ঢাকা, এপ্রিল ২৬, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ১৫:৫৪:৫০

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

পূর্ব লেবাননে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল জিম্মি চুক্তিতে হামাসকে রাজি করাতে মিসর ও কাতারের দ্বারস্থ বাইডেন দক্ষিণ চীন সাগরে সামরিক মহড়া চীনের গাজা যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে রমজানে মুসলমানদের আল আকসায় নামাজ পড়ার অনুমতি দিতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ গাজায় তুমুল যুদ্ধ ॥ চলছে যুদ্ধবিরতির বৈঠক জর্ডানে মার্কিন সৈন্য হত্যা ॥ দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনার অঙ্গীকার যুক্তরাষ্ট্রের গাজা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে জাতিসংঘ দূতদের সাক্ষাত জি৭ নেতাদের ভিডিও শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী না হলে বাইডেন ও অনিশ্চিত

আইএস বিশ্বের সবচেয়ে ধনী জিহাদি গোষ্ঠী

| ১৪ ভাদ্র ১৪২১ | Friday, August 29, 2014

রাজ্যটা নেহাত ছোট নয়। আয়তনে যুক্তরাজ্যের চেয়েও বড়। হলোই বা সেটা মধ্যপ্রাচ্যের ঊষর ভূমি। সে রাজ্যের রাজকোষে রোজ আনুমানিক ১৬ কোটি টাকা জমে। তেল বিক্রি, মুক্তিপণ ও ট্যাক্স আদায়সহ চোরাচালানের মাধ্যমেই এ আয় করে আল কায়দা সংশ্লিষ্ট ইরাকি জিহাদি গোষ্ঠী আইএস বা ইসলামিক স্টেট। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী জিহাদি গোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে তারা। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা এবং সন্ত্রাসবিরোধী অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
অন্যান্য চরমপন্থি সংগঠনের মতো বিদেশি অর্থায়নের ওপর মোটেও নির্ভরশীল নয় আইএস। স্থানীয় রাজস্ব আয়ে হুট করে ভাটা পড়ার আশঙ্কায় দেশ দুটির সরকারও তাদের লেনদেন বাগে আনতে পারছে না। আইএসের সন্ত্রাসী হামলা বন্ধের সাধ্য এখন তাদের নেই। বরং যে কোনো মুূহূর্তে তাদের হামলার আতঙ্কে তটস্থ পশ্চিমা বিশ্ব।
আইএসকে সর্বকালের সবচেয়ে ধনী দল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ওয়াশিংটনভিত্তিক একটি সন্ত্রাসবিরোধী সংস্থার পরিচালক ম্যাথিউ লেভিট। তিনি মনে করেন, আন্তর্জাতিক অর্থায়ন ছাড়াই স্বয়ংসম্পূর্ণ দলটি। এমনকি বরাদ্দ বন্ধ, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন বা ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন এনেও তাদের ফাঁদে ফেলা সম্ভব নয়।
এ যেন আরেক আল কায়দা! অবশ্য সম্পদের দিক থেকে তাদের মতো হলেও দল দুটির পরিচালনা পদ্ধতি ভিন্ন। সাবেক আল কায়দা প্রধান ওসামা বিন লাদেন ছিলেন ধনী পরিবারের সন্তান। তার আন্তর্জাতিক সহযোগীও ছিল প্রচুর। সে কারণেই হয়তো গোয়েন্দা বিভাগের আর্থিক শাখা সহজেই সেটা জব্দ করতে পেরেছিল।
আইএসের আয়ের উৎসগুলো দেখা যাক_
অবৈধ আয় : নিজস্ব অর্থায়নে জঙ্গি সংগঠন চালানোর বিষয়টি একদম নতুন। আইএস সেটাই করছে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানান, চাঁদাবাজি, মুক্তিপণ আদায়, ডাকাতি, তেল চোরাচালান করে আইএস যে পরিমাণ আয় করে তার তুলনায় বিদেশি দাতাদের কাছ থেকে পাওয়া সহায়তা নগণ্য। ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি এবং স্পেনের নাগরিকদের অপহরণের পর মোটা অঙ্কের মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দেয় তারা।
কর ও রাজস্ব : জাতিসংঘের ২০১১ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, সে বছর স্থানীয় কর, অনুদান এবং মাদক চোরাচালান করেই তালেবানরা প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা আয় করে। আইএসের দখলে থাকা তেলক্ষেত্রগুলো থেকে রাজস্ব আদায় করলেই তা অন্য দলগুলোর আয়কে ছাড়িয়ে যাবে। উত্তর ইরাকের সাতটি তেলক্ষেত্র ও দুটি শোধনাগার এবং সিরিয়ার পশ্চিমের ছয়টি তেলক্ষেত্র আইএসের দখলে আছে। সেগুলো থেকে সংগৃহীত প্রতি ব্যারেল ক্রুড অয়েল দুই থেকে সাড়ে চার হাজার টাকায় বিক্রি করছে তারা। চোরাবাজারে স্বাভাবিকের চেয়ে দাম একটু কম হলেও আয় কিন্তু ভালোই হচ্ছে এতে।
মসুলের মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় কর আদায় ছাড়াও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তারা শুধু মুক্তিপণই আদায় করেছে ৭৮ কোটিরও বেশি টাকা।
বৃহত্তম তেল শোধনাগার : কাতারের ব্রুকিং ইনস্টিটিউশন দোহা সেন্টারের ফেলো লুয়াই আল খাত্তাব জানান, প্রতিদিন গড়ে ৮০ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদনে সক্ষম একটি ইরাকি তেলক্ষেত্র রয়েছে আইএসের দখলে। যার আনুমানিক বাজারমূল্য ১৬ কোটি টাকা। অন্যদিকে, তাদেরই হামলার জেরে বন্ধ হয়ে গেছে দেশটির এক-তৃতীয়াংশ তেল উৎপাদনে সক্ষম বেইজি শোধনাগার। ফলে পুরো বাজারই এখন তাদের দখলে। যুদ্ধের চাকাটা সচল রাখতেই তাতে ‘তেল’ ঢালছে আইএস। আর বাকিটা যাচ্ছে নতুনদের নিয়োগে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ রবিন মিলস মনে করেন, কুর্দি অঞ্চলের তেল চোরাচালানের পথ বন্ধে অভিযানে নেমেছে ইরাকি কর্তৃপক্ষ। এতে করে আইএসের তেল বিক্রির রাজস্ব কমবে বলেই ধরা যায়। আইএসের দৈনিক আয় ১৬ কোটি টাকা হওয়ার বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। আল-কায়দা ২৩০ কোটি টাকা খরচ করে ৯/১১ হামলা চালিয়েছিল_ প্রাথমিকভাবে সিআইএ এমন দাবি করে। পরে অবশ্য জানা যায় এতে খরচ হয়েছে মাত্র ৮ কোটি টাকা।
দুর্বিনীত সংগঠন : ২০১২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত যাদের নামগন্ধই ছিল না, তারাই এখন ‘লাইম লাইটে’। আইএসের ক্ষমতার উৎস শুধু দখলে থাকা এলাকা আর সেখানকার সম্পদই নয়, বাসিন্দাদের কাছ থেকে পাওয়া চাঁদাও। সে কারণে কূটনৈতিক চাপ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দাপট বা হঠাৎ করে সরবরাহ ঘাটতির কোনো ভয়ই নেই তাদের। কড়া নজরদারির পরও তাদের এ ক্ষমতা কেড়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্রের ঢের সময় লাগবে। আইএসের অনুদান বন্ধ করাটাও বিরাট চ্যালেঞ্জ। মার্কিন সেনারা যখন ইরাকে বিমান হামলা চালিয়ে জঙ্গিদের অস্ত্রাগার ধ্বংস করছে তখন দেশটির অন্য সংস্থাগুলো তাদের সিন্দুক খুঁজতে ব্যস্ত। মে মাস থেকে এ পর্যন্ত বেশকিছু জঙ্গি নেতা এবং অর্থ সংগ্রাহককে সাজা দেওয়া হয়েছে। ব্যক্তি পর্যায়ে লেনদেন বন্ধে বাকিদেরও খোঁজ চলছে। শংসতার চেয়ে আইএসের অর্থ এবং সাফল্য শতগুণ আকর্ষণীয়। ব্লুমবার্গ নিউজ এবং ডেইলি টেলিগ্রাফ অবলম্বনে