ঢাকা, মে ৭, ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ১৭:০৪:২৮

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

একীভূত হতে চাওয়া ব্যাংকের সম্পদের দাম যেভাবে নির্ধারণ করা হবে টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি বিএফইউজে’র দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিএনপির মাথাব্যথার কারণ নেই : ওবায়দুল কাদের বিএনপি একটি রাজনৈতিক দৈত্যের দল : পররাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তি বজায় রাখার জন্য যা-যা করার আমরা করবো: বান্দরবানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবারের ঈদ যাত্রাও স্বস্তিদায়ক হচ্ছে: সেতুমন্ত্রী কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট শিশুদের নতুন করে বাঁচার পথ খুলে দেয় : সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ আসন্ন পবিত্র রমজানে সরকারিভাবে বড় ইফতার পার্টি না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর পুলিশকে জনগণের বন্ধু হয়ে নিঃস্বার্থ সেবা দেয়ার নির্দেশ রাষ্ট্রপতির

হিন্দু মারলে, মূর্তি ভাঙলে অপরাধ হয় না!

| ১৮ কার্তিক ১৪২৩ | Wednesday, November 2, 2016

file-1-585x350

সুভাষ সাহা-বর্তমান সরকারের কঠোর সিদ্ধান্তের ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবি’র দানবীয় তৎপরতা যখন নিয়ন্ত্রণে, ঠিক তখনি ধর্মীয় নেতার মুখোশে জেএমবি’র নতুন সংস্করণ ‘সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী’ ঠান্ডা মাথায় বাংলাদেশ থেকে অবশিষ্ট হিন্দুদের সমূলে উৎখাতের মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে। গত ৩০ অক্টোবর ব্রাম্মনবাড়িয়া জেলার নাসিরনগরের সাম্প্রদায়িক ঘটনা তারই নিদর্শন। এদেশে ঠুনকো অজুহাতে হিন্দুদের উপর জুলুম নির্যাতন নতুন কিছু না হলেও গত ৩০ অক্টোবর রবিবার ব্রাম্মনবাড়িয়া জেলার নাসিরনগরের ঘটনা স্মরণকালের ভয়াবহ। এদিন ধর্মীয় লেবাসে হামলাকারীরা একটি অপ্রমানিত ‘ইস্যুকে’ কাজে লাগিয়ে নাসিরনগর ও আশপাশে শতাধিক বাড়িতে হামলা চালিয়ে ১৫ টি মন্দিরের মূর্তি ভাঙচুর ও সর্বস্ব লুটে নিয়েছে।

যারা নৃশংস হামলার শিকার হয়েছেন তাঁরা ‘হিন্দু’। হিন্দু মারলে পাপ হয় না! হামলাকারীদের ভাষায় হিন্দুরা মানুষ নয়। ফেসবুকে বা অন্য কোথাও কোন হিন্দুর নামে ইসলাম অবমাননাকর কোনকিছু দেখা বা শোনামাত্র সকল হিন্দুকে একযোগে কোপাতে হবে!এ যেন প্রায় নিয়মে পরিণত হয়ে গেছে। সত্য হোক আর মিথ্যা হোক প্রমানের প্রয়োজন নেই। ‘হিন্দুর বাচ্চার’ নামে একবিন্দু অভিযোগ কানে আসামাত্রই একশ্রেণীর ‘কাঠমোল্লা’ তড়িঘড়ি প্রতিবাদ সভার নামে ধর্মভীরু মুসলমানদের জড়ো করে হিন্দুদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলে। এদের পরিকল্পিত উস্কানিতে ‘জেহাদিরা’ লাঠি-তলোয়ার নিয়ে হিন্দু নিধনে নেমে পড়ে। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ‘এতে নাকি ইসলামের সুনাম হবে, হামলাকারীদের জান্নাতবাস নিশ্চিত হবে’!

  • সামান্য অজুহাতেই মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুর প্রায় নিত্যদিনের ঘটনা

নাসিরনগরের ঘটনায় চারদিকে যখন তোলপাড় তার মাত্র একদিন পরই গতকাল সোমবার ৩১ অক্টোবর ‘উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায়’ গোপালগঞ্জে মন্দিরে আবারো হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটলো। মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিপন বিশ্বাস অভিযোগে জানান,কালীপূজা উপলক্ষে সোমবার রাতে রঘুনাথপুর দক্ষিণপাড়া মডেল প্রাইমারি স্কুল মাঠে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।অনুষ্ঠান শেষে ফেরার পথে কয়েকজন যুবক মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে। এসময় মেয়েদের সঙ্গে থাকা স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলে রঘুনাথপুর উত্তর পাড়ার সরু শেখের ছেলে সজিব শেখের নেতৃত্বে ওই যুবকরা মন্দিরে হামলা চালিয়ে স্বরস্বতী,কার্তিক,দূর্গা ও অসুরের প্রতিমা ভাঙচুর করে।
তার মানে ফেসবুকে জনৈক রসরাজ দাসের একটি পোস্ট করাকে কেন্দ্র করে নাসিরনগরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ইসলাম ধর্ম অবমাননার দায়ে শতশত হিন্দু বাড়িঘর ও মন্দির ভাঙচুরের মহোৎসব শুরু হয়ে গেল। রসরাজ গ্রেফতার হলো।যদিও এখনো প্রমান হয়নি অপকর্মটি রসরাজ দাসই করেছে? তাসত্ত্বেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রসরাজ দাসের ফাঁসীর দাবীতে বিক্ষোভ সমাবেশ অব্যহত। অথচ কী আশ্চর্য! মুসলমান বিক্ষোভকারীদের নেতারা একবারও উচ্চারণ করছেন না যে,মুসলমান ভাইয়েরা, তোমরা মূর্তি ভেঙো না। নিরীহ হিন্দুদের বাড়িতে হামলা করো না।

  • উস্কানীদাতা দুই ধর্মীয় নেতার কিছুই হবে না?

নাসিরনগরে যে দু’জন ধর্মীয় নেতা সাম্প্রদায়িক আগুন জ্বালিয়েছেন তারা এখন বলছেন,তাদের কেউ হামলা করেন নি।তারা নির্দোষ।অথচ পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে,অভিযুক্ত রসরাজ দাসকে দ্রুত গ্রেফতার করা হয়েছিল।তদন্তের পর শাস্তির আশ্বাসও দেয়া হয়েছিল প্রশাসনের পক্ষ থেকে। তারপরও ‘আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক রিয়াজুল করিম ও খাঁটি আহলে সুন্নত জামাতের সভাপতি মো: মহিউদ্দিন পৃথক দু’টি বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। ওই সমাবেশের পরই মিছিল করে লাঠিসোটা নিয়ে উত্তেজিত জনতা শতশত বাড়িঘরে হামলা, মূর্তি ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়।
এখন প্রশ্ন তাহলে কী নাসিরনগরের ঘটনার মূল হোতারা নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবি’র নতুন সংস্করণ? ছদ্মনামে দেশে সাম্প্রদায়িক তৎপরতায় নিয়োজিত? ঘটনার পর অজ্ঞাত হাজার হাজার আসামীর নামে কথিত মামলার খেলা না খেলে মুখোশ পড়া আসল জঙ্গীদের ধরুন। অবস্থাদৃষ্টে প্রতিয়মান হচ্ছে মুখোশ পড়া ধর্মীয় নেতাদের আপনারা ধরবেন না।হয় তাদের ভয় পান,অথবা বাংলাদেশ থেকে অবশিষ্ট হিন্দুদের বিতাড়িত করা পর্যন্ত আপনারা নাকে তেল দিয়ে তামাশা দেখবেন!আমরা এ ঘটনার চির অবসান চাই। অন্যথা এ দায় ক্ষমতাসীন সরকারকেই নিতে হবে।