প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশের অগ্রগতি রোধ করতে যারা সংকট সৃষ্টি করেছিল; তারা জনগণের কাছে চিহ্নিত হয়েছে। দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি অব্যাহত রাখার জন্য মানুষের সৃষ্ট সংকট যাতে আর না আসে, তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে আজ রোল মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের এ অর্জনকে টিকিয়ে রাখতে হবে। হা-হুতাশ করে কিছুই হবে না। সাহসের সঙ্গে আমাদের দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশিষ্টজনদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়কালে এসব কথা বলেন।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭০তম অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী এখন নিউইয়র্কে। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশন এই ঈদ সন্ধ্যার আয়োজন করে। নগরের লাগোর্ডিয়া ম্যারিয়ট হোটেলে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মী ও বিশিষ্টজনরা উপস্থিত ছিলেন।
ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি আরবের মিনায় নিহত হাজিদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। তিনি উদ্বিগ্ন প্রবাসীদের বলেন, হতাহতদের মধ্যে বাংলাদেশিরাও আছেন। গতকাল পর্যন্ত তিনজন বাংলাদেশি নারী হাজি নিহত হওয়ার নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ৪০ জন নিখোঁজ আছে। সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। বিপন্ন যেকোনো বাংলাদেশি হাজিকে সহযোগিতা করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি নিজে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন বলেও জানান।
শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে তাঁর যোগদানের সারসংক্ষেপ প্রবাসী বিশিষ্টজনদের অবহিত করেন। তিনি বলেন, জাতিসংঘ ঘোষিত সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সবগুলো সূচক বাংলাদেশ অর্জন করেছে। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ এ অর্জনের গর্বিত অংশীদার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘের এবারের অধিবেশনে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অর্জনকে কীভাবে স্থায়ী করা যায়, তাঁর কর্মকৌশল নিয়ে আলোচনা হবে। এর সঙ্গে তিনি যোগ করেন, বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বের উন্নয়নে নেতৃত্ব প্রদান করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে যখন বাংলাদেশের মানুষ কাজ করে, তখন তাদের পক্ষে কোনো কিছু অর্জন করাই কঠিন নয়।
সভার এ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধার সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ‘তাঁরা দেশটি স্বাধীন না করলে আমরা আজকের বাংলাদেশ পেতাম না। আমার কাছে চ্যালেঞ্জ ছিল, কারও দিকে হাত না পেতেই আমাদের এগিয়ে যাওয়ার। হাত পেতে নয়, নিজেদের চেষ্টাতে আমরা মধ্যম আয়ের দেশের প্রথম সোপানে পৌঁছে গেছি। ২০২১ সালের আগেই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হবে এবং ২০৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জাতির জনক বলে গেছেন বাঙালিদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। আমরা প্রমাণ করেছি, আমাদের কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না। প্রাকৃতিক বিপর্যয় যেমন আমরা মোকাবিলা করেছি; মানুষ সৃষ্ট বিপর্যয়ও এভাবে মোকাবিলা করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।’
জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এ কে আবদুল মোমেন স্বাগত বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সফরসঙ্গী স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, মন্ত্রিসভার সদস্য আবুল মাল আবদুল মুহিত, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এ এইচ মাহমুদ আলী, নুরুল ইসলাম বিএসসি, মেহের আফরোজ চুমকি এবং উপদেষ্টা মশিউর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি-বিষয়ক উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।