ঢাকা, এপ্রিল ২৭, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ০১:৪৯:১৯

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

একীভূত হতে চাওয়া ব্যাংকের সম্পদের দাম যেভাবে নির্ধারণ করা হবে টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি বিএফইউজে’র দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিএনপির মাথাব্যথার কারণ নেই : ওবায়দুল কাদের বিএনপি একটি রাজনৈতিক দৈত্যের দল : পররাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তি বজায় রাখার জন্য যা-যা করার আমরা করবো: বান্দরবানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবারের ঈদ যাত্রাও স্বস্তিদায়ক হচ্ছে: সেতুমন্ত্রী কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট শিশুদের নতুন করে বাঁচার পথ খুলে দেয় : সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ আসন্ন পবিত্র রমজানে সরকারিভাবে বড় ইফতার পার্টি না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর পুলিশকে জনগণের বন্ধু হয়ে নিঃস্বার্থ সেবা দেয়ার নির্দেশ রাষ্ট্রপতির

সংখ্যালঘু নির্যাতন প্রতিরোধে দৃঢ় প্রত্যয় বিভিন্ন মহলে নিন্দার ঝড়, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাত দফা

| ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪২২ | Friday, June 5, 2015

 

সূত্র-ইত্তেফাক রিপোর্ট

দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা-নির্যাতন ও সহিংসতার ঘটনায় সময় ক্ষেপণ না করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। এ লক্ষ্যে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুত বিচার আইনে সহিংসতার মামলা পরিচালনার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এ দাবি জানানো হয়।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে স্বাধীনতা লাভের চার দশক পরও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা নিন্দনীয় ও ন্যক্কারজনক। দেশের বিভিন্ন স্থানে যে ধরনের নাশকতা চালানো হচ্ছে তা বন্ধে শুরু থেকেই বিভিন্ন মহলের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হচ্ছে। কিন্তু এর প্রতিকার পাওয়া যায়নি। তাই এখন আর নিন্দা নয়, কোনো সহানুভূতি নয়। অসাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

ফরিদ উদ্দিন বলেন, জামায়াত-শিবির সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে দিচ্ছে। তারা দেশকে ধবংসস্তূপে পরিণত করতে চায়। যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর রায়ের পর থেকেই তারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। দেশ বিরোধীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।

অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, সংখ্যালঘু শ্রেণির উপর হামলাকারীরা একাত্তরের ঘাতকদের মতই হামলা করছে। স্থানীয় প্রশাসন সহিংসতা রোধে এখন পর্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। এ হামলা প্রতিরোধ ও দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। হামলাকারীদের রাজনৈতিকভাবেও প্রতিহত করা প্রয়োজন। নইলে তারা বার বার বিষাক্ত ছোবল দিবে।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামালের পরিচালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক কামাল উদ্দিন, আওয়ামী লীগ সমর্থিত শিক্ষকদের প্লাটফর্ম নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক আব্দুল আজিজ, অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী, শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক জিয়াউর রহমান, শিক্ষক সমিতির সদস্য অধ্যাপক লুত্ফর রহমান, অধ্যাপক এ জে শফিউল আলম ভুঁইয়া প্রমুখ।

এদিকে শেরপুর, জামালপুর ও পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন, নিপীড়ন ও হামলাকারীদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে বিভিন্ন আদিবাসী ছাত্র সংগঠন। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন (বাগছাস), বগারো স্টুডেন্ট ইউনিয়ন (গাসু), পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এ মানববন্ধনের আয়োজন করে।

বাগছাস’র ঢাকা মহানগর সভাপতি সবুজ নকরেটের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি জুয়েল চাকমা, আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অনন্ত ত্রিপুরা, জুয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি রাখী ম্রং।

এদিকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংখ্যালঘু নির্যাতন ও সামপ্রদায়িক নিপীড়নের ঘটনায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ গভীরভাবে ক্ষুব্ধ এবং উদ্বিগ্ন। তারা অনতিবিলম্বে নবনির্বাচিত সরকারের প্রতি সংখ্যালঘু নির্যাতন ও সামপ্রদায়িক নিপীড়ন বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার দাবি করেছে। একইসাথে দেশের স্বার্থে বেগম খালেদা জিয়াকে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করে গণতন্ত্র এবং উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখারও আহ্বান জানায় সংগঠনটি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী সংখ্যালঘু নির্যাতন ও সামপ্রদায়িক নিপীড়নের প্রতিবাদে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত এক মানববন্ধন থেকে এ আহ্বান জানানো হয়।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম, সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, রাখি দাস পুরকায়স্থ, মহানগর সাধারণ সম্পাদক মাসুদা রেহানা বেগম ও আন্দোলন সম্পাদক কাজী সুফিয়া আক্তার প্রমুখ।

আয়শা খানম মহাজোটের সরকারকে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের আওতায় সামপ্রদায়িক জঙ্গিবাদের সাথে জড়িতদের বিচার করার দাবি জানান। তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানান।

মালেকা বানু বলেন, দেশের মানুষ আজ চরম নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন। আন্দোলনের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর ধারাবাহিকভাবে আক্রমণ চালানো হচ্ছে। এ সকল ঘটনা আমাদের অনেক বড় বড় অর্জনকে ম্লান করে দিচ্ছে এবং পরমতসহিষ্ণুতা ও সকল ধর্ম, বর্ণ, গোত্রের মানুষের মিলেমিশে বসবাসের নীতির ক্ষেত্রে ব্যত্যয় ঘটাচ্ছে—রাষ্ট্রের অসামপ্রদায়িক চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করছে।

বক্তারা বলেন, সংখ্যালঘু নির্যাতন ও সামপ্রদায়িক নিপীড়নের কবলে আজ বাংলাদেশ। দিনাজপুর, সাতক্ষীরা, ঠাকুরগাঁও, যশোহর, হাতিয়া প্রভৃতি জেলায় নির্যাতিত ক্ষতিগ্রস্ত সংখ্যালঘু পরিবার ও তাদের স্বজন নিরাপত্তাহীন মানবেতর জীবন-যাপন করছে। এ ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে সরকারকে সহযোগিতার হাত বাড়ানোরও অনুরোধ জানান তারা।

অন্যদিকে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা বলেছেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের দায়িত্ব ও দায়ভার সংখ্যাগুরুদেরই নিতে হবে। বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা কখনো দেশত্যাগ করতে চায়নি। প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী ‘সংখ্যালঘু নিঃস্বকরণ প্রক্রিয়া’র অংশ হিসাবে হত্যা-নির্যাতন ও দেশ জুড়ে আতঙ্কময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করে তাদের দেশত্যাগে বাধ্য করেছে। নতুন সরকারের কাছে ঐক্য পরিষদের নেতারা প্রশ্ন করেন, আর কত প্রাণ ঝরলে, বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ করলে এই ধারাবাহিক হত্যা-নির্যাতন বন্ধ হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন। সাংবাদিক সম্মেলনে ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে নতুন সরকারের প্রতি সাত দফা দাবি তুলে ধরা হয়। নেতারা হামলাকারীদের সন্ত্রাস দমন আইন, দ্রুত বিচার আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের আওতায় গ্রেফতার করে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে যথাযথ শাস্তি দেয়ার দাবি জানান। একইসঙ্গে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর চলতে থাকা সহিংসতার বিরুদ্ধে দেশব্যাপী আগামীকাল শনিবার বিক্ষোভ সমাবেশ ও কালো পতাকা মিছিল করার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কেন্দ্রীয়ভাবে শনিবার বিকাল তিনটায় রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে কালো পতাকা মিছিল বের হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়।

সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কাজল দেবনাথ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত কুমার দেব, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নিমচন্দ্র ভৌমিক প্রমুখ।

রানা দাশগুপ্ত বলেন, ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুদের অস্তিত্ব বিপন্ন করে এবং তাদের দেশছাড়া করে গণতন্ত্র, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করা যাবে না। সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে অসহায়ত্বের দিকে ঠেলে দিয়ে যারা শান্তিতে থাকবেন বলে ভাবছেন, সেটা মোটেও সফল হবে না। ১৯৭১ সালে এমনটা অনেকেই ভেবেছিলেন, তাদের সে চিন্তা ফলপ্রসূ হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না।

সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তারা আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে বিগত চার দশক ধরে দেশের রাজনৈতিক সংকটময় মুহূর্তে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর বার বার সহিংসতা চালানো হয়েছে। কিন্তু ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপরে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দায়মুক্তির সংস্কৃতি অব্যাহত থাকায় হামলাকারীদের উত্সাহিত করা হচ্ছে। প্রতিটি সরকার একে অন্যের ওপরে দোষ চাপিয়ে হামলাকারীদের আড়াল করেছে এবং প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দিয়েছে।

সাংবাদিক সম্মেলনে বলা হয়, বিশেষ করে ৯০ এর নির্বাচন পরবর্তীকাল থেকে শুরু করে ৯২, ২০০১ নির্বাচনের আগে ও পরে সংখ্যালঘুদের ওপরে নির্যাতনের ধারাবাহিকতায় এবারও তা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে মহাজোট সরকারের সময়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হওয়ার পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুরা ভয়াবহ হামলার শিকার হচ্ছে।

সাত দফার দাবির মধ্যে আরো রয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি, উপাসনালয় ইত্যাদি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে পুনর্নির্মাণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন; ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা; হামলায় আহতদের সরকারি উদ্যোগে চিকিত্সার ব্যবস্থা করা; যেসব মহল সংখ্যালঘুদের হামলার সঙ্গে যুক্ত তাদের কার্যক্রম চিরতরে বন্ধ করা; সাহাবুদ্দিন কমিশনের রিপোর্টের সুপারিশাবলীর যথাযথ বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং দলমত নির্বিশেষে সাম্প্রদায়িক হামলার সঙ্গে জড়িতদের রাজনৈতিক আশ্রয় না দেয়া।