ঢাকা, মে ৯, ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ০১:৩৩:৫২

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

একীভূত হতে চাওয়া ব্যাংকের সম্পদের দাম যেভাবে নির্ধারণ করা হবে টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি বিএফইউজে’র দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিএনপির মাথাব্যথার কারণ নেই : ওবায়দুল কাদের বিএনপি একটি রাজনৈতিক দৈত্যের দল : পররাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তি বজায় রাখার জন্য যা-যা করার আমরা করবো: বান্দরবানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবারের ঈদ যাত্রাও স্বস্তিদায়ক হচ্ছে: সেতুমন্ত্রী কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট শিশুদের নতুন করে বাঁচার পথ খুলে দেয় : সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ আসন্ন পবিত্র রমজানে সরকারিভাবে বড় ইফতার পার্টি না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর পুলিশকে জনগণের বন্ধু হয়ে নিঃস্বার্থ সেবা দেয়ার নির্দেশ রাষ্ট্রপতির

সেনা পদোন্নতির ক্ষেত্রে যোগ্য ও দেশপ্রেমিকদের প্রাধান্য দেয়ার আহবান প্রধানমন্ত্রীর

| ৯ শ্রাবণ ১৪২৩ | Sunday, July 24, 2016

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ও দেশপ্রেমিক যোগ্য নেতৃত্ব খুঁজে বের করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আপনাদেরকে সব কিছুর উর্র্ধ্বে থেকে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিচার বিশ্লেষণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দেশপ্রেমিক যোগ্য নেতৃত্ব খুঁজে বের করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ ঢাকা সেনানিবাসে সেনাসদর নির্বাচনী পর্ষদ-২০১৬’এ দেয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা সুশিক্ষিত, কর্মক্ষম, সচেতন, বুদ্ধিমান এবং সর্বোপরি গণতন্ত্রকে সুসংহত করার জন্য দৃঢ় প্রত্যয়ের অধিকারী- এমন যোগ্য অফিসারদের কাছে নেতৃত্ব ন্যস্ত করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ হাজার বছরের বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে উজ্জ্বল ও গৌরবময় অধ্যায়। আদর্শগতভাবে বাংলাদেশের ¯¦াধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সামরিক বাহিনীর জন্য অত্যন্ত মৌলিক এবং মুখ্য বিষয়। আপনাদের সব সময় লক্ষ্য রাখতে হবে, যাতে সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব ন্যস্ত হয় তাদেরই হাতে যারা দেশপ্রেমিক ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী।
তিনি বলেন, ‘আপনাদেরকে সব কিছুর ঊর্ধ্বে থেকে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিচার বিশ্লেষণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দেশপ্রেমিক যোগ্য নেতৃত্ব খুঁজে বের করতে হবে।
তিনি বলেন, আমি খুবই আনন্দিত যে- সেনাবাহিনীর অফিসারদের পদোন্নতির জন্য ট্রেস (ট্রেস-টার্বুলেটেড রেকর্ড এন্ড কমপারেটিভ ইভ্যুলুশন) এর মত একটি আধুনিক পদ্ধতির উপর জোর দেয়া হয়। যা কিনা পেশাগত দক্ষতার বিভিন্ন দিকের তুলনামূলক মূল্যায়ণ প্রকাশ করে।
সেনাবাহিনীর অফিসারদের পদোন্নতির জন্য সাতটি বিষয় বিবেচনায় নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণ বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে আপনারা যোগ্য ব্যক্তিকে পদোন্নতির জন্য নির্বাচন করছেন। পদোন্নতি প্রদানের সময় আপনাদের কতিপয় বিষয় বিশেষ বিবেচনায় নেয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। ’এই সাতটি বিষয় হল- মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস, নেতৃত্ব, পেশাগত দক্ষতা, মাঠের তৎপরতা বিচার, শৃঙ্খলা, সততা-বিশ্বস্ততা ও আনুগত্য, নিযুক্তিগত উপযোগিতা এবং গ্রহণযোগ্যতা।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটি সুশৃঙ্খল এবং শক্তিশালী সেনাবাহিনী দেশের গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এ জন্য যোগ্য, দক্ষ, কর্মক্ষম এবং দেশপ্রেমিক অফিসারদের হাতে এর নেতৃত্ব ন্যস্ত করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘নেতৃত্ব ন্যস্ত করতে হবে তাদের হাতে - যারা সুশিক্ষিত, কর্মক্ষম, সচেতন, বুদ্ধিমান এবং সর্বোপরি গণতন্ত্রকে সুসংহত করার জন্য দৃঢ় প্রত্যয়ের অধিকারী।’
একজন অফিসার কেবল একটি পদ বা নিযুক্তির জন্যই যোগ্য না হয়ে বরং বিভিন্ন প্রকার নিযুক্তি যেমন- কমান্ড, স্টাফ, প্রশিক্ষকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নিযুক্তির জন্য উপযুক্ত হন। বিভিন্ন পর্যায়ে তাদের শিক্ষা, মনোভাব, সামাজিকতা, চারিত্রিক বৈশিষ্ট নিরীক্ষা করেই পদোন্নতি প্রদান করতে হবে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদোন্নতির ক্ষেত্রে শৃঙ্খলার বিষয়টি অন্য কোন গুণাবলীর সাথে তুলনীয় নয়। শৃঙ্খলার সঙ্গে কোনো প্রকার আপোষ অবশ্যই বর্জনীয়।’
কেবল একাডেমিক ও কারিগরি জ্ঞানে দক্ষ হলে হবে না। মাঠে কর্মতৎপরতায় কর্মকৌশলী, ত্বরিত এবং দক্ষ হতে হবে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
সেনাবাহিনী বরাবরই সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এবং গুরুত্বপূর্ণ সময়ে গুরুদায়িত্ব পালন করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের শাসন আমলে যখনই প্রয়োজন হয়েছে তখনই সেনাবাহিনী জনগণের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
দেশের অভ্যন্তরের বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সেনা সদস্যদের ভূমিকা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের সেই কাজ জনগণের কাছে প্রশংসিত হয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী সুনাম পেয়েছে। দেশের যে কোনো সঙ্কটময় মুহূর্তে সেনাবাহিনী সর্বদা পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছে।
গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর সেখানে অভিযান চালিয়ে ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধারের ঘটনাও এ সময় তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘দক্ষ পরিকল্পনায় মাত্র ১২ মিনিটের মধ্যে এ অভিযান সম্পন্ন করায় আমি আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
দেশের বিভিন্ন স্থানে ফ্লাইওভার এবং ওভারপাসসহ সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে ‘অত্যন্ত সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে’ সম্পন্ন হচ্ছে বলে প্রধানমন্ত্রী প্রশংসা করেন।
এ সময় সেনাবাহিনীর জন্য নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও তিনি তুলে ধরেন।
বান্দরবানের রুমায় পূর্ণাঙ্গ সেনানিবাসের নীতিগত অনুমোদন দেয়া, কক্সবাজারের রামুতে সেনানিবাস স্থাপনের কাজ শুরু, নবগঠিত কম্পোজিট ব্রিগেডের আবাসনের লক্ষ্যে পদ্মা সেতুর দুই পাশে সেনানিবাস গড়ার প্রকল্পের কথাও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে সেনাবাহিনীর সকল পর্যায়ে প্রশিক্ষণের অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছে। ‘কঠিন প্রশিক্ষণ সহজ যুদ্ধ’ এই মূলমন্ত্রকে সামনে রেখে এবং একটি সুশিক্ষিত সেনাবাহিনী গড়ে তুলতে বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমিতে ২ বছরের পরিবর্তে ৩ বছরের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জেসিও এবং অন্যান্য পদবীর সৈনিকদের শিক্ষার মান বৃদ্ধি কল্পে উচ্চতর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। নোবাহিনীর চিকিৎসাসেবা আধুনিকায়নের জন্যে ঢাকা সিএমএইচ কে একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হাসপাতালে পরিণত করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজের আদলে বিভিন্ন সেনানিবাসে মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম চালু হয়েছে। কয়েকটি ডেন্টাল কলেজ এবং নার্সিং ইনস্টিটউট স্থাপনের পরিকল্পনাও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সেনানিবাসে বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি ও ‘আর্মি স্কুল অব বিজনেস এন্ড এ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ গঠন করা হয়েছে।
বর্তমান সরকার নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেনাবাহিনীতে মহিলা অফিসারের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক মহিলা সৈনিক ইতোমধ্যে তাদের প্রশিক্ষণ সফলতার সঙ্গে শেষ করে নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগদান করেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মহিলা অফিসারগণের মধ্যে অনেকেই স্টাফ কলেজ সম্পন্ন করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পাচ্ছেন।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূমিকার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ শীর্ষ সেনা প্রেরণকারী দেশ, যা পুরো জাতির জন্য বিরল সম্মান বয়ে আনছে। আমাদের সৈনিকদের শৃঙ্খলা, দক্ষতা ও কর্তব্যবোধে দৃঢ় মনোভাব বিশ্ব দরবারে প্রশংসিত হয়েছে।’
স্বাধীনতার আগে সামরিক ও বেসামরিক ক্ষেত্রে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের বৈষম্যের কথা এবং স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আধুনিক সেনাবাহিনী গড়ে তোলার কার্যক্রমের কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সমগ্র জাতি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। সেই মুক্তিযুদ্ধের সময়ই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্ম।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের যে কার্যক্রম শুরু করেছিলেন তার ধারাবাহিকতা আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কালে অব্যাহত ছিল এবং আছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর সেনাবাহিনীকে আরও কার্যক্ষম ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে নতুন পদাতিক ডিভিশন ও ব্রিগেড প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কোরের আধুনিকায়নের জন্য অত্যাধুনিক অস্ত্র ও সরঞ্জাম কেনা হয়।
দেশের সম্প্রতিক জঙ্গি হামলার প্রসংগ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী সেনাকর্মকর্তাদেরকে তাদের সন্তানদেরকে সময় দেয়ার পাশাপাশি তাঁদের কর্মকান্ড সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখার আহবান জানান। তিনি বাংলাদেশ সেনাাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত পিছিয়ে পড়া শিশুদের পরিচালিত স্কুল ‘প্রয়াস’র কর্মকান্ড সম্প্রসারণের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মুহাম্মদ শফিউল হক, মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ, সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লে. জেনারেল এম মাহফুজুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।