প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, খালেদা জিয়া আন্দোলনের নামে সাধারণ মানুষ হত্যা করছেন। তিনি মানুষের রক্ত নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন। এটা কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। তার কর্মকা-ের শাস্তি তাকে পেতেই হবে। ঘরে বসে আন্দোলন করছেন। আন্দোলনের নামে নিজেই নিজেকে অবরুদ্ধ করে রাখছেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার আশা ছিল, কেউ এসে ক্ষমতা নিয়ে তাকে বসাবে। কিন্তু তারা সাহস পায়নি। বিদেশীদের উপর তার আশা ছিল, কিন্তু তারা বলেছে, জঙ্গীদের সঙ্গে কোনো আপস নয়। তাহলে খালেদা জিয়ার সঙ্গে আছে কে? আছে সন্ত্রাসী। সন্ত্রাসী-জঙ্গি নেত্রীর স্থান বাংলাদেশে হবে না। খুনি খালেদাকে শাস্তি পেতেই হবে। ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। খালেদা জিয়ার উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনি দুর্নীতি করেছেন। তাই মামলা হয়েছে। আত্মবিশ্বাস থাকলে মামলা মোকাবিলা করেন। ওনার অবস্থা চোরের মন পুলিশ পুলিশ। আর এ কারণে তিনি আদালতে যান না। বিভিন্ন অজুহাত খোঁজেন। বিএনপির আন্দোলনে দেশের মানুষের সাড়া নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির নেত্রী অফিসে বসে আছেন। অফিসে বসে বিপ্লব করছেন। হরতাল-অবরোধ ডাকছেন। তার এই আন্দোলনে কেউ সাড়া দিচ্ছে না। স্বাধীনতাযুদ্ধে পরাজিত শক্তির দোসররা আজকে মানুষের ওপর হামলা করে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, কোনো জঙ্গীবাদের স্থান এ দেশে নেই। কেউ এ ধরনের কর্মকা- করলে তার শাস্তি পেতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির নেত্রীর অনেক আশা ছিল, বিদেশ থেকে কেউ এসে তাকে ক্ষমতায় বসাবেন। কিন্তু কেউ আসেননি। উল্টো বিদেশীরা খালেদা জিয়াকে মানুষ খুন বন্ধ করতে বলেছেন। জঙ্গী কর্মকা- বন্ধ করতে বলেছেন। জঙ্গীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলার মাটিতে জঙ্গী নেত্রীর স্থান নেই। বঙ্গবন্ধুর ৭ ই মার্চের ভাষণ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ ই মার্চের ভাষণের পর দেশের আপামর জনসাধারণ স্বাধীনতাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। দীর্ঘ নয় মাস পাকিস্তান ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলার জনগণকে বলবো, এই জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। জঙ্গীবাদের কোনো স্থান বাংলার মাটিতে হবে না। তিনি বলেন, প্রতিটি এলাকার মানুষের উপর ১৯৭১ সালে পরাজিত ইয়াহিয়ার চামচারা হামলা চালাচ্ছে। সাধারণ মানুষের উপর হামলা হচ্ছে। এরা কারা আপনারা জানেন। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলার মানুষকে হত্যা বরদাশত করা হবে না। খালেদার নামে শুধু দুর্নীতির মামলা নয়, মানুষ পুড়িয়ে হত্যার মামলাও হয়েছে। তার বিচার বাংলার মানুষ করবেই। খালেদা জিয়া অফিসে বসে হুকুম দিয়ে মানুষ হত্যা করছেন। যারা খালেদা জিয়ার মানুষ হত্যাকে প্রকেটশন দেয়ার চেষ্টা করবে, তারাও সমান অপরাধী। তাদেরও বিচারের আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, কি অপরাধ করেছে এদেশের মানুষ? কি অন্যায় এদেশের মানুষের? ৪৬ জন মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। কেন এই ধ্বংসযজ্ঞ? মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি সহ্য করা হবে না। বিএনপি নেত্রী দেশের মানুষের শান্তি দেখতে পারেন না। এক বছর বাংলাদেশের মানুষ শান্তিতে ছিল। বিএনপি নেত্রী আবার মানুষ হত্যা ও জ্বালাও-পোড়াও শুরু করেছেন। তিনি হরতাল ডাকেন, অবরোধ ডাকেন। তার কথা এখন কেউ শোনে না। জঙ্গীনেত্রীর নির্দেশ বাংলাদেশের মানুষ না মানায় আমি বাংলাদেশের মানুষকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি বলেন, একাত্তরের পরাজিত শক্তির দোসররা আবার বাংলাদেশের মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে পেট্রোলবোমা মেরে সাধারণ মানুষ, শ্রমজীবী ও খেটে খাওয়া মানুষকে হত্যা করছে। যারা বোমা মারছে, মানুষ মারছে তারা প্রত্যেকে হয় ছাত্রদল, না হয় বিএনপি, না হয় শিবির, না হয় যুবদলের। এদের মানুষ চেনে। অনেকে এটা ঢাকার চেষ্টা করছেন, কিন্তু এটা ঢাকার বিষয় নয়। যারা তাদের ঢাকার চেষ্টা করবে, রক্ষা করার চেষ্টা করবে তারাও সমান দোষী হবে। শেখ হাসিনা বলেন, বিদেশী শক্তির মদদ পাবেন বলে বিএনপি চেয়ারপারসন আশা করলেও তার সে আশা পূরণ হয়নি। হবেও না। সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ, সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম প্রমুখ।
বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর ফুলেল শ্রদ্ধা
ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন। দিবসটি উপলক্ষে গতকাল ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর আওয়ামীলীগ সভানেত্রী হিসাবে দলীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে দ্বিতীয়বার বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শেখ হাসিনা। এরপর দলের অঙ্গ-সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের পক্ষ থেকে সংগঠনগুলোর নেতারা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এর আগে গতকাল ভোরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এক অনন্য দিন ৭ই মার্চের কর্মসূচি শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়সহ সারাদেশে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। দেশের ঐতিহাসিক দিবসটি পালনের জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি নেয়া হয় এবং বাংলাদেশ বেতার, টেলিভিশন ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে দিবসটি উপলক্ষে। ৭ই মার্চ উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো.আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে বাঙালির ইতিহাসের এই গৌরবময় অধ্যায়টি স্মরণ করেন। বাণীতে প্রেসিডেন্ট বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ এ জাতির প্রেরণার চিরন্তন উৎস হয়ে থাকবে। ঐতিহাসিক সেই ভাষণ এদেশের গণমানুষকে গভীরভাবে আন্দোলিত করে এবং তাদেরকে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে বিপুলভাবে উদ্বুদ্ধ করে। পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্বে বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণে বাংলার গণমানুষের প্রাণের দাবি ধ্বনিত হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, এই ভাষণে বাঙালির প্রতি পাকিস্তানি শোষকগোষ্ঠীর হত্যা-নিপীড়ন-নির্যাতনের চিত্র মূর্ত হয়ে ওঠে। ওই ভাষণের পর গোটা জাতি মহান মুক্তিযুদ্ধের দিকে ধাবিত হয়।