সরকার ও সব রাজনৈতিক দলকে দ্রুততার সঙ্গে সংখ্যালঘু সেল গঠন করে বিশেষ বিবেচনায় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি আরও বলেছেন, একদিকে স্বাধীনতাবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক শক্তির ছত্রচ্ছায়ায় ঠিক পাকিস্তানি আমলের মতোই সংখ্যালঘুদের দেশ থেকে বিতাড়নের চেষ্টা চালানো হচ্ছে, অন্যদিকে ক্ষমতাসীন জোটেরও কেউ কেউ অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি দখলের প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত নির্যাতনের কটি সচিত্র খবরের ভিত্তিতে অত্যন্ত উদ্বেগ জানান এই ঐক্যপরিষদ নেতা। ২০১০ সালের শেষের দিকে গঠিত ‘শাহাবুদ্দিন কমিশন’-এর সুপারিশ বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছেন তিনি। তিনি একাধারে ঐক্যপরিষদ নেতা ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর এবং পেশাজীবী নেতাও। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সনাতন সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে দীর্ঘকাল ধরে সক্রিয় থাকা অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নেতৃত্বেও ছিলেন। গতকাল মুঠোফোনে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে সাম্প্রতিক সংখ্যালঘু নির্যাতন ও বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচনের পূর্বাপর ঘটনাবলি নিয়ে কথা বলেন এ নেতা। সরকারের কাছে বাস্তবায়নের জন্য চারটি দাবিও তোলেন তিনি। দাবিগুলো হলো : ১. মার্কিন কংগ্রেসের সর্বসম্মত আহ্বানের আলোকে দেশের অরক্ষিত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুরক্ষা ও অধিকার রক্ষায় এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিতের জন্য সরকারের যত দ্রুত সম্ভব পদক্ষেপ গ্রহণ করা ২. ক্ষমতাসীন দলসহ সব দলকে দুর্বৃত্তায়নের হাত থেকে রক্ষা করে সংখ্যালঘুদের প্রতি সহিংসতাকারী উসকানিদাতা ও ভূমি দখলকারীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ ৩. শাহাবুদ্দিন কমিশনের সুপারিশ অনতিবিলম্বে বাস্তবায়ন ৪. সরকার ও সব রাজনৈতিক দলকে ‘সংখ্যালঘু সেল’ গঠন করে বিশেষ বিবেচনায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ফরিদপুরের ভাজনডাঙার জমিদার সতীশ চন্দ্র গুহমজুমদারের বাড়ি দখল করে পুরনো ভবন গুঁড়িয়ে দিয়ে মন্ত্রিসভার এক প্রভাবশালী সদস্যের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অপকর্মের অভিযোগসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত নির্যাতনের নানা ঘটনার কথা তুলে ধরেন অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। ঐক্যপরিষদের এই নেতা অবশ্য এও বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এ ঘটনা আমরা বিশ্বাস করতে চাই না। তবে যদি তা সত্য হয়, তাহলে বলতে হবে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের ষড়যন্ত্রের আর কিছু বাকি নেই। এমন অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাই আমাদের আস্থার শেষ ভরসাস্থল।’ ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত সাতটি সাম্প্রদায়িক ঘটনার কথা উল্লেখ করেন এই ঐক্যপরিষদ নেতা। ১৫ জন আদিবাসীকে হত্যা, ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনসহ সাত আদিবাসী নারীকে হত্যা, ১২৬ জন আদিবাসীকে শারীরিক নির্যাতন, ৫৪টিরও বেশি বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া, উত্তরবঙ্গে ৬০টি পরিবারের ৩০০ জন আদিবাসীর ভয়ে দেশত্যাগে বাধ্য হওয়া এবং ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের পূর্বাপর নানা হামলায় হতাহত সংখ্যালঘু ও স্বজনদের এখনো ন্যায্য বিচার না পাওয়ার ঘটনার কথা উল্লেখ করেন অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। ক্রমে নির্যাতনের কারণে দেশত্যাগের ফলে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু জনসংখ্যা উদ্বেগজনকহারে কমছে বলেও জানান তিনি। বলেন, ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর যেখানে অমুসলিমদের সংখ্যা ২৯ দশমিক ৭ শতাংশ ছিল সেখানে বর্তমানে এ সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৯ দশমিক ৭ শতাংশে। সংখ্যালঘুদের প্রতি মানবতাবিরোধী অপরাধ রোধ করা না গেলে তা হবে ‘৭১-এ অর্জিত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের জন্য একটি ‘জাতীয় লজ্জা’- জানান অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত।
- See more at: http://www.bd-pratidin.com/first-page/2015/08/09/98723#sthash.aVqrgwAV.dpuf