ঢাকা, মে ৫, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ০৮:৫২:৫৭

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

একীভূত হতে চাওয়া ব্যাংকের সম্পদের দাম যেভাবে নির্ধারণ করা হবে টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি বিএফইউজে’র দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিএনপির মাথাব্যথার কারণ নেই : ওবায়দুল কাদের বিএনপি একটি রাজনৈতিক দৈত্যের দল : পররাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তি বজায় রাখার জন্য যা-যা করার আমরা করবো: বান্দরবানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবারের ঈদ যাত্রাও স্বস্তিদায়ক হচ্ছে: সেতুমন্ত্রী কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট শিশুদের নতুন করে বাঁচার পথ খুলে দেয় : সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ আসন্ন পবিত্র রমজানে সরকারিভাবে বড় ইফতার পার্টি না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর পুলিশকে জনগণের বন্ধু হয়ে নিঃস্বার্থ সেবা দেয়ার নির্দেশ রাষ্ট্রপতির

সাহসী নির্বাচন কমিশন চান বিশিষ্টজনেরা

| ১৮ মাঘ ১৪২৩ | Tuesday, January 31, 2017

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে আলোচনার জন্য অনুসন্ধান কমিটির সদস্যরা গতকাল সুপ্রিম কোর্টের জাজেজ লাউঞ্জে ১২ জন বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গে মতবিনিময় করেন l ছবি: ফোকাস বাংলা

নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে দলনিরপেক্ষ, সাহসী, দক্ষ ও যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নাম প্রস্তাব করার সুপারিশ করেছেন বিশিষ্ট নাগরিকেরা। তাঁদের মত হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন হতে হবে বিতর্কের ঊর্ধ্বে, মেরুদণ্ড হতে হবে সোজা। যাতে চাপ কিংবা হুমকির মুখেও প্রভাবমুক্ত হয়ে তারা কাজ করতে পারে।

গতকাল সোমবার বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট জাজেস লাউঞ্জে অনুসন্ধান কমিটির কাছে এমন অভিমত তুলে ধরেছেন ১২ জন বিশিষ্ট নাগরিক। তবে কোনো পক্ষই কারও নাম প্রস্তাব করেনি কিংবা কাউকে নিয়ে আলোচনা করেনি।

বিশিষ্ট নাগরিকেরা রুদ্ধদ্বার কক্ষে তাঁদের মতামত তুলে ধরেন। বেরিয়ে এসে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ টি এম শামসুল হুদা, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে আবারও যোগাযোগ করা হয়।

পরে অনুসন্ধান কমিটির মুখপাত্র ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের মানদণ্ড নিয়ে বিশিষ্ট নাগরিকেরা কথা বলেছেন। সেগুলো রেকর্ড করা হয়েছে।

গত শনিবার অনুসন্ধান কমিটি ১২ বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গে মতবিনিময়ের সিদ্ধান্ত নেয়। একই দিন রাজনৈতিক দলের কাছে পাঁচজন করে ব্যক্তির নাম চাওয়া হয়। গতকাল পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল নাম জমা দেয়নি। আজ বেলা তিনটা পর্যন্ত নাম দেওয়া যাবে। এরপর বিকেল চারটায় অনুসন্ধান কমিটি বৈঠকে বসবে।

এদিকে আগামীকাল ১ ফেব্রুয়ারি আরও পাঁচজন বিশিষ্ট নাগরিককে মতামত দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে অনুসন্ধান কমিটি। তাঁরা হলেন সাবেক সিইসি মোহাম্মদ আবু হেনা, ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ, সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশিদ।

নতুন করে পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানানোর কারণ জানতে চাইলে অনুসন্ধান কমিটির দুজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে  বলেন, অনুসন্ধান কমিটির মনে হয়েছে, আইনজীবী, গণমাধ্যম প্রতিনিধি এবং সামরিক বাহিনীর সাবেক কোনো কর্মকর্তার মতামত নেওয়া উচিত। সে জন্যই নতুন করে পাঁচজনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আর আবু হেনাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে তাঁর পূর্ব অভিজ্ঞতার জন্য। তিনি ১৯৯৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সিইসির দায়িত্ব পালন করেন। অনুসন্ধান কমিটির সদস্যরা বলেন, তাঁরা একটা আস্থার পরিবেশ চান। একটি মেরুদণ্ডসম্পন্ন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে চান।

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত একাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এম সাখাওয়াত হোসেন, বদিউল আলম মজুমদার ও তোফায়েল আহমেদ অনুসন্ধান কমিটির কাছে লিখিত প্রস্তাব তুলে ধরেন। অন্যরা বক্তব্য দেন।

একাধিক বিশিষ্ট নাগরিক প্রথম আলোকে বলেছেন, তাঁদের সঙ্গে মতবিনিময়টা যেন অতীতের মতো শুধু আনুষ্ঠানিকতা না হয়। বিশিষ্ট নাগরিকদের সবার সুপারিশ মোটামুটি কাছাকাছি। সবার মতের সারমর্ম হচ্ছে, অনুসন্ধান কমিটি যাঁদের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবে, তাঁরা যেন দলনিরপেক্ষ হন। তালিকাটাও যেন সব রাজনৈতিক দলের কাছে মোটামুটি গ্রহণযোগ্য হয়। মোট কথা, দলনিরপেক্ষ, সাহসী ও যোগ্য ব্যক্তিদের নাম প্রস্তাব করতে হবে। প্রায় সবাই নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নের ওপর জোর দেন। এ সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বিশিষ্ট নাগরিকদের জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি আইন করার তাগিদ দিয়েছেন। আইনের একটি খসড়ার কাজ চলমান আছে।

সাংবাদিকদের যা বললেন

মতবিনিময় সভা থেকে বেরিয়ে এ টি এম শামসুল হুদা বলেন, এমন একটা কমিশন প্রস্তাব করা উচিত যেন প্রাথমিকভাবে মানুষের মনে আস্থার সৃষ্টি হয়। শুরুতেই যদি বিতর্ক সৃষ্টি হয়, তাহলে কমিশনের জন্য কাজ করা কঠিন হয়ে পড়বে। যাঁদের নাম সুপারিশ করা হবে তাঁদের ছাত্রজীবন, কর্মজীবন কিংবা এখন কোনো রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে জড়িত কি না, সেটা দেখতে হবে। এটাও নিশ্চিত করতে হবে যে তাঁরা কোনো দলের পদে ছিলেন না এবং নির্বাচনের জন্য কোনো দলের মনোনয়ন চাননি। পেশাগত কোনো সংগঠনের রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত নন।

শামসুল হুদা আরও বলেন, এমন ব্যক্তিদের বাছাই করা উচিত, যাঁরা ওই পদের জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন। তাঁদের হতে হবে সাহসী। নির্বাচন-সংক্রান্ত আইনগুলো তাঁরা যেন কঠোরভাবে পালন করতে পারেন।

সুলতানা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘মতবিনিময়ের মূল উদ্দেশ্য ছিল সার্চ কমিটির একটা ধারণা নেওয়া যে মানুষজন কোন ধরনের ব্যক্তিদের নির্বাচন কমিশনে দেখতে চায়। আমরা নির্বাচন কমিশনে এমন ব্যক্তিদের দেখতে চাই, যাঁরা একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবেন। যাঁরা মনে করবেন, এটা একটা বিরাট জাতীয় দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব যাঁরা সততা ও যোগ্যতার সঙ্গে পালন করতে পারবেন, সে রকম ব্যক্তিদের যেন সার্চ কমিটি খুঁজে পেতে পারে, সে জন্য সার্চ কমিটি আমাদের সঙ্গে বসেছে।’

অনুসন্ধান কমিটি নিয়ে আস্থার সংকট আছে কি না, জানতে চাইলে সুলতানা কামাল বলেন, ‘আস্থার সংকটটা কিন্তু বিভাজিত। কিছু মানুষের আস্থার সংকট আছে। কিছু মানুষের নেই। আস্থার সংকটের কাছে দাঁড়িয়ে থাকলে কখনো সামনে যেতে পারব না। আস্থার সংকট অনেকটা প্রশমিত হয়ে গেছে।’

সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘একবাক্যে সবাই এ কথা বলেছে যে একটি কার্যকর নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। সেই ধরনের ব্যক্তিদের বেছে নিতে হবে। যাঁদের কোনো রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। মানুষ আস্থায় আনতে পারে। আমরা কারও নাম প্রস্তাব করিনি। আমাদের কাছে নাম চাওয়াও হয়নি।’ পরে যোগাযোগ করা হলে সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে আরও বলেন, দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন, প্রশাসন চালানোর মতো দক্ষ এবং চাপ কিংবা হুমকিতে প্রভাবিত হবেন না—এমন ব্যক্তিদের নাম প্রস্তাব করার সুপারিশ করেছেন তিনি।

অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনারদের কী কী গুণ থাকা উচিত, সেটা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমরা কেউ কেউ বলেছি, এখনো আইন প্রণয়নের সুযোগ আছে। এই নির্বাচন কমিশন এক-দু মাস শূন্য থাকলে এমন কোনো সমস্যা হবে না।’

যোগাযোগ করা হলে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, তিনি অনুসন্ধান কমিটিকে আইন প্রণয়নের জন্য বলেছেন। ইসি গঠনে দেরি হলে সমস্যা নেই। কমিটির কাছে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেছেন, অনুসন্ধান কমিটি গঠনে ৩১টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপের প্রতিফলন নেই। এ ছাড়া বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে অতীতের মতবিনিময়ের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। তিনি সুপারিশ করেন, বিভিন্ন সূত্র থেকে যে নামগুলো অনুসন্ধান কমিটি পাবে, সেগুলো থেকে নির্ধারিত মানদণ্ডের আলোকে একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করে অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের সম্মতি নিয়ে জনগণের অবগতির জন্য তা প্রকাশ করতে হবে। একই সঙ্গে এই তালিকা নিয়ে গণশুনানির আয়োজন করতে হবে। এরপর রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করা নামের তালিকা জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে।