ঢাকা, মে ৮, ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ১৯:০১:১৩

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি বিএফইউজে’র পুনর্বাসন না করে বস্তিবাসীদের উচ্ছেদ করা হবে না: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি হিসেবে ফের নিয়োগ পেলেন বিপ্লব বড়ুয়া সংসদ অধিবেশন উপলক্ষে সংসদ ভবন ও আশপাশের এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ আপিলে দ্বিতীয় দিনে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন ৫১ জন নির্বাচনে ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি সেনাবাহিনী চায় ইসি : পিএসও আদালত আবমাননায় বিচারক সোহেল রানার সাজার বিরুদ্ধে আপিলের রায় ২৩ জানুয়ারি রাজধানীর ২১টি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৪ জন গ্রেফতার : ডিএমপি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হবে কিনা, জানালেন ইসি

রাজউক চেয়ারম্যান ও ঢাকার ডিসিকে রাষ্ট্রদ্রোহী আখ্যা

| ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৪ | Wednesday, June 14, 2017

রাজউক চেয়ারম্যান ও ঢাকার ডিসিকে রাষ্ট্রদ্রোহী আখ্যা

কালাচাঁদপুরের বৃদ্ধা খোদেজা খাতুনের স্বামী মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত। বিদেশে চিকিৎসা করাতে না পারলে তাঁকে বাঁচানো যাবে না। কিন্তু তাঁর হাতে নগদ টাকা নেই। তাই তিনি শেষ সম্বল বাড়ি বিক্রি করে স্বামীর চিকিৎসা করাতে চান। কিন্তু গত তিন বছর ধরে ঘোরাঘুরি করেও বাড়ি বিক্রি করতে পারছেন না এই বৃদ্ধা। খাজনা (ভূমি উন্নয়ন কর) পরিশোধ করতে না পারায় সেটা সম্ভব হচ্ছে না। তাঁর এলাকার জমিজমা, বাড়িঘরের খাজনা-খারিজ বন্ধ রয়েছে। তাঁর গুরুতর অসুস্থ স্বামী বিনা চিকিৎসায় মরতে বসেছেন। এ কথা বলতে গিয়ে বৃদ্ধা কেঁদে ফেললেন। বললেন, ‘চিকিৎসা ছাড়া স্বামী মারা গেলে এর জন্য দায়ী থাকবে কে?’

সরেজমিন গুলশান, বাড্ডা ও ক্যান্টনমেন্ট ভূমি অফিসে গিয়ে এমন অনেক করুণ দৃশ্য দেখা গেছে। ২০১৩ সালের পর থেকে ঢাকার ডিসির নির্দেশে বাড্ডা, জোয়ার সাহারা ও ভাটারা মৌজার এক হাজার ৩৮৫ একর অবমুক্তকৃত সম্পত্তির খাজনা নেওয়া এবং নামজারি বন্ধ রাখার পর থেকে খোদেজা খাতুনের মতো হাজার হাজার ভূমি মালিক অসহায় হয়ে পড়েছে। শত প্রয়োজন হলেও তারা কেউ জমি বেচাকেনা কিংবা উন্নয়ন করতে পারছে না। বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে না পেরেও অনেকে বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। এর ফলে অনেক কন্যাদায়গ্রস্ত অভিভাবক মেয়ের বিয়ে কিংবা ছেলেকে বিদেশ পাঠাতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়ার কথাও ভাবছে।

বাড্ডা, গুলশান ও ক্যান্টনমেন্ট তহশিল অফিসে কর্মরতরা জানান, প্রতিদিন তাঁদের অফিসে স্থানীয় লোকজন এসে জমির খাজনা কিংবা নামজারির আবেদন করে। কিন্তু ডিসি অফিসের নির্দেশনার কারণে তাদের পক্ষে খাজনা আদায় এবং নামজারি সম্পন্ন করার কাজ সম্ভব হয় না। এর ফলে অনেকেই অফিসে কান্নাকাটি করে। খাজনা দিতে না পারলে জমি বেচা যাবে না। ফলে অনেককে না খেয়ে মরতে হবে; অসুস্থ মা-বাবা বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে। এসব কথা বলতে বলতে অনেকে কেঁদে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। ফলে পুরো পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।

ভাটারার স্থায়ী বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকার ডিসি এবং রাজউক চেয়ারম্যানের অন্যায় ও বেআইনি সিদ্ধান্তের কারণে নগরীর বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে একটি মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী যেকোনো সময় ফুঁসে উঠতে পারে। ইতিমধ্যে তারা বাড্ডা, ভাটারা ও জোয়ার সাহারা এলাকায় মতবিনিময় সভা এবং বিক্ষোভ মিছিল করেছে। রাজউক চেয়ারম্যান ও ঢাকার ডিসির সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা না হলে তারা রাজপথ অবরোধের মতো কঠিন কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে। পবিত্র রমজান মাস চলার কারণে সেই কর্মসূচি স্থগিত থাকলেও ঈদের পর সেটা শুরু করা হবে। ’

কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধানে জানা যায়, রামপুরা ব্রিজ থেকে খিলক্ষেত নিকুঞ্জ পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় হাজার হাজার স্থাপনা, অফিস-আদালত, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, দোকানপাট কিংবা কলকারখানা গড়ে উঠেছে। সেই সঙ্গে সেখানে

রয়েছে অনেক বড় বড় শপিং সেন্টার, মার্কেট এবং হাইরাইজ বিল্ডিং, যা ঘিরে সেখানে প্রায় ৫০-৬০ হাজার কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ রয়েছে। সম্পত্তির খাজনা এবং নামজারি বন্ধ রাখার কারণে পুরো ব্যাংকঋণ অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে আছে। এমন অনেক ছোট-বড় ব্যবসায়ী-শিল্পপতি রয়েছেন যাঁরা তাঁদের সম্পত্তি বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে সিসি লোন নিয়েছেন, যা প্রতিবছর নবায়ন করতে হয়। তাঁরা সম্পত্তির হালনাগাদ খাজনার রসিদ দিতে পারছেন না বিধায় নতুন করে ঋণ মঞ্জুর করাতেও পারছেন না। এর ফলে অনেকের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। অনেকে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন।

এসব কারণে শুধু সাধারণ মানুষই যে ব্যাপক হারে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা নয়, একই সঙ্গে সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তিন-চার বছর ধরে খাজনার টাকার পাশাপাশি নামজারি ফি সরকারি কোষাগারে জমা হচ্ছে না। দলিল রেজিস্ট্রি থেকে আয়যোগ্য কোটি কোটি টাকা রাজস্ব পাচ্ছে না সরকার।

রাজউকের একাধিক সূত্র জানায়, রাজউকের আগের চেয়ারম্যানরা মাথা না ঘামালেও বর্তমান চেয়ারম্যান এম বজলুল করিম চৌধুরী পরিকল্পিতভাবে বিষয়টি জটিল করে তুলছেন। নকশা ও দাগসূচি উল্লেখপূর্বক জমি বুঝে নেওয়ার পরও অবমুক্তকৃত জমির মালিকানা দাবি করে তিনি একদিকে লাখ লাখ নগরবাসীকে খেপিয়ে তুলছেন, অন্যদিকে দেশের দুজন রাষ্ট্রপতির আদেশ এবং মন্ত্রিপরিষদের নির্দেশ অমান্য করছেন। রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও সাহাবুদ্দীন আহমদ এবং তাঁদের মন্ত্রিপরিষদ ১৩৮/৬১-৬২ এলএ কেসে ওই সব এলাকার হুকুম দখলকৃত ১৩৮৫ একর সম্পত্তি অবমুক্ত করে দেন, যা পরে ঢাকার তৎকালীন জেলা প্রশাসক সংবাদপত্রে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে সে অবমুক্তির কথা এলাকাবাসীকে অবহিত করেন। এমনকি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া পাবলিক সভায় এ অবমুক্তির পক্ষে মতামত দেন।

একাধিক আইনজ্ঞের মতামত থেকে জানা যায়, প্রেসিডেন্ট অর্ডার, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা, মন্ত্রিপরিষদের জারিকৃত আদেশ অধস্তন কোনো কর্মকর্তা অমান্য করতে পারেন না। সেটা করলে তা রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল হবে। বিশেষ করে, প্রেডিডেন্ট অর্ডার কিংবা প্রধানমন্ত্রীদের নির্দেশনা অমান্য করলে সে অপরাধ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কোনোভাবেই পার পাবেন না। উপসচিব পদমর্যাদার ঢাকার ডিসি এবং যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার রাজউক চেয়ারম্যান যা করছেন সেটা অবশ্যই রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নির্বাহী আদেশের বিপক্ষে অবস্থান করা।

বাড্ডা, ভাটারা, নতুনবাজার, বারিধারা, নদ্দা, জগন্নাথপুর, কুড়িল প্রভৃতি এলাকায় একাধিক দিন ঘুরে স্থানীয় মানুষজনের মাঝে ঢাকার ডিসি এবং রাজউক চেয়ারম্যানের আইন ও গণবিরোধী পদক্ষেপ নিয়ে প্রচণ্ড ক্ষোভ লক্ষ করা গেছে। রাষ্ট্র কর্তৃক অবমুক্তকৃত সম্পত্তি নিজেদের দাবি করার জন্য তাঁদের শাস্তি দাবি করেছেন অনেকে। একই সঙ্গে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপরাধে তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথাও বলেছেন তাঁরা। ঢাকার ডিসি এবং রাজউক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হবে না কেন—এ প্রশ্ন অনেকের।

তথ্য-কালেরকন্ঠ