এক ইয়াবা কারবারি সন্ত্রাসীর উপর্যুপরি হামলা ও অত্যাচার-নির্যাতনে একটি সংখ্যালঘু পরিবারের আশ্রয় জুটেছে হাসপাতালে। ইয়াবা কারবারি সন্ত্রাসী সংখ্যালঘু পরিবারটিকে দফায় দফায় হামলা চালিয়েই ক্ষান্ত হয়নি; এই সন্ত্রাসী দরিদ্র সংখ্যালঘু পরিবরাটির বসতিও ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে। এরকম অমানবিক ঘটনাটি ঘটেছে কক্সবাজারের রামু উপজেলা সদরের হাইটুপি চেরাংঘাটা গ্রামে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ওই গ্রামের নুরুল হকের পুত্র মোশাররফ হোসেন (৩০) দীর্ঘদিন ধরে নিজের ঘরে মাদকের ডিপো গড়ে তুলে। সেখানেই ইয়াবা সেবনের আস্তানা খুলে এক রমরমা মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
মোশাররফের আস্তানায় ইয়াবা সেবনকারির সংখ্যাও তিন-চার শতাধিক। ইয়াবার রমরমা ব্যবসা আরো সম্প্রসারণের জন্য মোশাররফ তার প্রতিবেশী হিন্দু পরিবার মনিবালা দাশের ঘরটিকে টার্গেট করে বসে।
একই এলাকার মৃত মন্টু দাশের স্ত্রী মনিবালা দাশ তার দুই পুত্র ও এক কন্যাকে নিয়ে ছোট্ট ৫ কড়া পরিমাণের ভিটি জমির কুঁড়ে ঘরে বসবাস করে। তাকে উচ্ছেদ করার জন্য ইয়াবা কারবারি মোশাররফ অনেক দিন থেকেই চেষ্টা করে আসছে।
গত ১৫ এপ্রিল রাতে এক দফায় সশস্ত্র হামলা চালিয়ে মনিবালা দাশকে (৫৫) মারধর করে মোশাররফ। মনিবালাকে গুরুতর আহত অবস্থায় কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পরের দিন মোশাররফ মনিবালার এক পুত্র ননা দাশকেও মারধর করে।তাকেও জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। সর্বশেষ গতকাল সোমবার ইয়াবা কারবারি মোশাররফ মনিবালার বিবাহিত কন্যা পারুল দাশকে (২৮) কড়ই গাছের লাঠি দিয়ে মারধর করে। মারের চোটে এক সন্তানের জননী পারুলের কাঁধ ও হাতের হাঁড় ভেঙ্গে গেছে। তাকেও কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পরিবারের একজন মাত্র সদস্য ধনা দাশ অক্ষত রয়েছেন। ভিডিও ক্যামেরা অপারেটর যুবক ধনা দাশও নিরাপত্তাহীনতায় ঘর ছেড়ে আহত মা, বোন ও ভাইয়ের সাথে এখন জেলা সদর হাসপাতালের ওয়ার্ডে রাত কাটাচ্ছেন। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জেলা সদর হাসপাতালে সংখ্যালঘু পরিবারটির আহত সদস্যদের সাথে আলাপে জানা গেছে, সন্ত্রাসী মোশাররফ তাদের ভিটাচ্যুত করার জন্যই উপর্যুপরি এমন নির্যাতনের ঘটনা ঘটাচ্ছে।
ঘটনাটির ব্যাপারে রামু ফতেখারকুল ইউনিয়ন পরিষদেও চেয়ারম্যান সন্তোষ বড়ুয়া কালের কন্ঠকে জানান, রামুর ইয়াবা মোশাররফ বড় মাপের একজন সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহসও কারো নেই। কেননা তার নিজস্ব বাহিনী রয়েছে এবং তাদেও অস্ত্রও রয়েছে। তিনি জানান, সংখ্যালঘু পরিবারটির উপর অমানবিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।
রামু থানার ওসি প্রভাষ চন্দ্র ধর আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কালের কন্ঠকে জানান, সংখ্যালঘু পরিবারটিকে নির্যাতনের ঘটনা অত্যন্ত অমানবিক। এই ঘটনার পর গতকাল সোমবার সন্ত্রাসী মোশাররফের আস্তানায় অভিযান চালানো হয়েছে। তার কক্ষ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ১৫/১৬ জন স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীর নগ্ন ও অর্ধনগ্ন ছবি।
ওসি বলেন, যেকোন ভাবে এসব ছাত্রীদের ছবি ধারণ করে সে ব্ল্যাকমেইল করার জন্য মওজুদ করেছে বলে মনে হচ্ছে। মোশাররফ তালিকাভুক্ত ইয়াবাসহ মাদক পাচারকারী সন্ত্রাসী এবং তার বিরুদ্ধে আরও বেশ কয়েকটি মামলা থাকার কথা জানিয়েছেন ওসি। ওসি আরও জানান, সন্ত্রাসী মোশাররফের খোঁজে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।