সম্প্রতি খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে নূতন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। তেমনি তার এক সাগরেদ ‘নির্বোধ’ গয়েশ্বর রায় বলেছেন, ‘বুদ্ধিজীবীরা নির্বোধের মতো মারা গিয়েছিলেন’।

তার কাছে প্রশ্ন, জিসি দেব কি নির্বোধ ছিলেন? বা মুনীর চৌধুরী? হিন্দুরা মাঝে মধ্যে গর্ব করে যে তাদের মধ্যে রাজাকার বা পাকিস্তানপন্থী নেই। আসলে কি তাই? তাহলে গয়েশ্বর কি?

মূলত: দেশের সম্প্রদায়গত পরিস্থিতি যে কতটা নাজুক তা বোঝা যায় অতি সম্প্রতি আওয়ামী ওলামা লীগের কিছু দাবি বা কর্মকাণ্ড থেকে। তারা প্রথমে দাবি করলেন সকল হিন্দু সংগঠন নিষিদ্ধ করতে। তারপর দাবি করলেন প্রধান বিচারপতির অপসারণ। এরপর পাঠ্যবই থেকে সকল হিন্দু লেখকদের লেখা বাদ এবং সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে আওয়ামী লীগ থেকে বের করে দেয়ার। হিন্দুদের চৌদ্দ পুরুষের ভাগ্য যে, তারা এখনো সব হিন্দুকে দেশ থেকে বিতরণের দাবি করেনি! দাবি তো অনেকে অনেক কিছুই করতে পারে, কিন্তু এর পাল্টা কোন বক্তব্য আমরা শুনছিনা কেন? কোথায় আমাদের প্রগতিশীল ভাইয়েরা? নাকি এগুলো সবারই দাবি? ষাটের দশকের মত প্রতিবাদ আমরা দেখিনা কেন?

তবে গণজাগরণ মঞ্চের ইমরান বলেছেন, ‘ওলামা লীগ স্বাধীন বাংলাদেশের কলঙ্ক, এদের সামলান।’ ওলামা লীগ এত সাহস পায় কোত্থেকে? সাহস না, আসলে ওলামা লীগ ভয় পেয়ে গেছে। ৪ ডিসেম্বর ঢাকায় ঐক্য পরিষদের মহাসমাবেশ দেখে ওই নব্য রাজাকার গোষ্ঠী প্রমাদ গুনছে, ভাবছে আবার না এদের একাত্তরের মত গর্তে ঢুকতে হয়? এই ওলামা লীগ তো জামাত বা হেফাজত থেকে খারাপ। সবাই এখন থেকে জামাত-হেফাজতের সাথে ওলামা লীগের নাম নেবেন কি? তবে একটি প্রশ্ন, ওলামা লীগকে নিয়ে কেউ খেলছেন কি ?

এ খেলার পরিণতি কখনো ভাল হবার নয়। আমরা একদিকে দেশ থেকে হিন্দুদের খেদিয়ে দেবো, পার্বত্য চট্টগ্রামকে ইসলামীকরণ করবো, রাষ্ট্রধর্মের তোষামোদি করবো, সুযোগ পেয়েও বাহাত্তরের সংবিধান প্রতিষ্ঠা করবোনা, ব্লগার হত্যার বিচার করবো না, মন্দির-মুর্তি ভাঙার বিচার করবো না, অথবা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে সাফাই গাইবো অর্থাৎ পরোক্ষভাবে মৌলবাদকে উস্কে দেবো আর মনে মনে আশা করবো যে দেশে শান্তির সু-বাতাস বইবে তা কি হয়? আত্মঘাতী বোমা সবে শুরু, এটাই শেষ নয় বলর বোধকরি। দেশ যেভাবে চলছে তাতে পাকিস্তানের মত ঘটনা আরো ঘটবে। খ্রিস্টানদের বড়দিন গেল, দেশে কোন মিডিয়া বা কাউকে প্রশ্ন করতে দেখলাম না, সোমালিয়া, ব্রুনাই, সৌদিআরব, তাজাখিস্তানে ক্রিসমাস পালন নিষিদ্ধ কেন? অথচ সামাজিক মিডিয়ায় দেখলাম গায়িকা শাকিলা জাফর ভারতের রবি শর্মাকে বিয়ে করেছেন এনিয়ে কতজনের কত তাচ্ছিল্য।

হিটলারের পতন হয়েছিলো কারণ একসাথে হিটলারকে অনেকগুলো ফ্রন্টে যুদ্ধ করতে হয়েছিলো। একই কারণে আইসিস-এর পতন হবে, কারণ এরা সবাইকে শত্রু বানিয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশকেও বুঝতে হবে এর শত্রু মৌলবাদ, হিন্দুরা নয়। একফ্রন্টে যুদ্ধ হলে জয় নিশ্চিত।

গত ১০ মাসে রাঙামাটিতে নারীর প্রতি ধর্ষণসহ ৩৪টি সহিংস ঘটনা ঘটেছে, বিচার হয়নি একটিরও, কারণ কি? ধর্ষিতা হাজারো হিন্দু রমণীর কথা নাই-বা তুললাম। সিলেটের ধর্মপাশার মান্টি রানীর কথা নাইবা আনলাম। ২০০১-এ যে নারীরা নির্যাতিত হয়েছে তাদের কথাও তুললাম না। সমস্যাটি এই জায়গায়। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান-আহমদিয়া-শিয়া-আদিবাসী সবাইকে কি শত্রু শিবিরে পাঠিয়ে দিয়ে কি দেশে শান্তি আসবে?

আমরা সবাই বাঙালি কি শুধুই শ্লোগান? বাঙালি কি আমরা হয়েছি, না বাঙালি মুসলমান হতে জানপ্রাণ দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছি! ইংরেজিতে একটি কথা বলে, ‘বেটার টু লাইট এ ক্যান্ডেল দ্যান কারসিং দ্য ডার্কনেস।’

আমরা তো অন্ধকারকে আমন্ত্রণই করে যাচ্ছি, আলোর জন্যে মোমবাতি জ্বালাচ্ছি কই? অথচ শান্তির অন্বেষায় নরেন্দ্র মোদী রাশিয়া থেকে এক লাফে চলে গেলেন কাবুলে, তারপর আর একলাফে পাকিস্তানে গিয়ে হ্যান্ডসেক করলেন নওয়াজ শরীফের সাথে।

কে যেন বলেছিলেন, “দশটি সিংহের নেতা যদি একটি শেয়াল হয় তাহলে ঐ সিংহ গুলো শিয়ালের আচরণ করবে। কিন্তু দশটি শেয়ালের নেতা যদি একটি সিংহ হয় তাহলে ঐ শিয়াল গুলো সিংহের আচরণ করবে।”

আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তো সিংহশাবক, তিনি কি পারেন না মৌলবাদের বিরুদ্ধে দেশকে উনসত্তর-সত্তরের মত একাত্ম করতে?

শিতাংশু গুহ: কলাম লেখক।

সূত্র-http://www.sylhettoday24.com/news/details/Column/14290?utm_campaign=shareaholic&utm_medium=facebook&utm_source=socialnetwork