ঢাকা, এপ্রিল ২৬, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ১০:১৮:০৮

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি বিএফইউজে’র পুনর্বাসন না করে বস্তিবাসীদের উচ্ছেদ করা হবে না: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি হিসেবে ফের নিয়োগ পেলেন বিপ্লব বড়ুয়া সংসদ অধিবেশন উপলক্ষে সংসদ ভবন ও আশপাশের এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ আপিলে দ্বিতীয় দিনে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন ৫১ জন নির্বাচনে ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি সেনাবাহিনী চায় ইসি : পিএসও আদালত আবমাননায় বিচারক সোহেল রানার সাজার বিরুদ্ধে আপিলের রায় ২৩ জানুয়ারি রাজধানীর ২১টি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৪ জন গ্রেফতার : ডিএমপি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হবে কিনা, জানালেন ইসি

যশোরে আওয়ামী লীগ নেতাদের নির্যাতনে হিন্দুপল্লীতে আতংক

| ২২ আষাঢ় ১৪২২ | Monday, July 6, 2015

চলতি বছরের ছয় মাসে যশোরে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর বেশ কয়েকটি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। প্রত্যেকটি ঘটনায় ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা নেতৃত্ব দিয়েছেন। সম্প্রতি বাঁওড় দখলে নিতে চৌগাছায় আওয়ামী লীগ নেতা ইউপি মেম্বার সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে সংখ্যালঘু পরিবারের দু’জনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। এ ঘটনায় তেরজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এর আগে সদর উপজেলার বুকভরা ও শার্শার বাহাদুরপুর গ্রামে আরও দুটি নির্যাতনের ঘটনায় ১১৬টি হিন্দু পরিবার জিম্মি ও ৩১টি পরিবার দেশ ছাড়া হয়েছেন। এমন অভিযোগ নির্যাতনের শিকার পরিবারগুলোর। প্রত্যেকটি ঘটনার পর গণমাধ্যম সোচ্চার হলেও শেষ পর্যন্ত ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায় অভিযুক্তরা। এতে হিন্দুপল্লীতে আতংক বিরাজ করছে। জানা গেছে, ১ জুলাই চৌগাছায় আওয়ামী লীগ নেতা ইউপি মেম্বার সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে বল্লভপুর বাঁওড় অফিস থেকে দু’জনকে তুলে নিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। আহতরা হলেন- বল্লভপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি ও নিমাই বিশ্বাসের ছেলে কার্তিক বিশ্বাস এবং সমিতির সম্পাদক ও বল্লভপুর গ্রামের হরিপদ রায়ের ছেলে সরজিত রায়।হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কার্তিক বিশ্বাস শনিবার সকালে বলেন, ‘বল্লভপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নামে আমরা জেলা প্রশাসন থেকে বাঁওড় তিন বছরের জন্য ইজারা নিয়েছি। বুধবার মাছের পোনা ছাড়ার (অবমুক্ত) জন্য এক গাড়ি মাছ নিয়ে বাঁওড়ে যাই।’ এ সময় সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বর সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে তোতা মিয়া, আইজেল হক, মোহাম্মদ আলী বাটুল, হাসেম আলী, আবদুল মাজিদ, আরশাদ আলী, আব্দার, সরজেদ, আবদুল খালেক, আলমগীর হোসেন, সাহাঙ্গীর আলমসহ একদল দুর্বৃত্ত বাঁওড়ের অফিসে হামলা চালায়।তিনি বলেন, ‘এ সময় তারা সরজিতকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও আমাকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। আহত অবস্থায় আমাদেরকে মেম্বারের বাড়িতে আটকে রেখে জোরপূর্বক সাদা স্ট্যাম্পে বাঁওড় লিখে নেয়ার চেষ্টা করা হয়। আমরা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিতে রাজি না হওয়ায় আরও বেশি নির্যাতন চালানো হয়। পরে পুলিশ আমাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।’এ ঘটনায় ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে চৌগাছা থানায় মামলা হয়েছে। এখনও পুলিশ আসামিদের গ্রেফতার করতে পারেনি। উল্টো সন্ত্রাসীদের হুমকিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বাঁওড়পারের হিন্দুপরিবারগুলো।এর আগে ২৪ ফেব্রুয়ারি যশোর প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনে জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা জানান, সদর উপজেলার ঝাউদিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের মেম্বর আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম মোস্তফা ও সবুজের নির্যাতনে চান্দুটিয়া গ্রামের ১১৬টি হিন্দু পরিবার জিম্মি হয়ে পড়েছে। ১৯ ফেব্র”য়ারি বুকভরা বাঁওড়ের ইজারাদার রবিন বিশ্বাস ও সঞ্জয় বিশ্বাসকে ধরে নিয়ে রাস্তার পাশের বাগানে আটকে মারধর করে মেম্বার মোস্তফা ও তার বাহিনী। বাঁওড় দখলে নিতে তারা এ নির্যাতন চালায়। এছাড়া শার্শা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান ও তার বাহিনীর অত্যাচারে পাঁচ বছরে শাখারিপোতা গ্রামের ৩১টি হিন্দু পরিবার দেশ ছাড়া হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এখন তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন এলাকার আরও ২০০ মানুষ। তার বাহিনীর লোকজন কয়েক মাস আগে শাখারিপোতা গ্রামের রবীন্দ্রনাথকে (রবেন) তুলে নিয়ে যায়। এসময় রবীন্দ্রনাথের স্ত্রী ও মেয়ে তার পায়ে পড়লে নির্যাতন করে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। জন্মাষ্টমীর দিন রবীন্দ্রনাথ তার পরিবারের সবাইকে নিয়ে বেনাপোল পাটবাড়ি মন্দিরে যাওয়ার কথা বলে সবকিছু ফেলে রেখে ভারতে পালিয়ে যায়। শুধু রবীন্দ্রনাথই নয় তার মতো নির্যাতনের শিকার পরিতোষ দাস, গোপীনাথ দাস, গদাই দাস, শীতল পাত্র, রেপকী দাস, সাধন কুমার, সোনাচাঁদ, মনোহর বিশ্বাস, খিতিব চন্দ্র, দুলাল, কানাইসহ ৩১ পরিবার দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, মফিজুর রহমান ও তার বাহিনীর সন্ত্রাসী কার্যকলাপের কথা লিখে প্রধানমন্ত্রী, পুলিশের আইজিপি, ডিআইজি, র‌্যাব সদর দফতর ও পুলিশ সুপার বরাবর পাঠানো হয়েছে। কিন্তু প্রতিকার হয়নি। যশোর জেলা সনাতন বিদ্যার্থী সংসদের সভাপতি প্রসেনজিৎ ঠাকুর বলেন, ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা প্রতিনিয়ত হামলা-দখল করছে। ভয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঘটনাগুলো ধাপাচাপা পড়ে যায়। যে ঘটনাগুলো গণমাধ্যমে আসে সেগুলোও থমকে যায় ক্ষমতাসীনদের চাপে। ফলে আপসের নামে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষগুলো। এ ব্যাপারে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, যারা ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করেছে তারা দলের কেউ নয়। এসব সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে প্রশাসন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। যশোরের জেলা প্রশাসক ড. হুমায়ুন কবির বলেন, চৌগাছার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আইন অনুযায়ী দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।