ঢাকা, মে ৫, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ০৬:৪৮:৩০

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

একীভূত হতে চাওয়া ব্যাংকের সম্পদের দাম যেভাবে নির্ধারণ করা হবে টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি বিএফইউজে’র দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিএনপির মাথাব্যথার কারণ নেই : ওবায়দুল কাদের বিএনপি একটি রাজনৈতিক দৈত্যের দল : পররাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তি বজায় রাখার জন্য যা-যা করার আমরা করবো: বান্দরবানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবারের ঈদ যাত্রাও স্বস্তিদায়ক হচ্ছে: সেতুমন্ত্রী কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট শিশুদের নতুন করে বাঁচার পথ খুলে দেয় : সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ আসন্ন পবিত্র রমজানে সরকারিভাবে বড় ইফতার পার্টি না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর পুলিশকে জনগণের বন্ধু হয়ে নিঃস্বার্থ সেবা দেয়ার নির্দেশ রাষ্ট্রপতির

সার্চ কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত

| ১৬ মাঘ ১৪২৩ | Sunday, January 29, 2017

কাল বিশিষ্ট ১২ নাগরিকের সঙ্গে মতবিনিময় মঙ্গলবার বেলা ১১টার মধ্যে পাঁচটি করে নাম দিতে হবে : দ্বিতীয় বৈঠক পরশু প্রথম বৈঠক শেষে শনিবার সুপ্রিমকোর্টের জাজেস লাউঞ্জ থেকে বেরিয়ে আসছেন সার্চ কমিটির সদস্যরা নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠনে ৩১ রাজনৈতিক দলের কাছে নাম চেয়েছে সার্চ কমিটি। আগামী মঙ্গলবার বেলা ১১টার মধ্যে দলগুলোকে পাঁচটি করে নাম দিতে বলা হয়েছে। একই উদ্দেশ্যে আগামী সোমবার বিকাল ৪টায় দেশের বিশিষ্ট ১২ নাগরিকের সঙ্গে মতবিনিময় করবে সার্চ কমিটি। শনিবার সার্চ কমিটির প্রথম বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, মূলত কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করতেই আজকের বৈঠক হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে ইসিতে নিবন্ধিত ৩১টি রাজনৈতিক দল সংলাপে অংশ নেয়। বঙ্গভবনে অনুষ্ঠিত সংলাপে অংশ নেয়া প্রতিটি দলকে পাঁচটি করে নাম দিতে বলা হয়। মঙ্গলবার বেলা ১১টার মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের (প্রশাসন ও বিধি) কাছে প্রস্তাবিত নাম জমা দিতে হবে। একই দিন বিকালে সার্চ কমিটি দ্বিতীয় দফায় বৈঠকে বসবে। এতে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে পাওয়া নাম নিয়ে আলোচনা হবে। যাচাই-বাছাই হবে নামের তালিকা। তাদের জীবন-বৃত্তান্ত নিয়ে পর্যালোচনা হবে। এতে পেশাগত জীবনের অস্বচ্ছতা বা অনিয়মে জড়িত ছিলেন কিনা, কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছিল কিনা- এসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে। এ ছাড়া তাদের নিরপেক্ষতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের সক্ষমতা আছে কিনা তাও দেখা হবে। এসব বিবেচনায় নিয়ে সার্চ কমিটি নামের তালিকা চূড়ান্ত করবে। সেই তালিকা রাষ্ট্রপতির হাতে তুলে দেয়া হবে। এরপর রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করবেন। এ পুনর্গঠিত ইসির অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
এ ছাড়া সোমবার বিকাল ৪টায় জাজেস লাউঞ্জে দেশের বিশিষ্ট ১২ নাগরিকের সঙ্গে মতবিনিময় করবে সার্চ কমিটি। বিশিষ্ট নাগরিকরা হলেন : বিচারপতি মো. আবদুর রশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এসএমএ ফায়েজ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ড. এটিএম শামসুল হুদা, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সাধারণ সম্পাদক ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. বদিউল আলম মজুমদার, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, শিক্ষাবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নুরুল হুদা।
শনিবার সুপ্রিমকোর্ট জাজেস লাউঞ্জে সার্চ কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টার বৈঠক শেষে বেলা ১টার দিকে ব্রিফ করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। তিনি বলেন, এই জাজেস লাউঞ্জেই আগামী সোমবার দেশের ১২ বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গে বসবেন সার্চ কমিটির সদস্যরা। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দিচ্ছে। আগামী মঙ্গলবার সার্চ কমিটি ফের বৈঠকে বসবে বলেও জানান মোহাম্মদ শফিউল আলম। বৈঠকের বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিফ করবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
সূত্র জানায়, প্রথম বৈঠকে আলোচনার শুরুর দিকে এক সদস্য বলেন, একটি রাজনৈতিক দল সার্চ কমিটির সদস্যদের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এ অবস্থায় কমিটি যদি নিজ উদ্যোগে নাম সংগ্রহ করে রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করে তাতে বিতর্ক আরও বাড়তে পারে। কাজেই রাজনৈতিক দলগুলোর কাছেই নাম চাওয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়। এ প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি দিয়ে অপর এক সদস্য বলেন, দলটি কমিটির ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য এসব কথা বলে থাকতে পারে। তবে চাপ কোনো সমস্যা নয়, বরং এটাকে ইতিবাচক হিসাবে নেয়া উচিত। কারণ তারা কমিটির কাছে নিরপেক্ষতা প্রত্যাশা করেই হয়তো চাপ সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। এ ধরনের বিস্তারিত আলোচনা ও কমিটির কর্মপন্থা নির্ধারণ শেষে রাজনৈতিক দলের কাছে নাম চাওয়ার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে নাম আসার পর সংশ্লিষ্টদের জীবনবৃত্তান্ত (সিভি) সংগ্রহ করা হবে। ইতিমধ্যে কেবিনেট সচিবকে তা সংগ্রহের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ৩১টি দল সংলাপে অংশ নিয়েছিল। প্রতিটি দল পাঁচটি করে নাম জমা দিলে মোট সংখ্যা দাঁড়াবে ১৫৫টি। এদের মধ্যে একই ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবে অনেক দল। এ ধরনের নামের একটি তালিকা তৈরি করা হবে। আর বাকি নামগুলো নিয়ে হবে আলাদা তালিকা। এদের জীবনবৃত্তান্ত পর্যালোচনা শেষে তালিকা সংক্ষিপ্ত করা হবে বলে জানা গেছে।  এভাবে কয়েক দফা বৈঠকের পর তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। যা বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যেই রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তর করা হবে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সার্চ কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা প্রথম দিনের বৈঠকেই গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সবচেয়ে ভালো নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে  নিরপেক্ষ, দক্ষ, দেশপ্রেমিক ১০ ব্যক্তির  নাম রাষ্ট্রপতির হাতে তুলে দেয়ার বিষয়টি এর মধ্যে অন্যতম। এজন্য কমিটি সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবে। দেশের মানুষ সার্চ কমিটির দিকে তাকিয়ে আছে। তারা কমিটির সদস্যদের কাছে ভালো কিছু প্রত্যাশা করছে। কমিটি জনগণের সেই প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যেই কাজ করছে।’ তিনি বলেন, কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতেও কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১২ বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গে মতবিনিময়ের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে এদের মত নেয়া হবে। এ প্রসঙ্গে বলা হয়, তারা যতক্ষণ বক্তব্য দিতে চান কমিটি পুরো সময় তাদের কথা শুনবে। এজন্য মতবিনিময় অনুষ্ঠানের জন্য সময় বেঁধে দেয়া হয়নি।  তিনি বলেন, বিশিষ্ট নাগরিকদের দেয়া মতামত গণমাধ্যমকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেয়া হবে। এ ছাড়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অনলাইনে প্রকাশ করা হবে। কমিটি বিভিন্ন সময় যেসব সিদ্ধান্ত নেবে তা ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে সংশ্লিষ্টদের। এ ছাড়া কমিটির সিদ্ধান্তের সঙ্গে অংশীদারিত্ব তৈরির (‘স্টেকহোল্ডারশিপ’) জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নাম চাওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে (৮ ফেব্রুয়ারি) কাজ শেষ করতে কমিটির সদস্যরা প্রয়োজনে প্রতিদিন বৈঠক করবেন।
সূত্র জানায়, বৈঠকে কমিটির এক সদস্য প্রয়োজনে বিশিষ্ট নাগরিকদের মতামত ও পরামর্শ নেয়ার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, বিশিষ্টজনদের ভাবনাটাও আমাদের জানা দরকার। প্রয়োজনে তাদের কাছ থেকেও নামের বিষয়ে মতামত নেয়া যেতে পারে। তখন বলা হয় তারা (বিশিষ্টজনরা) হয়তো নাম দেবেন না, কিন্তু যে মতামত দেবেন তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় কমিটির আরেকজন সদস্য বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো যে নাম দেবে তা অনেক। এসব নাম যাচাই-বাছাই করে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে আসা সহজ হবে।’
প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ গত ২৫ জানুয়ারি সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে এই সার্চ কমিটি গঠন করেন। কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে নতুন নির্বাচন কমিশনের জন্য নাম প্রস্তাবের দায়িত্ব দেয়া হয়। তাদের সুপারিশ থেকেই ইসি পুনর্গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি। কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসি নিয়োগে একই পদ্ধতি অনুসরণ করেছিলেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান। দশ কর্মদিবস পূর্ণ হবে ৮ ফেব্রুয়ারি। সার্চ কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক, মহা হিসাব নিরীক্ষক (সিএজি) মাসুদ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এবং চট্ট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক শিরীন আখতার।
কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশনের মধ্যে চারজনেরই মেয়াদ আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে। নির্বাচন কমিশনার মো. একেএম শাহনেওয়াজের মেয়াদ শেষ হবে ১৪ ফেব্রুয়ারি। তাই এর আগেই গঠন করতে হবে নতুন ইসি। সংবিধানে আইন প্রণয়ন এবং এই আইনের অধীনে ইসি নিয়োগের কথা বলা থাকলেও আজ পর্যন্ত আইনটি প্রণীত হয়নি। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি ইসি নিয়োগ দিয়ে আসছেন।
এবার ইসি নিয়োগের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ ৩১টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে টানা এক মাস সংলাপ করেন তিনি। গত ১৮ ডিসেম্বর বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসার মধ্য দিয়ে এই সংলাপ শুরু হয়। শেষ হয় ১৮ জানুয়ারি। সংলাপে অংশ নেয়া বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলই সংবিধান অনুযায়ী আইন প্রণয়নের দাবি জানান। সময় স্বল্পতার কারণে তা সম্ভব না হলে সার্চ কমিটি গঠনের পরামর্শ দেন তারা।
সার্চ কমিটি কাদের নাম দেয়, কাদের নিয়ে গঠিত হচ্ছে নতুন ইসি- এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও আগ্রহের শেষ নেই। যদিও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ইতিমধ্যে সার্চ কমিটিকে স্বাগত জানিয়েছে। বিএনপি এই কমিটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তারা বলছে, আওয়ামী লীগের পছন্দের লোকদের দিয়ে গঠন করা হয়েছে সার্চ কমিটি।