শুক্রবার বিকেল ৩টা ১৭ মিনিটে কাবিননামায় সই করেন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক ও কনে হনুফা আক্তার রিক্তা। বিয়ের দেনমোহর ছিল ৫ লাখ ১ টাকা। আসরেই তা পরিশোধ করেন
অবশেষে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের সুদীর্ঘকালের একাকিত্ব ঘুচলো। বাজলো বিয়ের সানাই। ফুটলো বিয়ের ফুল। শুরু হলো বিলম্বিত যুগল জীবনযাত্রা। সোনালি হেমন্তে এই যাত্রায় তার চিরসঙ্গী হলেন হনুফা আক্তার রিক্তা। শুক্রবার দুপুরে কুমিল্লার চান্দিনার কংগাই গ্রামে কনে রিক্তার বাড়িতে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারা হয়। রাতে ঢাকার মন্ত্রিপাড়ার বাসায় হবে তাদের ফুলশয্যা। কাজী সিদ্দিকুর রহমান মন্ত্রীর বিয়ে পড়ান। মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত হাসেম চৌধুরী উকিল বাবার দায়িত্ব পালন করেন। বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ, সাংসদ আলী আশরাফ, আবদুল মতিন খসরু, তাজুল ইসলাম, সাবেক সাংসদ নাসিম উল আলম চৌধুরী, চট্টগ্রামের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম, কুমিল্লার জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। মুজিব-রিক্তার বিয়ের সাক্ষী হলেন কিবরিয়া মজুমদার, খোকন রেজা এবং ফজলুল করিম। তাদের মধ্যে কিবরিয়া বর এবং অন্য দুজন কনে পক্ষের। বিকেল ৩টা ১৭ মিনিটে কাবিননামায় সই করেন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক ও কনে হনুফা আক্তার রিক্তা। বিয়ের দেনমোহর ছিল ৫ লাখ ১ টাকা। আসরেই তা পরিশোধ করেন মন্ত্রী। এর আগে শুক্রবার সকালে মন্ত্রিপাড়ার বাসা থেকে শতাধিক গাড়ি নিয়ে শুরু হয় রেলমন্ত্রীর বরযাত্রা। দুপুর ১টার দিকে দাউদকান্দির শহীনগর জামে মসজিদে মন্ত্রী জুমার নামাজ আদায় করেন। বরযাত্রায় যাতে সামান্য বিঘ্ন না ঘটে, তা নিশ্চিত করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। বরকে স্বাগত জানাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মোড়ে মোড়ে তৈরি করা হয় প্যাণ্ডেল। বিকেল ৩টার একটু আগে প্রায় সাতশ’ বরযাত্রী নিয়ে কনের বাড়িতে পৌঁছান বর রেলমন্ত্রী। তাকে অভ্যর্থনা জানাতে আগেভাগেই প্রস্তুত ছিল সব। মন্ত্রী জামাইয়ের কয়েকজন শ্যালিকাকেও দেখা গেছে গেটে বরকে স্বাগত জানানোর আয়োজনে। গেটের অপর প্রান্তে পৌঁছতে শ্যালিকার দলকে দিতে হয়েছে ১ লাখ ১ টাকা।
বরপক্ষের ৭০০ ও কনেপক্ষের প্রায় ১৫শ’ অতিথিকে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করার কথা থাকলেও সে সংখ্যা পাঁচ হাজারের কম হবে না। দুপুরের খাবারের তালিকায় ছিল খাসির কাচ্চি, মুরগির রোস্ট, কোমল পানীয়, মিস্টান্ন, জর্দা এবং বোরহানী। মন্ত্রী জামাইয়ের জন্য ছিল আস্ত খাসির রোস্ট। বিশাল আকারের ডিসে জামাইয়ের খাবার পরিবেশন করা হয় বেশ আয়োজন করে। চারপাশে ১০টি ইলিশ মাছ, ১০টি আস্ত মুরগির রোস্ট এবং মাঝে ১৬ কেজি ওজনের খাসির রোস্ট। নানান পদের খাবার ও মিষ্টিতো ছিলই। এলাকার নামকরা বাবুর্চি কুমিল্লা ক্লাবের মিল্টন রোজারিও তৈরি করেছেন বরের খাবার। রিক্তার বড়ভাই আলাউদ্দিন মুন্সি বলেন, ‘সিতাহার, কণ্ঠহার, কানের দুল, আংটি, টিকলি, চুড়ি, নোলক ও ব্রেসলেট পাঠিয়েছেন জামাই রেলমন্ত্রী। সোনা সব মিলিয়ে ১৫ ভরির মতো হবে। এছাড়া সাজের অন্যান্য সামগ্রীও পাঠিয়েছেন আগেই। কনেপক্ষের জন্য পাঠিয়েছেন ৩৫টি শাড়ি, যা আত্মীয়-স্বজনদের দেওয়া হয়েছে। কনের জন্য বেনারসী ও কাতানসহ ৫টি শাড়িও পাঠানো হয়েছে।’
কনের রূপসজ্জার জন্য ঢাকার নামকরা একটি বিউটিপার্লার থেকে বিউটিশিয়ান নিয়ে আসা হয়। প্রায় সাতজন বিউটিশিয়ান সকাল থেকে বউকে সাজিয়েছেন। এদিকে, রেলমন্ত্রী বিয়ের অনুষ্ঠানের ভিড়ের মধ্যে সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরুর মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ খোয়া যায়। এ ছাড়া ১০-১৫ জন গণমাধ্যমকর্মীর মোবাইল ফোনও খোয়া গেছে বলে তারা অভিযোগ করেছেন। রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের বয়স ৬৭-এর কোঠায়। কনে রিক্তা ২৯-এ পা দিলেন। বয়সের এত বড় ব্যবধান তাদের মন দেওয়া-নেওয়া ও ভালোবাসায় সামান্য অন্তরায়ও হয়নি। তিন বছরের পরিচয়। ভালোবাসা থেকে এই পরিণয়। তবে কে প্রথম ভালোবেসেছিল, কে প্রথম কথা দিয়েছিল, তা জানা হয়নি।
এই বিয়ে নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা। মন্ত্রীর বিয়ে নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। গত বুধবার রাজধানীর ফার্মগেট কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মুজিবুল-রিক্তার গায়ে হলুদ হয়েছে। বর-কনের ছবিসহ তাদের গায়ে হলুদের খবর ছাপা হয়েছে দেশের প্রায় সব কাগজেই। গত ৫ নভেম্বর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের নিজ বাড়িতে যাবেন রেলমন্ত্রী। পরদিন ৬ নভেম্বর সেখানে হবে বৌভাত। ঢাকায় ১৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ ভবনের এলইডি হলে হবে বিবাহোত্তর সংবর্ধনা।