ঢাকা, মে ৬, ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ১২:৪৬:৫৩

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

একীভূত হতে চাওয়া ব্যাংকের সম্পদের দাম যেভাবে নির্ধারণ করা হবে টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি বিএফইউজে’র দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিএনপির মাথাব্যথার কারণ নেই : ওবায়দুল কাদের বিএনপি একটি রাজনৈতিক দৈত্যের দল : পররাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তি বজায় রাখার জন্য যা-যা করার আমরা করবো: বান্দরবানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবারের ঈদ যাত্রাও স্বস্তিদায়ক হচ্ছে: সেতুমন্ত্রী কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট শিশুদের নতুন করে বাঁচার পথ খুলে দেয় : সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ আসন্ন পবিত্র রমজানে সরকারিভাবে বড় ইফতার পার্টি না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর পুলিশকে জনগণের বন্ধু হয়ে নিঃস্বার্থ সেবা দেয়ার নির্দেশ রাষ্ট্রপতির

সমালোচনাকারীদের শিক্ষার মানোন্নয়নে এগিয়ে আসার আহবান প্রধানমন্ত্রীর

| ১৭ পৌষ ১৪২৩ | Saturday, December 31, 2016

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপনকারীদের শিক্ষার মানোন্নয়নে এগিয়ে আসার অহবান জানিয়ে বলেছেন, কোন কিছুই রাতারাতি পরিবর্তন সম্ভব নয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তাদের উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই-কোন কিছুই রাতারাতি পরিবর্তন সম্ভব নয়। আগে তারা (সামালোচকবৃন্দ) ভলান্টারি সার্ভিস দিন, সুবিধা বঞ্চিতদের জন্য কিছু করুন, শিক্ষা দিন। তারপর কথা বলুন।
তিনি সমালোচকদের কাছে এ প্রশ্ন রাখেন, শিক্ষার মানের মাত্রাটা আসলে কী?
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে এক অনুষ্ঠানে সাধারণ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ২০১৭ শিক্ষাবর্ষে বিভিন্নস্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নতি একদিনে সব হয়ে যায় না। সেজন্য কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আমরা চাই সব ছেলে-মেয়ে পরীক্ষা দেবে, এ জন্যই পঞ্চম-অষ্টম শ্রেণীতে পিইসি এবং জেএসসি পরীক্ষার ব্যবস্থা। অথচ এই দুই পরীক্ষা নিয়েও অনেকে কথা বলেন।
পিইসি-জেএসসির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ভীতি কমছে মত দিয়ে তিনি বলেন, এতে করে তাদের মধ্যে সাহস জন্মাচ্ছে। দিন দিন রেজাল্টও ভালো হচ্ছে, পাসের হারও বাড়ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা সময় ছিল যখন ক্লাস থেকে কিছু ছেলে-মেয়ে বেছে নিয়ে, তাদের প্রস্তুত করা হতো বৃত্তি পরীক্ষার জন্য। তাদের ভালো টিফিন দেয়া হতো, সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা সেটি পেতো না। বৃত্তির জন্য শিক্ষকরা যাদের বাছাই করলেন না, তাদের মধ্যেও তো মেধাবী থাকতে পারে। কেউ বৃত্তি পাবে, বাকিরা বঞ্চিত থাকবে- এই পদ্ধতি ঠিক করতেই পঞ্চম শ্রেণি ও অষ্টম শ্রেণিতে পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে’- যোগ করেন শেখ হাসিনা।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। শিক্ষা সচিব মো. সোহরাব হোসেইন অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষাকে দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রধান হাতিয়ার উল্লেখ করে বলেন, তার সরকার এ লক্ষ্য অর্জনে বদ্ধপরিকর। পাশাপাশি জেন্ডার সমতা অর্জনেও কাজ করছে আওয়ামী লীগ সরকার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে সত্যই একটি আনন্দের দিন। আজ আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিয়েছি। আপনারা জানেন আমরা সরকার গঠনের পর থেকেই মানুষের মৌলিক অধিকার সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। কারণ, আমরা বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আর সেই দারি¤্র মুক্তি ঘটবে যদি আমরা সকলকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে পারি। শিক্ষাই হচ্ছে দারিদ্র্য মুক্তির মূল ভিত্তি, যেটা আমি মনে করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত আমরা ২শ ৪৩ কোটি পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করেছি। এ বছরও ৩৬ কোটি ২১ লাখ ৮২ হাজার ২৪৫ খানা বই প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্থরের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতগুলো একসঙ্গে ছাপানো এবং বিতরণ করা একটি বিশাল ব্যাপার। এমনকি ২০১৪, ২০১৫ এবং ২০১৬ বিএনপির আগুন সন্ত্রাসের মাঝেও আমরা জানুয়ারি মাসের প্রথম দিনটিতেই সারাদেশের শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিতে সমর্থ হয়েছিলাম।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী তাঁর এই উদ্যোগ ব্যর্থ করার জন্য ছাপাখানা পুড়িয়ে দেয়াসহ নানাবিধা ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করেন।

শিক্ষার উন্নয়নে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার জনগণের মৌলিক অধিকার হিসেবে সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্য স্থির করেছে।
দেশকে দারিদ্রমুক্ত করার জন্য শিক্ষাকে ‘মূলভিত্তি’ হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই লক্ষ্য অর্জনে তাঁর সরকার শিক্ষার আরো উন্নয়নে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা অশিক্ষামুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে চাই এবং এর লক্ষ্য হচ্ছে দারিদ্র ও ক্ষুধামুক্ত দেশ গড়ে তোলা। যদি আমরা সকল লোকদের সুশিক্ষিত করে তুলতে পারি তা হলে এই লক্ষ্য অর্জিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী প্রাইমারি এডুকেশন কমপিটিশন (পিইসি) ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা অনুষ্ঠানে পক্ষে পুনরায় তাঁর অবস্থান তুলে ধরে বলেন, এ ধরনের পরীক্ষা উচ্চতর পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য শিশুর আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে।
তিনি বলেন, শিক্ষায় আগ্রহী করে তুলতে শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির জন্য আমি বার বার পিইসি ও জেইসি পরীক্ষার আয়োজনের পক্ষে মতামত দিয়েছি এবং এতে জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে, আমি মনে করি এটা খুব জরুরি।
তিনি বলেন, শিক্ষকরা এই বৃত্তি পরীক্ষার্থীদের প্রতি মনোযোগী হতেন যাতে তারা বৃত্তি পায় কিন্তু অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি নজর দেয়ার সুযোগ পেতেন না। কেন এসব ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের শিক্ষার ব্যাপারে যথাযথ মনোযোগের সুযোগ পাবেন না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা এসএসসি ও এইচএসসি’র মতো উচ্চতর পাবলিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের ভয় ও আতঙ্ক দূর করতে সহায়তা করছে।
তারা যখন এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় সরাসরি অংশ নিত তারা ভয়াতুর ও নার্ভাস হয়ে পড়তো এবং তাদের অভিভাবকরা আরো বেশি নার্ভাস হয়ে পড়তেন।
২০১০ সালের পর থেকে গত ৭ বছরে ২২৫.৪৩ কোটি পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বে অন্যকোন দেশ নেই এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পেরেছে।
‘এই বিপুলসংখ্যক পাঠ্যপুস্তক ছাপা ও বিতরণ একটি বিশাল ঘটনা এবং আমি এই কাজে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিশুরা যখন নতুন বই গ্রহণ করে তখন তারা ভিন্ন ধরনের এক আনন্দের অনুভুতি লাভ করে। তারা যখন নতুন বই পায় তারা পড়াশোনায় আগ্রহী হয়ে ওঠে।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম এবং ইকবাল সোবহান চৌধুরী, মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এবং অন্যান্য সচিব ও সিনিয়র কর্মকর্তাবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ আগামীকাল ১ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টায় আজিমপুর গর্ভমেন্ট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে ‘জাতীয় পাঠ্যপুস্তক উৎসব-২০১৭’র মূল অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন।
রাজধানীর ৩১টি স্কুলের ৫ হাজারের বেশী ছাত্র-ছাত্রী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
ন্যাশনাল কারিকুলাম অ্যান্ড টেক্সট বুক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা এর আগে বাসসকে বলেছেন, ২০১৭ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে সরকার বিনামূল্যে ৩৬,২১,৮২,২৪৫ কপি পাঠ্যবই বিতরণ করবে।
তিনি বলেন, দেশব্যাপী প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, ইফতেদায়ী, দাখিল, দাখিল ভোকেশনাল, এসএসসি ভোকেশনাল, ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্ঠী এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ৪,২৬,৩৫,৯২৯ জন ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে বিনামূল্যে এই পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হবে।
এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, প্রথমবারের মতো সৃজনশীল প্রশ্নপত্র পদ্ধতির জটিলতা নিরসনে শিক্ষকদের জন্য গাইডলাইন সরবরাহ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রাথমিকের শিক্ষকদের জন্য ৬০,০১,০২৪টি ও মাধ্যমিকের শিক্ষকদের জন্য ৪৬,৬৬,৬৬৪টি গাইড বই তৈরি করা হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, ২০১৬ শিক্ষাবর্ষে প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, এবতেদায়ী, মাধ্যমিক দাখিল এবং কারিগরি শিক্ষায় ৪,৪৪,১৬,৭২৮ জন ছাত্র-ছাত্রীর মাঝে ৩,৩৩,৭৬২,৭৭২টি পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হয়েছে।
এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, ৮ বছরে পাঠ্যপুস্তক বিতরণে ৫৬৫৮ দশমিক ৮৬ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।