ঢাকা, মে ৩, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ০১:৩৪:৪০

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

একীভূত হতে চাওয়া ব্যাংকের সম্পদের দাম যেভাবে নির্ধারণ করা হবে টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি বিএফইউজে’র দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিএনপির মাথাব্যথার কারণ নেই : ওবায়দুল কাদের বিএনপি একটি রাজনৈতিক দৈত্যের দল : পররাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তি বজায় রাখার জন্য যা-যা করার আমরা করবো: বান্দরবানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবারের ঈদ যাত্রাও স্বস্তিদায়ক হচ্ছে: সেতুমন্ত্রী কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট শিশুদের নতুন করে বাঁচার পথ খুলে দেয় : সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ আসন্ন পবিত্র রমজানে সরকারিভাবে বড় ইফতার পার্টি না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর পুলিশকে জনগণের বন্ধু হয়ে নিঃস্বার্থ সেবা দেয়ার নির্দেশ রাষ্ট্রপতির

সাংবাদিকদের আরও দায়িত্বের সঙ্গে কার্য সম্পাদনের আহবান প্রধানমন্ত্রীর

| ৭ কার্তিক ১৪২৩ | Saturday, October 22, 2016

ঢাকা: গণমাধ্যম এবং সাংবাদিকদের কল্যাণের জন্য সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সাংবাদিকদের আরো দায়িত্বের সঙ্গে কার্য সম্পাদনের আহবান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনি সুবিধা ভোগ করবেন অথচ দায়িত্ব পালন করবেন না, এটা হতে পারে না। দেশের প্রতি সকলের একটা দায়িত্ব থাকে, কর্তব্য থাকে। সমাজের প্রতি দায়িত্ব থাকে, কর্তব্য থাকে। সেই দায়িত্বটাও পালন করতে হয়।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে নতুন ভবন ৩১ তলা বঙ্গবন্ধু মিডিয়া কমপ্লেক্সের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
দিনটি জাতীয় প্রেসক্লাবের ৬২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে- তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রীর মিডিয়া উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, এডিটরস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার এবং প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী বক্তৃতা করেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি (বিএফইউজে) মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।
মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সম্পাদক এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সিনিয়র সাংবাদিকবৃন্দসহ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের কল্যাণে সরকারের গৃহিত বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার গঠনের পর থেকেই কিভাবে সাংবাদিকদের সহযোগিতা করা যায় সেই প্রচেষ্টা আমাদের রয়েছে। সেই ’৯৬ সাল থেকেই সে প্রচেষ্টা করে যাচ্ছি। এজন্য সাংবাদিকদের কল্যাণে অনেকগুলো আইন আমরা করেছি। তথ্য অধিকার আইন আমরা করে দিয়েছি। তথ্য কমিশন করে দিয়েছি। সিড মানি দিয়ে সাংবাদিকদের জন্য কল্যাণ টাস্ট আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এভাবে ১৮টি আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন ও সংস্কার আমরা করে দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনি সুবিধা ভোগ করবেন অথচ দায়িত্ব পালন করবেন না, এটা হতে পারে না। দেশের প্রতি সকলের একটা দায়িত্ব থাকে, কর্তব্য থাকে। সমাজের প্রতি দায়িত্ব থাকে, কর্তব্য থাকে। সেই দায়িত্বটাও পালন করতে হয় এবং সংবাদপত্রকে আমরা সেবাশিল্প খাত হিসেবে ঘোষণা করেছি। আমরা ইতোমধ্যে ৮ম ওয়েজবোর্ড ঘোষণা করেছি। এরপরেতো আরো দাবি আছে করার জন্য।’
তিনি বলেন, আমাদের দেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যিনি সংবাদপত্রের মালিক হন তিনিই সম্পাদক হয়ে যান। তাই মালিকানাটা যেহেতু নিজের হাতে থাকে সেখানে সাংবাদিকতার সুযোগটা কিছুটা বাধাগ্রস্থ হয় এতে কোন সন্দেহ নাই। যে কারণে আমি সব সময় বলে থাকি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা না সাংবাদিকতার স্বাধীনতা।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ কিন্তু এখন যথেষ্ট পরিমাণ সাংবাদিকতার স্বাধীনতা আছে। যদিও আমাদের প্রতিপক্ষ বিশ্ববাপী প্রচার করে বেড়ায় যে, দেশে সাংবাদিকতার কোন সুযোগ নাই, স্বাধীনতা নাই। অনেক সময় অনেকে এই বিষয়ে আমাকে এই বিষয়ে প্রশ্নও করে তখন আমি বলি স্বাধীনতা যদি নাই থাকে তাহলে এই কথাটা বলার স্বাধীনতা তারা কোথা থেকে পেল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ৭ বছরে নিবন্ধন দেয়া পত্রিকার সংখ্যা প্রায় সাড়ে সাত শতাধিক। বর্তমানে দেশে বেসরকারি খাতে অনুমোদন প্রাপ্ত স্যাটেলাইট চ্যানেলের সংখ্যা ৩১টি। সম্প্রচাররত চ্যানেলের সংখ্যা ২৬টি। এরপর রেডিও রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, এসব চ্যানেলে যে টকশোগুলো হয় সেগুলো শুনলে কে বলবে যে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নাই বা সাংবাদিকতার স্বাধীনতা নাই।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এমন একটি সংগঠন যে সংগঠন গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে এবং গণমানুষের অধিকার আদায়ের জন্য একদম তৃণমূল থেকে এই সংগঠনটা গড়ে উঠেছে। দীর্ঘ সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে নির্বাচনের মাধ্যমেই আওয়ামী লীগ সরকারে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্ভাগ্য হল এমন কিছু দলের সঙ্গে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয় যে দলগুলো মাটি ও মানুষের মধ্য থেকে গড়ে ওঠেনি। তারা সৃষ্টি হয়েছে-কোন একদিন আমরা টেলিভিশন খুলে দেখতে পেলাম কেউ একজন ঘোষণা দিচ্ছেন, আজ থেকে আমি রাষ্ট্রপতি হলাম। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল এবং মার্শাল ল’ দিয়ে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা। পচাত্তরে জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে এদেশে এভাবেই হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের আর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের রাজনীতি চলেছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতায় এসেই তারা (স্বৈর শাসকেরা) প্রথম বক্তৃতায় বলে, তারা কোন রাজনৈতিক উচ্চাভিলাস নিয়ে আসেনি বরং দেশটা সঠিকভাবে চলছে না, সেটাকে সঠিকভাবে চালাতেই তারা ক্ষমতায় এসেছে। এরপর তারা রাজনীতিকদের গালি টালি দিয়ে আরম্ভ করলেও নিজেরোই পরে রাজনীতিবিদ সেজে যায়। নিজেরা রাজনৈতিক দল গঠন করে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার কাজে লেগে যায়।
তিনি বলেন, জেনারেল আইয়ুব খান, জিয়া এরশাদ সকলেই এই পদাংক অনুসরণ করেই চলেছে। অর্থাৎ ক্ষমতায় বসে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে যে দল সৃষ্টি হয় তা মানুষের আর কতটুকু কল্যাণ করেতে পারে। তারা পারে কেবল নিজেদের আখের গোছাতে।
প্রধানমন্ত্রী জাতীয় প্রেসক্লাব প্রসঙ্গে বলেন, ‘আপনারা জানেন- আমাদের প্রেসক্লাবে দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। সেই ইতিহাসের সঙ্গে জাতির পিতার সম্পৃক্ততা ছিল। আমিও একজন সাংবাদিক পরিবারেরই সদস্য। কারণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেহাদ পত্রিকার তৎকালীন পূর্ববঙ্গের প্রতিনিধি ছিলেন। বঙ্গবন্ধু তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে এ সম্পর্কে অনেক কথাই লিখেছেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৫৪ সালে আওয়ামী লীগ মেজরিটির যুক্তফ্রন্ট সরকার ১৮, তোপখানা রোডের লাল দোতলা ভবনটি (বর্তমান স্থানের আগের অবকাঠামো এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন ক্ষতিগ্রস্ত) ‘পূর্ব পাকিস্তান প্রেসক্লাব’ এর নামে বরাদ্দ দেন। ২০ অক্টোবর সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ দেখা করেন যুক্তফ্রন্ট সরকারের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। ওই বৈঠকে তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও উপস্থিত ছিলেন। এভাবেই প্রতিষ্ঠিত হয় দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার প্রথম জাতীয় প্রেসক্লাব। আর আজ ৬২ বছর পরে সেই জমিতেই প্রেসক্লাবের আধুনিক ভবন নির্মাণ হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার প্রেসক্লাবে আগমনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ১৯৭২ সালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রথম বার্ষিক সাধারন সভায় জাতির পিতা তাঁর ভাষণে বলেছিলেন, ‘গণতন্ত্রের একটা নীতিমালা আছে। সাংবাদিকতারও একটা নীতিমালা আছে। এ দুটো মনে রাখলে আমরা অনেক সমস্যা সমাধান করতে পারব।’
প্রেসক্লাবের জায়গাটিও সাংবাদিদের জন্য চুড়ান্ত বরাদ্দ প্রদানে বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরে প্রেসক্লাবে নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানানো হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তিনি আমন্ত্রণ গ্রহণও করেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বলেন, তিনি খালি হাতে প্রেসক্লাবে আসবেন না, জমি বরাদ্দের চূড়ান্ত কাগজ নিয়েই তবে তিনি আসবেন।
বঙ্গবন্ধু তনয়া বলেন, নানা প্রক্রিয়া শেষে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু লিখিতভাবে প্রেসক্লাবে জমির চূড়ান্ত লিজ বরাদ্দ দেন। কিন্তু পচাত্তরের আগস্টে নির্মমভাবে জাতির জনকের হত্যাকান্ডের ফলে ওই জমি আর তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবকে হস্তান্তর করতে পারেননি। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর থেমে যায় নতুন জমিতে ক্লাব ভবন নির্মাণের সমস্ত প্রক্রিয়া।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য অনুদান নিয়ে বড় মিডিয়া হাউজগুলোর এগিয়ে না আসায় অসন্তষ প্রকাশ করে বলেন, আমি চিরদিন থাকবো না। কিন্তু সাংবাদিকদের জন্য স্থায়ী কিছু করে দিয়ে যেতে চাই। যাতে কর্তব্য পালনকালে বা অবসরকালিন সাংবাদিকেরা অসুস্থ হলে বা অসুবিধায় পড়লে এই ফান্ড তাদের কাজে আসে। এ সময় সকলকে সহযোগিতার মানসিকতা নিয়ে তিনি এগিয়ে আসারও আহবান জানান।
এরআগে প্রেসক্লাব চত্বরে প্রবেশ করেই প্রধানমন্ত্রী কমপ্লেক্সের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন।
উল্লেখ্য, পুরো ২ দশমিক ০৬ একর জমি নিয়ে প্রেসক্লাব বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স-এর নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে। ভবনটি আয়তকার প্রতি তলার আয়তন ১৯,৮০০ বর্গফুট। প্রথম ১০ তলা সম্পূর্ণ প্রেসক্লাব এবং মিটিং, কনফারেন্সের ভাড়ার জন্য ব্যবহার হবে। ১১ তলা থেকে ২৮ তলা পর্যন্ত বিভিন্ন সংবাদপত্র, দেশী বিদেশী সংস্থা, টিভি, রেডিও জন্য ভাড়া দেয়া যাবে। ২৯ তলা থেকে ৩১তলা পর্যন্ত হেলথ ক্লাব, সুইমিংপুল, জিমনেসিয়াম ইনডোর গেমস, গেস্ট হাউস, ডাইনিং হল সিনেপ্লেক্স ইত্যাদির জন্য বরাদ্দ। ভূমিকম্প সহায়ক নির্মাণ শৈলীর প্রয়োগে নির্মাণধীন কমপ্লেক্সটির পুরো ওপেন স্পেসে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করে এক লেভেল উপরে প্লাজার সৃষ্টি করা হয়েছে,সামনে সৌন্দর্য বর্ধনে রাখা হয়েছে ঝর্ণা। ৩১তলা ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হলে পূর্বদিকের চারতলা এনেক্স ভবন নির্মাণ করে নামাজের ঘর, ইউনিয়ন অফিস, ভাড়ার জন্য ছোট বড় মিটিং রুমসমূহ শিফট করা হবে। বর্তমানে প্রেসক্লাবে যে সব গাছ রয়েছে, ডিজাইনের ক্ষেত্রে সে সমস্ত গাছ যথাসম্ভব না কেটে বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এ ছাড়াও ডিজাইনে পুরো কমপ্লেক্স এলাকায় সবুজ গাছপালা রয়েছে।