গতকাল জাদুঘর উদ্বোধন করেন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন। তালপাতায় লেখা রায়! তাও আবার কোনো মামলার রায়! এ কথা ডিজিটাল যুগের যেকোনো শিশু-কিশোরের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হতেই পারে। তবে বয়োবৃদ্ধরা বলবেন, আগে তো তালপাতায়ই লেখা হতো। তাঁদের কথার সত্যতা মিলবে সুপ্রিম কোর্ট জাদুঘরে। সেখানে স্থান পেয়েছে ৩০৪ বছর আগে ১৭১০ সালের একটি মামলার রায়। ওই রায় লেখা হয়েছে তালপাতায়। সংস্কৃত ভাষায় লেখা ওই রায়ের কপি সংগ্রহ করা হয়েছে পটুয়াখালী জেলা জজ আদালত থেকে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত প্রাঙ্গণে সুপ্রিম কোর্ট জাদুঘরের উদ্বোধন হয়েছে গতকাল সোমবার। আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করেছেন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন। এর মধ্য দিয়ে দেশে প্রথম বিচার বিভাগীয় জাদুঘরের যাত্রা শুরু হলো। গতকাল বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে আয়োজিত জাদুঘরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা ছাড়াও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অতিথিরা ঘুরে ঘুরে জাদুঘরে স্থান পাওয়া বিচার বিভাগীয় বিভিন্ন দলিল-দস্তাবেজ, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার নথি, পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টে ব্যবহৃত পুরনো আসবাবপত্র, হাতে লেখা বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানসহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র দেখেন। তবে সবার চোখ আটকে যায় তালপাতায় লেখা রায়ের কপির কাছে গিয়ে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘আমাদের বিচার বিভাগের ঐতিহ্য সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য এবং ঐতিহ্যকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে আরো অনুকরণীয় করে রাখার উদ্দেশ্যে এই সুপ্রিম কোর্ট জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এই আদালত জাদুঘর বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার ইতিহাসে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। এই জাদুঘর মানুষকে ইতিহাসমনস্ক হতে, দেশাত্মবোধে উদ্দীপ্ত হতে, আইনের শাসন ও মানবাধিকার সংরক্ষণে উদ্যোগী হতে সাহায্য করবে।’ বিচারপতি, প্রথিতযশা আইনজীবী এবং যাঁরা বেঁচে নেই তাঁদের পরিবারের সদস্যদের কাছে বিচারব্যবস্থার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো বস্তু বা উপাদান থাকলে তা জাদুঘরে দান করে এর সংগ্রহশালাকে সমৃদ্ধ করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান প্রধান বিচারপতি। অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতির হাতে ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার কার্যবিবরণীর (সাত খণ্ড) দলিল তুলে দেন হাইকোর্টের বিচারপতি ফরিদ আহমেদ। সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সুপ্রিম কোর্টের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম কুদ্দুস জামান। জাদুঘরে স্থান পেয়েছে ভারত বিভাগের পর পাকিস্তান (প্রভিশনাল সংবিধান) আদেশ ১৯৪৭ বলে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হওয়া হাইকোর্টে ব্যবহৃত বেশ কিছু সামগ্রী ও নথি। ঢাকা হাইকোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি কর্তৃক ব্যবহৃত পদমর্যাদাসূচক টুপি, পুরাতন টাইপরাইটার, দেয়াল ঘড়ি, পিতলের ট্রফি, চেয়ার, টেবিল, ড্রেসিং টেবিল, দাঁড়িপাল্লা ও বাটখারা, কলম ও নিব, রেপ্লিকা ইত্যাদি।