আজ রোববার অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে অহংকার আর শোকের এই দিনটি পালন করছে জাতি। একুশের প্রথম প্রহরেই
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রথমে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের নেতারা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ, তিন বাহিনীর প্রধানেরা পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে একুশের ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর পর্যায়ক্রমে কূটনীতিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি শহীদ মিনারে তাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করে। পরে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
রাত কাটিয়ে ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে নামল মানুষের ঢল। বেলা বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে মানুষের লাইন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা পরিণত হয়ে জনসমুদ্রে। বিকেলে এই ভিড় আরও বাড়বে। তবে তখন এই ভিড় শহীদ মিনার কেন্দ্রিক না হয়ে, বইমেলা কেন্দ্রিক হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মনে করছে।
কথা হয় শ্রদ্ধা জানাতে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘একুশ আমাদের অহংকার। ’৫২ আমাদের সাহসী হতে শিখিয়েছে। যারা আমাদের এই সাহস দিয়েছে, তাঁদের স্মৃতির উদ্দেশেই ফুল দিতে যাচ্ছি।’
বাবার কোলে চড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ঘুরতে এসেছির চার বছরের মায়িশা জান্নাত। সে বলে, ‘শহীদ মিনার দেখতে আসছি। বাবা, বাবা নিয়ে আসছে। এত্ত মানুষ!’—কথাগুলো চার
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর পর বেশির ভাগ লোকজন ঢুঁ মারছেন অমর একুশে বইমেলায়। ছুটির আমেজে অনেকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, হাকিম চত্বর, কার্জন হল, মল চত্বর, ভিসি চত্বর। বেশির ভাগ মানুষের পরনেই সাদা-কালো পোশাক। তরুণীদের অনেকের মাথায় ফুলের মুকুট।
কালো পাঞ্জাবি পরে এসেছির শিশু রা’দ আল নাহিয়ান। ওর সঙ্গে কথা হয় ভিসি চত্বরে। কোথায় গেছো প্রশ্ন করতেই সে বলল—‘বাবার কাঁধে চড়ে শহীদ মিনারে গেছি। হুমম ফুল দিছি।’ আম্মু আসেনি? ও বলল, ‘বিকেলে সবাই এক সাথে আসব।’
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শামসুল আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রথম ধাপ হলো ৫২-এর ভাষা আন্দোলন। এ জন্য প্রতীকীভাবে ভাষা শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশে রীতি অনুযায়ী ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়েছি।’
হাজার হাজার মানুষের নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চার স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সেখানকার আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার প্রথম আলোকে বলেন, মানুষের নিরাপত্তা দিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শহীদ মিনার ও ঢাকা বিশ্ববিদালয় এলাকায় তৎপর রয়েছে। গতকাল রাত থেকে এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
শুধু ঢাকায় নয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, রংপুর ও সিলেটসহ দেশের সব জেলায় শহীদ মিনারেও সর্বস্তরের জনতা ঢল নেমেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সেখানেও সব বয়সী মানুষেরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছেন ভাষা শহীদ