ঢাকা, এপ্রিল ২৬, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ২২:৩৩:৩৭

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

একীভূত হতে চাওয়া ব্যাংকের সম্পদের দাম যেভাবে নির্ধারণ করা হবে টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি বিএফইউজে’র দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিএনপির মাথাব্যথার কারণ নেই : ওবায়দুল কাদের বিএনপি একটি রাজনৈতিক দৈত্যের দল : পররাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তি বজায় রাখার জন্য যা-যা করার আমরা করবো: বান্দরবানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবারের ঈদ যাত্রাও স্বস্তিদায়ক হচ্ছে: সেতুমন্ত্রী কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট শিশুদের নতুন করে বাঁচার পথ খুলে দেয় : সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ আসন্ন পবিত্র রমজানে সরকারিভাবে বড় ইফতার পার্টি না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর পুলিশকে জনগণের বন্ধু হয়ে নিঃস্বার্থ সেবা দেয়ার নির্দেশ রাষ্ট্রপতির

শতাধিক গ্রাম প্লাবিত বগুড়া-সিরাজগঞ্জ-গাইবান্ধায়

| ১৫ ভাদ্র ১৪২১ | Saturday, August 30, 2014

বগুড়া-সিরাজগঞ্জ ও গাইবান্ধায় প্রায় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় যমুনা নদীর রহদহ বাঁধের প্রায় ৩০০ মিটার অংশ প্রবল পানির তোড়ে ভেঙে পড়েছে। এতে নতুন করে প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আশ্রয় হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে রয়েছে এসব গ্রামের হাজারো মানুষ।

অন্যদিকে সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলায় বন্যানিয়ন্ত্রণ রিং বাঁধের প্রায় ৩০ মিটার এলাকা পানির চাপে ধসে গেছে। যমুনায় অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধির ফলে শুক্রবার সকালের দিকে বাঁধে আকস্মিক ধস নামে। এতে অন্তত ৬০০ পরিবার নতুন করে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক বিল্লাল হোসেন।

পানিবন্দী এসব মানুষ এখন বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকটে ভুগছেন।

সারিয়াকান্দির বৌহাই গ্রামের সুফিয়া বেগম বলছিলেন বন্যার পানিতে নিজের দুর্ভোগের কথা। রাতের বেলা হুট করে ঘরে পানি ঢুকে পড়ার কারণে খোলা আকাশের নীচে পানির অসহায় অবস্থার মধ্যেই রয়েছেন তিনি।

আহাজারি করতে করতে এই প্রতিবেদককে বলছিলেন, এক বুক পানির মধ্যে আমরা খাড়ায়ে আছি। জমিজমা, বাড়িঘর বেবাক ডুইবা গেছে। আমগোর রান্দনের মতো ক্ষমতা নাই। আমগোর খাওনের কিছু নাই।

শুধু সুফিয়া বেগম নয় সারিয়াকান্দি উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ এখন পানিবন্দী অবস্থায় জীবনযাপন করছেন।

বগুড়ার জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন শুক্রবার সকালে যমুনা নদীর রহদহ বাঁধের প্রায় ৩০০ মিটার অংশ প্রবল পানির তোড়ে ভেঙে যাবার কারণে সারিয়াকান্দি উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের প্রায় ১০২ ট গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

লাখো মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। কাছাকাছি কোনো আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় উঁচু রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন অনেকে। পানিবন্দী জুলেখা বেগম বলছিলেন, বাঁধ ভাইঙ্গা রাতে যেমনে পানি ঢুকছে কোনমতে জান বাঁচাইয়া পোলাপান নিয়া এক কাপড়ে বাইর হইয়া আসছি। এখন রাস্তার মইধ্যে দাঁড়ায়ে আছি। সব ভাইসা যাইতেছে পানিতে। রাস্তার ভিতরে পানির ওপরে দাঁড়ায়ে আছি।

সিরাজগঞ্জ : শুধু সারিয়াকান্দি নয়, সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হবার কারণে সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলায় বন্যানিয়ন্ত্রণ রিং বাঁধের প্রায় ৩০ মিটার এলাকা পানির চাপে ধসে গেছে।

শুক্রবার দুপুরে আকস্মিক পানি বৃদ্ধির ফলে নতুন করে অন্তত ৬০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক জানাচ্ছিলেন, এ পর্যন্ত ৩৩টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে যাতে চোদ্দ হাজারের মতো ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে তারা ধারণা করছেন।

কাজীপুর উপজেলার মেঘাই এলাকার মুদি দোকানদার মো: তাহের বলছিলেন তার চোখের সামনেই তার দোকানের সবকিছু ভেসে গেছে পানিতে।

ঘুম থেকে উইঠা দেখলাম পানি আসতেছে। কইলাম যে বাঁধ মনে হয় ভাইঙ্গা গেছে। কইতে কইতে দেখি পানির তোড় আইসা সব নিয়া যাইতেছে। প্রয়োজনীয় জিনিস নিবার পারি নাই আমরা। চাল ছইছই পানি হইয়া গেল দেখতে দেখতে।

বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট দুর্ভোগ যেন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

সারিয়াকান্দির বৌহাই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা তালুকদার বলছিলেন তার এলাকায় সবকিছু পানিতে ডুবে গেছে, রান্না করার মতো কোন অবস্থাই নেই। থাকারও কোন অবস্থা নেই। বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকটে ভুগছে এলাকাবাসী।

অনেকে নদীর পানি খাচ্ছে। স্যানিটেশন সমস্যাও এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, জানালেন মি: তালুকদার। তাদের থাকারও কোন ব্যবস্থা করা যাচ্ছেনা বলে জানান তিনি।

অতি দ্রুত বন্যার্তদের পুনর্বাসনে জরুরি সাহায্য দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মি: তালুকদার ও বন্যা কবলিত মানুষেরা।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোডের্র বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আগামী ৭২ ঘণ্টায় ঢাকা শহর সংলগ্ন বুড়িগঙ্গা, বালু, তুরাগ ও টঙ্গিখালের পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে তা বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।

গাইবান্ধা : তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, করতোয়া ও ঘাঘট নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় গাইবান্ধায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আবারও অবনতি হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় ঘাঘট নদীর পানি বেড়েছে ৩৬ সে.মি., ব্রহ্মপুত্র ২২ সে.মি., তিস্তা ৩০ সে.মি. ও করতোয়া নদীর পানি ৩২ সে.মি.। ফলে ঘাঘট নদীর পানি বিপদ সীমার ৫৭ সে.মি. ও ব্রহ্মপুত্র ১৭ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

একটানা ১২ দিন পানিবন্দি থাকায় বন্যা কবলিত সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও গাইবান্ধা সদর উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকার বিপন্ন লোকজন বিশুদ্ধ পানি, জ্বালানী, গবাদি পশু খাদ্য ও শুকনা খাদ্য সংকটে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। বন্যা দুর্গত এলাকায় ডায়রিয়া, সর্দিকাশিসহ পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। পানির তীব্র স্রোতের কারণে ফুলছড়ি উপজেলার সিংড়িয়া এলাকায় নদী ভাঙনের ব্যাপকতা বেড়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় ৩৫টি পরিবারের বাড়ি-ঘরসহ আসবাবপত্র নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন কবলিত নদী থেকে ১৫ ফুট দুরে থাকায় সিংড়িয়া-রতনপুর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ চরম হুমকির সম্মুখিন হয়ে পড়েছে । সিংড়িয়া বাঁধের আশেপাশের লোকজনের মধ্যে বন্যা ও ভাঙ্গন আতংক বিরাজ করছে।

এদিকে নতুন করে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া, হরিপুর, চন্ডিপুর, বেলকা, তারাপুর, কঞ্চিবাড়ি ও শ্রীপুর ইউনিয়নের উজান বোচাগাড়ী, বেলকা, ছয়ঘড়িয়া, পূর্ব লালচামার এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণবাঁধ এবং কয়েকটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখন ব্যাপকভাবে বন্যা কবলিত। এসব এলাকায় বন্যার্ত মানুষেরা দুর্ভোগের শিকার হয়ে দিনাতিপাত করছে। বন্যা কবলিত এলাকার অধিকাংশ লোক উঁচু মাচা পেতে, নৌকা ও কলা গাছের ভেলায় রাত্রিযাপন করছে। এছাড়া অনেকেই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, উচু স্থানগুলোতেও আশ্রয় নিয়েছে। এদিকে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দেয়ায় পানি বাহিত রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে চিকিৎসা নিতে আসছেন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত লোকজন। বন্যা কবলিত এলাকায় শ্রমজীবি মানুষ বেকার হয়ে পড়ায় মানবেতর জীবন যাপন করছে।সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া চিনিরপটল পালপাড়ার সিডিএমপি’র বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে চিনিরপটল, চকপাড়া, পবনতাইড়, থৈকরপাড়া, হলদিয়াসহ ১০টি গ্রাম নতুন করে বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে।

এদিকে গাইবান্ধার সাঘাটা, ফুলছড়ি, গাইবান্ধা সদর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ২৬ টি ইউনিয়নের ১৭০টি চর ও গ্রামের ২ লাখ ৮০ হাজার মানুষের দুর্ভোগ ক্রমেই বাড়ছে। জেলার ১শ’ ৭৮ টি সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান অঘোষিতভাবে বন্ধ রয়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় ২ হাজার ৫শ’ ৯১ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত জেলার ৪টি উপজেলার ২৯টি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়েছে। এরমধ্যে ১০টি সম্পুর্ণ এবং ১৯টি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ২৪ হাজার ৯৪টি পরিবারের ১ লাখ ১৬ হাজার ৫শ’ ৩ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৬ হাজার ৫৪টি। এরমধ্যে সম্পুর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ৭ হাজার ২শ’ ৩৩ এবং আংশিক ৮ হাজার ৮শ’ ২১টি। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ দপ্তর বরাদ্দকৃত চাল ও নগদ অর্থ এবং অন্যান্য ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ আরও জোরদার করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ২শ’ ৯৮ মেঃ টন চাল এবং ৫ লাখ ৮৩ হাজার ৫শ’ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

অন্যদিকে আগামী ৭২ ঘণ্টায় বগুড়া, রংপুর, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, মুন্সিগঞ্জ, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে আশংকা করছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।