ঢাকা, এপ্রিল ২৬, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ১৪:০৬:০৮

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

একীভূত হতে চাওয়া ব্যাংকের সম্পদের দাম যেভাবে নির্ধারণ করা হবে টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি বিএফইউজে’র দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিএনপির মাথাব্যথার কারণ নেই : ওবায়দুল কাদের বিএনপি একটি রাজনৈতিক দৈত্যের দল : পররাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তি বজায় রাখার জন্য যা-যা করার আমরা করবো: বান্দরবানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবারের ঈদ যাত্রাও স্বস্তিদায়ক হচ্ছে: সেতুমন্ত্রী কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট শিশুদের নতুন করে বাঁচার পথ খুলে দেয় : সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ আসন্ন পবিত্র রমজানে সরকারিভাবে বড় ইফতার পার্টি না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর পুলিশকে জনগণের বন্ধু হয়ে নিঃস্বার্থ সেবা দেয়ার নির্দেশ রাষ্ট্রপতির

শেখ হাসিনাকে হত্যাই ছিল ২১ আগস্ট হামলার উদ্দেশ্য

| ১২ পৌষ ১৪২৪ | Tuesday, December 26, 2017

ঢাকা : ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলার আসামীদের অভিন্ন উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনাকে হত্যা করা।
রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সিনিয়র এডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় আজ ২৪তম দিনের মতো যুক্তিতর্কে এ তথ্য উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শুন্য করতে পরিকল্পিতভাবে ওই পরিচালিত হয়।
যুক্তিতর্কে আজ রাষ্ট্রপক্ষ মামলার সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিলকারী কর্মকর্তা আবদুল কাহ্হার আখন্দের (পিডব্লিউও ২২৫) দেয়া জবানবন্দি থেকে যুক্তিতর্ক পেশ করার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপক্ষে দেয়া ২২৫ জন সাক্ষির জবানবন্দির আলোকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেন। এরপর আসামীপক্ষে দেয়া সাফাই সাক্ষ্য থেকে যুক্তিতর্ক পেশ শুরু করে রাষ্ট্রপক্ষ।
রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে এ মামলার বিচার চলছে। রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক পেশ অসমাপ্ত অবস্থায় মামলার কার্যক্রম আগামীকাল ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুলতবি করা হয়। আদালতের আদেশে আসামীপক্ষকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্কে স্বাক্ষী আবদুল কাহ্হার আখন্দের জবানবন্দি উল্লেখ করে জানায়, আবদুল কাহ্হার আখন্দ এ মামলা ২০০৯ সালের ৩ আগস্ট থেকে ২০১১ সালের ২ জুলাই পর্যন্ত ১ বছর ১০ মাস ২৯ দিন সম্পূরক তদন্ত করে চার্জসিট দাখিল করেন। তিনি এ মামলার এজাহার, বিভিন্ন কর্মকর্তার তদন্ত, বিভিন্ন আলামত নষ্ট করার ঘটনা, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিসমূহ পর্যালোচনা করেন। ঘটনা ঘটার সময় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকার বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত ও পর্যালোচনা করেন। বিভিন্ন সময় মামলার বিভিন্ন কর্মকর্তাদের ভূমিকা পর্যালোচনা করেন। এ মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা ফজলুল কবিরের দাখিল করা ২২ আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র পর্যালোচনা করেন। ২১ আগষ্ট ঘটনার পূর্বে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের সভা, সভাস্থল, জড়িতদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উৎঘটান করেন। আওয়ামীলীগ সভানেত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানসহ তার সহযোগীদের পরিচালিত বিভিন্ন তৎপরতার তথ্য উৎঘাটন করেন। প্রকৃত আসামীদের আড়াল করতে নিরীহ জজমিয়া সহ অন্য নিরীহদের মামলায় সম্পৃক্ত করার উদ্দেশ্য উৎঘাটন করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, আবদুল কাহ্হার আখন্দ ২১ আগস্ট হামলা সফলে তারেক রহমানের রাজনৈতিক কার্যালয় বনানীর হাওয়া ভবনে অনুষ্টিত অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের সভাসহ বিভিন্ন ষড়যন্ত্রমূলক সভার বিস্তারিত তথ্য উৎঘাটন করেন। আসামীদের নির্বিঘেœ পালিয়ে যেতে সহায়তাকারী কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করেন। এ তদন্ত কর্মকর্তা তার তদন্তকালে ১৭ আসামীকে গ্রেফতার করেছেন বলে রাষ্ট্রপক্ষ জানায়।
রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, পূর্বপরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত অনুযায়ি সিলেটের বিভিন্ন স্থানে এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা পরিচালনা করা হয়। এ রাষ্ট্রকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিনত করা এবং জঙ্গিবাদ প্রতিষ্টিত করার একটা লক্ষ্য ছিল হামলাকারীদের। কেননা শেখ হাসিনা ও তার নেতৃত্বাধীন দল অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও আদর্শে বিশ^াসী। তাই এ আদর্শ ধ্বংশ করে উগ্রবাদ তথা জঙ্গিবাদ প্রতিষ্ঠা করতেই শেখ হাসিনাসহ দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে হত্যার পরিকল্পানা ও হামলা করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মন্ত্রী, প্রভাবশালী শীর্ষ নেতা, প্রশাসনের প্রভাবশালী শীর্ষ কর্মকর্তাগনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা পরস্পর যোগসাজসে ঘটিয়েছেন। তদন্তে তাদের নাম ও তথ্য-প্রমান বেড়িয়ে এসেছে। সে আলোকে আরো ৩০জনকে সম্পৃক্ত করে মামলায় সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্কে আদালততে উদ্দেশ্য করে বলেন, বিচারপ্রার্থী মানুষেরা ন্যায়বিচার প্রাপ্তির জন্য অধীর আগ্রহে রয়েছেন।
প্রধান কোঁসুলিকে যুক্তিতর্ক পেশে আরো সহায়তা করছেন আইনজীবী আকরাম উদ্দিন শ্যামল ও ফারহানা রেজা। এ ছাড়াও রাষ্ট্রপক্ষে স্পেশাল পি.পি মো. আবু আব্দুল্লাহ্ ভুঞা, আবুল কালাম আজাদ, মো. আমিনুর রহমান, আবুল হাসনাত, শেখ সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, কাজী ইলিয়াসুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে আসামিপক্ষে বিভিন্ন আইনজীবী আদালতে আজ উপস্থিত ছিলেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় গত ২৩ অক্টোবর থেকে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক শুরু হয়েছে।
২১ আগস্টের ওই নৃশংস হামলায় পৃথক দুটি মামলায় মোট আসামী ৫২ জন। মামলার আসামী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ২৩ জন কারাগারে রয়েছে। এ মামলায় পুলিশের সাবেক আইজি আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদাবক্স চৌধুরী, লে.কমান্ডার (অব:) সাইফুল ইসলাম ডিউক এবং মামলার সাবেক তিন তদন্ত কর্মকর্তা- সিআইডি’র সাবেক এসপি রুহুল আমিন, সিআইডি’র সাবেক এএসপি আতিকুর রহমান ও আবদুর রশিদসহ মোট ৮ জন জামিনে রয়েছেন। তারেক রহমান, বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী, শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, মেজর জেনারেল (এলপিআর) এটিএম আমিন, লে.কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দারসহ ১৮ জন এখনো পলাতক। এছাড়া ৩ জন আসামী জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মুফতি হান্নান ও শরীফ সাইদুল আলম বিপুলের অন্য মামলায় মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়ায় এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। পলাতক আসামীদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী রয়েছেন।
বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের এক সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। ওই নৃশংস হামলায় ২৪ জন নিহত ও নেতকর্মী-আইনজীবী-সাংবাদিকসহ পাঁচ শতাধিক লোক আহত হয়। নিহতদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের পতœী আইভি রহমান। তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের প্রথম সারির অন্যান্য নেতা এই গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে যান। এতে অল্পের জন্য শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচন্ড শব্দে তার শ্রবণশক্তিতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়।