বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর পক্ষে মত দিয়েছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি।
বিচারপতি অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) হিসেবে নিজের মতামত তুলে ধরে আজমালুল হোসেন কিউসি এসব কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এস কে সিনহা) নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে অনুষ্ঠিত শুনানির নবমদিন সোমবারও রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের ওপর শুনানিতে বক্তব্য তুলে ধরা হয়।
আজমালুল হোসেন কিউসি শুনানিতে বলেন, সংসদের হাতে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা দিয়ে যে সংশোধনী আনা হয়েছে এটি কার্যকর সংশোধনী এবং একইসঙ্গে এটি বৈধ আইন হিসেবে বিবেচিত। ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে আদি সংবিধানে ফিরে যাওয়া হয়েছে। এই সংশোধনী অবশ্যই আইনত বৈধ। কানাডায় এ ধরণের পদ্ধতিতে বিচারক অপসারণ করা হয়।
শুনানিতে আজমালুল বলেন, ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে বিচার বিভাগকে উপলব্ধি করতে হবে এর সঙ্গে তাদের স্বার্থের বিষয়টি সরাসরি জড়িত।
এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বিচার বিভাগ কখনও বিচারকদের স্বার্থে রায় দেয় না। রায় দেওয়া হয় জনগণ ও বিচার বিভাগের স্বার্থে। সংবিধান ও আইনের শাসনকে সমুন্নত রাখতেই রায় দেওয়া হয়। এখানে বিচারকদের ব্যক্তিগত কোনো স্বার্থ নেই। তবে এই মামলার রায় কী হবে আমরা জানি না। এখনও সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।’
উদাহরণ টেনে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘পিতামাতা ও ছেলেমেয়েদের ভালবাসার মধ্যে পার্থক্য আছে কি? আমি বলবো অবশ্যই আছে। কারণ পিতামাতা তার সন্তানকে নিঃশর্তভাবে ভালবাসে।’
আজমালুল হক কিউসি মতামত দিতে গিয়ে বলেন, ‘কীভাবে বিচারক অপসারণ করা হবে সে বিষয়টি এই মামলার সঙ্গে জড়িত। যা একটি মৌলিক প্রশ্নের উদ্রেগ করেছে। বিচারক অপসারণের পদ্ধতি কে নির্ধারণ করবে? তার উত্তর হচ্ছে, অবশ্যই সংসদ। পববর্তী প্রশ্ন হচ্ছে কে এই পদ্ধতির আইনগত বৈধতা দেবে? উত্তর হচ্ছে অবশ্যই সুপ্রিম কোর্ট। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, একজন বিচারক নিজের মামলার বিচার কি নিজেই করবে? অথচ এই মামলায় বিচার বিভাগের স্বার্থ জড়িত। তাই এ মামলায় সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক থাকতে হবে।’
আজমালুল হক বলেন, বিচারক অপসারণটা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অংশ কিন্তু অপসারণের পদ্ধতিটা মৌলিক কাঠামোর অংশ না। সংসদের হাতে বিচারক আপসারণের যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে তার পরিবর্তনের দরকার নেই।
এদিকে আইনজীবী ওদুদ ভূঁইয়া সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের পক্ষে মত দিছেন। তিনি বলেছেন, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের ক্ষমতা প্রধান বিচারপতির হাতে থাকতে হবে। যদি এটা সংসদের হাতে দিয়ে দেওয়া হয় তাহলে ভারসাম্য নষ্ট হবে।