ঢাকা : খুলনার শিশু রাকিবকে বর্বরোচিতভাবে হত্যার মামলায় বিচারিক আদালতের মৃত্যুদন্ডাদেশ কমিয়ে দুই আসামীকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়ে দেয়া পূর্ণাঙ্গ রায় আজ প্রকাশ করা হয়েছে।
রায় প্রধানকারী বিচারপতিদের স্বাক্ষরিত ৩৯ পৃষ্ঠার এ পূর্ণাঙ্গ রায় আজ সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
রাকিবকে বর্বরোচিতভাবে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বিচারিক আদালতের দেয়া মৃত্যুদন্ডাদেশ কমিয়ে দুই আসামীকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়ে গত ৪ এপ্রিল রায় ঘোষণা করেছিলো হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করে। এছাড়াও দন্ডিত আসামীদের পঞ্চাশ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে। এ মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের করা আপিলের ওপর গত ২৯ মার্চ উভয়পক্ষের শুনানি শেষ হয়। এরপর গত ৪ এপ্রিল ধার্য তারিখে মামলাটির রায় ঘোষণা করা হয়।
মলদ্বার দিয়ে বাতাস ঢুকিয়ে শিশু রাকিব হাওলাদারকে (১২) হত্যার ঘটনায় আনা মামলায় উভয়পক্ষকে সব ধরনের আইনি সুবিধা দিয়ে ২০১৫ সালের ৮ নভেম্বর রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে তিন আসামির মধ্যে আসামি মো. শরীফ ও তার সহযোগী মিন্টুকে মৃত্যুদন্ড এবং অপর আসামি শরীফের মা বিউটি বেগমকে খালাস দেয়া হয়। হাইকোর্ট আজ রায়ে মৃত্যুদন্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ দিয়ে রায় দেয়।
আদালতে এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল জহিরুল হক ও সহকারী এটর্নি জেনারেল আতিকুল হক। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী গোলাম মো. চৌধুরী আলাল।
রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, এখন হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করা হবে।
গত ১০ জানুয়ারি রাকিব হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শুরু হয়। ২০১৫ সালের ১০ নভেম্বর রাকিব হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স বিচারিক আদালত থেকে হাইকোর্টে আসে। অন্য গ্যারেজে কাজ নেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট সন্ধ্যায় নগরীর টুটপাড়া কবরখানার মোড়ের শরীফ মোটরস গ্যারেজের মালিক মো. ওমর শরীফ ও তার সহযোগী মিন্টু দোকানের ভেতরে নিয়ে শিশু রাকিবের মলদ্বারে মোটরসাইকেলের চাকায় হাওয়া দেয়ার মেশিন দিয়ে বাতাস ঢুকিয়ে দেয়। এতে রাকিবের শরীর ফুলে যায় এবং ভেতরের নাড়িভুঁড়ি ছিঁড়ে যায়। ভেতরে রক্তক্ষরণের কারণে রাকিব মারা যায়।
এ ঘটনায় রাকিবের বাবা আলম হাওলাদার তিনজনকে আসামি করে পরদিন খুলনা সদর থানায় মামলা করেন। রাকিবের মৃত্যুর খবর পেয়ে ওই দিন রাতে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বিক্ষুব্ধ জনতা শরীফ ও মিন্টুকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। পুলিশ পরে শরীফের মাকেও গ্রেফতার করে। ২০১৫ সালের ২৫ আগস্ট আলোচিত এ হত্যা মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।
বিচারিক আদালতের রায় প্রসঙ্গে এক প্রতিক্রিয়ায় খুলনা আদালতের পিপি সুলতানা রহমান শিল্পী বাসস’কে বলেন, ‘সব পক্ষকে সব ধরনের আইনি সুযোগ দিয়ে মাত্র ১১ কার্য দিবসে আলোচিত এ হত্যা মামলার রায় প্রদানের মাধ্যমে আদালত এক ঐতিহাসিক নজির সৃষ্টি করেছে।’