ঢাকা, মে ১৯, ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ০৯:১৭:৩৮

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি বিএফইউজে’র পুনর্বাসন না করে বস্তিবাসীদের উচ্ছেদ করা হবে না: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি হিসেবে ফের নিয়োগ পেলেন বিপ্লব বড়ুয়া সংসদ অধিবেশন উপলক্ষে সংসদ ভবন ও আশপাশের এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ আপিলে দ্বিতীয় দিনে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন ৫১ জন নির্বাচনে ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি সেনাবাহিনী চায় ইসি : পিএসও আদালত আবমাননায় বিচারক সোহেল রানার সাজার বিরুদ্ধে আপিলের রায় ২৩ জানুয়ারি রাজধানীর ২১টি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৪ জন গ্রেফতার : ডিএমপি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হবে কিনা, জানালেন ইসি

শিক্ষক লাঞ্ছনা: পুলিশকে ৪ অগাস্টের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ

| ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৩ | Thursday, June 9, 2016

বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দিয়ে জানিয়েছে, বিষয়টি  আগামী ৭ অগাস্ট আবার তালিকায় আসবে।

 ওই ঘটনার করা জিডির প্রেক্ষিতে তদন্তে ‘অগ্রগতি আছে’ জানিয়ে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার ও বন্দর থানার ওসি বুধবার হাই কোর্টে প্রতিবেদন দিতে ৬০ দিন সময় চেয়ে আবেদন করে।

বৃহস্পতিবার সেই আবেদনের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের প্রতিবেদন আদালতের সামনে তুলে ধরেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

যে দুই আইনজীবী শিক্ষক লাঞ্ছনার বিষয়ে সংবাদপত্রের প্রতিবেদন আদালতের নজরে এনেছিলেন, তাদের মধ্যে মহসিন রশিদও আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে স্থানীয় প্রশাসনের দেওয়া প্রতিবেদনে অসন্তোষ প্রকাশ করে ২৯ মে আদালত বলে, ‘দায়সারা নয়’, আগামী ৮ জুনের মধ্যে ‘সুনির্দিষ্ট ও পূর্ণাঙ্গ’ প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। সেইসঙ্গে আদালত ৮ জুন প্রতিবেদন দাখিল করতে বলে ৯ জুন শুনানির দিন রাখে। এর ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার বিষয়টি শুনানির জন্য ওঠে।

আদেশে বিচারক বলেন, জেলা প্রশাসক যে সমন্বিত প্রতিবেদন দিয়েছেন, তাতে আদালত সন্তষ্ট।

ওই প্রতিবেদন নথিভুক্ত করে পুলিশ প্রতিবেদনের জন্য নতুন তারিখ ঠিক করে দেয় আদালত।

ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে গত ১৩ মে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে মারধর করে স্থানীয় একদল লোক। পরে তাকে কান ধরিয়ে উঠ-বস করান স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান।

দেশজুড়ে ওই ঘটনার প্রতিবাদ ও দোষীদের বিচার দাবির মধ্যেই ওই শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। তার দুই দিনের মাথায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল পর্যদের ওই সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করে জানায়, প্রধান শিক্ষক তার পদে বহাল আছেন। নিয়মবহির্ভূত সিদ্ধান্ত নেওয়ায় স্কুল কমিটিও বাতিল করে মন্ত্রণালয়।

ওই ঘটনা নিয়ে সংবাদপত্রে আসা প্রতিবেদন ১৮ মে আদালতের নজরে আনেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম কে রহমান ও মহসীন রশিদ। সেদিন আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেয়।

সাংসদ সেলিম ওসমানসহ ওই ঘটনায় যাদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে, তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় রুলে। পাশাপাশি ওই ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে কী আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছ- তা জানতে চায় আদালত।

আদেশ পাওয়ার তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশও দেয় আদালত।

এর ধারাবাহিকতায় ২৯ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও বন্দর থানার ওসির প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।

স্থানীয় প্রশাসনের দেওয়া প্রতিবেদনে অসন্তোষ প্রকাশ করে আদালত সেদিন বলে, ‘দায়সারা নয়’, আগামী  ৮ জুনের মধ্যে ‘সুনির্দিষ্ট ও পূর্ণাঙ্গ’ প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।

এর ধারাবাহিকতায় ৮ জুন জেলা প্রশাসক নেওয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে নতুন করে প্রতিবেদন এবং পুলিশ সুপার ও বন্দর থানার ওসি হাই কোর্টে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ষাট দিন সময় চেয়ে আবেদন করে, যা অ্যাটর্নি কার্যালয়ে জমা পড়ে।

জেলা প্রশাসনের প্রতিবেদন

জেলা প্রশাসকের প্রতিবেদনের ভাষ্য, ১৩ মে ঘটনার পর জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে ১৬ মে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা হয়। সভার আলোচ্যসূচিতে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছনার বিষয়টিও ছিল।

প্রতিবেদন অনুসারে, সভায় এ বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা হয়, যার প্রেক্ষিতে তদন্তের জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটিও রা হয়। পরবর্তীতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি গঠনের প্রেক্ষিতে ওই কমিটির কার্যক্রম বাতিল ঘোষণা করা হয় এবং বিষয়টি ফোনের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়। সভায় নতুন করে যাতে সহিংসতার ঘটনা না ঘটে সেজন্য আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত সদস্যদের নির্দেশ এবং শিক্ষকের যথাযথ চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রাখাতে বলা হয়।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার বলেন, ৩১ মে জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান মিয়ার সভাপতিত্বে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির বিশেষ সভা হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই সভায় নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার, র্যাব-১১ এর অধিনায়ক, কোস্ট গার্ড সদস্য, আনসার-বিডিবির জেলা কমান্ড্যান্ট, এনএসআই-এর উপ-পরিচালক, নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও নৌ-পুলিশের পরিদর্শক উপস্থিত ছিলেন।

কোর কমিটির সিদ্ধান্ত ঊদ্ধৃত করে মোতাহার হোসেন সাজু বলেন, ওই সভায় প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের সম্মানহানির বিষয়ে করা জিডি ও নিম্ন আদালত তদন্তের যে অনুমতি দিয়েছে সে বিষয়ে আইনি কার্যক্রম যথাযথভাবে পালন করা, ওই শিক্ষক ও তার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, হাই কোর্টের দেওয়া নির্দেশনা যথাযথভাবে প্রতিপালন করা, স্কুল পাশ্ববর্তী এলাকায় যাতে শান্তি বজায় থাকে এবং ওই এলাকার মানুষের মধ্যে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় থাকে সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত হয়।

ওই বিদ্যালয়ের কার্যক্রম যাতে সুষ্ঠুভাবে চলে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা প্রতিবেদন এসেছে বলে জানান তিনি।

ডেপুটি অ্যটর্নি জেনারেল মোতাহার বলেন, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ওসি ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবেন বলে সিদ্ধান্ত আসে।

বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, শিক্ষা কর্মকর্তা ও ওই প্রধান শিক্ষককে এ সিদ্ধান্ত ২ জুন অবহিত করা হয় বলে জেলা প্রশাসকের প্রতিবেদনে এসেছে।

পুলিশের আবেদনের বিষয়ে ডেপুটি অ্যটর্নি জেনারেল বলেন, ঘটনার দিন বন্দর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। নারায়ণগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে অনুমতি নিয়ে তদন্ত চলছে এবং তা অব্যাহত রয়েছে। এজন্য হাই কোর্টে প্রতিবেদন দাখিলে ৬০ দিন সময় চাওয়া হয়েছে।