ঢাকা, ০৪ জুন- পুষ্পবৃষ্টি আর শঙ্খ-উলুধ্বনি। জাতীয় মন্দির ঢাকেশ্বরী মন্দিরে প্রবেশমাত্রই এভাবেই বরণ করে নেয়া হবে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। দেবী কালি মাতারপায়ে পূজা দিয়ে গ্রহণ করবেন চরণামৃত (পবিত্র জল)। আর যাবার বেলায় তার হাতে তুলে দেয়া হবে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের প্রতিকৃতি।
দুই দিনের ঢাকা সফরের দ্বিতীয় দিনে বারো শতকে সেন আমলে প্রতিষ্ঠিত ঢাকেশ্বরী মন্দির ও রামকৃষ্ণ মিশনে পরিদর্শন ও পূজা দিতে যাবেন নরেন্দ্র মোদি। যার জন্য ইতোমধ্যেই চূড়ান্ত হয়েছে কর্মসূচি।
ঢাকেশ্বরী মন্দির সূত্রে জানা যায়, ৭ জুন রবিবার সোনারগাঁও হোটেল থেকে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে যাবেন মোদি। সকাল পৌনে ৮টায় তিনি সেখানে পৌঁছাবেন। ওখানে তাকে বরণ করে নেবেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও ঢাকা মহানগর পূজা কমিটির শীর্ষ নেতারা। সেখান থেকে মূল মন্দির প্রাঙ্গণে তাকে বরণ করবেন ঢাকেশ্বরী মন্দিরের প্রধান সেবায়েত প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী। প্রথমেই তিনি মূল মন্দির প্রাঙ্গণের শিব মন্দিরগুলো ঘুরবেন এবং প্রণাম করবেন। সেখান থেকে কালি মন্দিরে প্রবেশ করবেন। সেখানে তিনি দেবীর পায়ে পূজা দেবেন ও পুরোহিতের আর্শিবাদ গ্রহণ করবেন। তিনি সেখানে চরণামৃত গ্রহণ করবেন। এরপর তিনি ৪০ জন হিন্দু নেতাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
পুরো আয়োজন প্রসঙ্গে পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কাজল দেবনাথ বলেন, ‘৭ জুন সকাল পৌণে ৮টা থেকে সোয়া ৯টা পর্যন্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকেশ্বরী মন্দিরে অবস্থান করবেন। তার ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনের স্মারক হিসেবে মন্দিরের প্রতিকৃতি উপহার দেয়া হবে।’
এদিকে, নরেন্দ্র মোদির ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন উপলক্ষে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হবে পুরো প্রাঙ্গণ। ৭ জুন ভোর থেকে সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত কোন সাধারণ ভক্ত ঢাকেশ্বরী মন্দির প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবেন না। মোদির ঢাকেশ্বরী পরিদর্শন নির্বিঘ্ন করতে বুধবার সকালে মন্দিরে বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন গোয়েন্দা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে বাংলাদেশ সফরে এসে ২০১৪ সালের ২৭ জুন ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পূজা দেন মোদি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পূজা দিয়ে নরেন্দ্র মোদি যাবেন রাজধানীর গোপীবাগের আর কে মিশনের রামকৃষ্ণ মিশন মঠ ও মন্দিরে। কলকাতার বেলুর রামকৃষ্ণ মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুহিতানন্দ ইতোমধ্যেই ঢাকায় এসে বিভিন্ন দিক সমন্বয় করেছেন বলে জানা গেছে।
নরেন্দ্র মোদি ৭ জুন সকাল ৯টায় গোপীবাগের রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে আসবেন। সেখানে প্রায় ২০ মিনিট অবস্থান করবেন। এ সময়ে তিনি শ্রী শ্রী ঠাকুর রামকৃষ্ণ মন্দিরে পূজা দেবেন, সন্ন্যাসীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করবেন এবং তাদের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেবেন।
রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের জেনারেল সেক্রেটারি স্বামী সুহিতানন্দ, ঢাকা মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী ধ্রুবেশানন্দ এবং অন্যান্য সন্ন্যসীরা মিশন চত্বরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে স্বাগত জানাবেন। সনাতন ধর্মের চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী তিনটি শিশু মোদিকে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও চন্দন পরিয়ে দেবে। পরে তাকে মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হবে।
মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী ধ্রুবেশানন্দ ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ঢাকা রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন এবং শতবর্ষী রামকৃষ্ণ মিশন স্কুলের পক্ষ থেকে ক্রেস্ট ও গুজরাটি ভাষায় লেখা ঠাকুর শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব ও স্বামী বিবেকান্দের জীবনীচরিত গ্রন্থ উপহার দেবেন।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ৬ জুন ঢাকায় আসবেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ সফরে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে।