ঢাকা, মে ৫, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ০৭:২৪:৪২

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

একীভূত হতে চাওয়া ব্যাংকের সম্পদের দাম যেভাবে নির্ধারণ করা হবে টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি বিএফইউজে’র দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিএনপির মাথাব্যথার কারণ নেই : ওবায়দুল কাদের বিএনপি একটি রাজনৈতিক দৈত্যের দল : পররাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তি বজায় রাখার জন্য যা-যা করার আমরা করবো: বান্দরবানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবারের ঈদ যাত্রাও স্বস্তিদায়ক হচ্ছে: সেতুমন্ত্রী কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট শিশুদের নতুন করে বাঁচার পথ খুলে দেয় : সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ আসন্ন পবিত্র রমজানে সরকারিভাবে বড় ইফতার পার্টি না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর পুলিশকে জনগণের বন্ধু হয়ে নিঃস্বার্থ সেবা দেয়ার নির্দেশ রাষ্ট্রপতির

মধ্যরাতেই সরানো হলো সুপ্রিম কোর্ট চত্বরের ভাস্কর্য

| ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৪ | Friday, May 26, 2017

সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে স্থাপিত ভাস্কর্যটি গতকাল মধ্যরাতে সরানোর কাজ শুরু হয়। ছবিটি রাত সাড়ে ১২টার দিকে তোলা l সাজিদ হোসেন

সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে স্থাপিত ভাস্কর্যটি গতকাল মধ্যরাতে সরানোর কাজ শুরু হয়। ছবিটি রাত সাড়ে ১২টার দিকে তোলা l

হেফাজতে ইসলামসহ ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দলের অব্যাহত দাবির মুখে সুপ্রিম কোর্ট চত্বর থেকে ভাস্কর্য সরানো হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে শুরু হয় ভাস্কর্য সরানোর কাজ। রাত চারটার দিকে ভাস্কর্যটি সরানোর কাজ শেষ হয়।

পবিত্র রমজান মাস শুরুর আগেই ভাস্কর্যটি না সরালে আন্দোলনের হুমকি দিয়ে আসছিল ধর্মভিত্তিক দলগুলো। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে ওই সব দল। তবে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রগতিশীল ব্যক্তিরা ভাস্কর্যটি অপসারণের বিরোধিতা করে আসছিলেন।

বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে সরেজমিন দেখা যায়, ভাস্কর্যটির নির্মাতা মৃণাল হক ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে এটি যত্ন করে সরানোর কাজ তত্ত্বাবধান করেন। এ সময় সুপ্রিম কোর্ট চত্বর ও এর আশপাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

রাত সাড়ে ১২টার পর গিয়ে দেখা যায়, সুপ্রিম কোর্ট চত্বরের চারদিকের ফটক লাগানো। গণমাধ্যমকর্মীরা সুপ্রিম কোর্টের পূর্ব দিকের ফটকের বাইরে অবস্থান করছেন। ভেতরে তিন-চারজন শ্রমিক ভাস্কর্যের নিচের দিকে হাতুড়ি-শাবল দিয়ে কাজ করছেন। ১০-১২ জন তা তত্ত্বাবধান করছেন। সেখানে একজনকে মুঠোফোনে কথা বলতে দেখা যায়। তিনি ভাস্কর্যটির স্থপতি মৃণাল হক।

যোগাযোগ করা হলে মৃণাল হক প্রথম আলোকে বলেন, সেখানে থাকা ভাস্কর্যটি সরানোর জন্য বিকেলে তাঁকে বলা হয়েছে। রাত সাড়ে ১১টা থেকে তা সরানোর কাজ শুরু হয়। ভাস্কর্যটি সরাতে গিয়ে যেন নষ্ট না হয়, তিনি তা দেখছেন। এটি সরিয়ে কোথায় রাখা হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি শুনেছেন এখান থেকে সরিয়ে সুপ্রিম কোর্টের অ্যানেক্স ভবনের আশপাশে কোথাও রাখা হবে। এখন রাখা হবে সুপ্রিম কোর্টের পেছনে।

রাত সোয়া একটার দিকে সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাংবাদিকদের মৃণাল হক বলেন, ‘আমার কিছু বলার নেই। আমাকে চাপ দিয়ে ভাস্কর্যটি সরানো হচ্ছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা কী করে গ্রিক ভাস্কর্য হলো, যার পরনে শাড়ি। এটি বাঙালি মেয়ে। এরপর নির্দেশ আসবে অপরাজেয় বাংলা ভাঙা হোক। অন্যান্য ভাস্কর্য সরানো হোক। তিনি বলেন, দেশের শান্তি রক্ষার স্বার্থে যত্ন করে ভাস্কর্যটি সরাচ্ছেন তিনি।

রাত দুইটার দিকে বেশ কিছু তরুণকে সুপ্রিম কোর্টের মূল ফটকের বাইরে স্লোগান দিতে দেখা যায়। আড়াইটার দিকে তাঁরা ফটক ধাক্কাধাক্কি করেন। সেখানে ছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

যোগাযোগ করা হলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ডেকেছিলেন এবং ভাস্কর্য বিষয়ে মতামত নিয়েছিলেন। এ সময় জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য ভাস্কর্যটি এখান থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য মত দিয়েছিলেন। আমরা বলেছি ভাস্কর্যটি সুপ্রিম কোর্ট অ্যানেক্স ভবনসংলগ্ন জাদুঘরের সামনে স্থাপন করা যেতে পারে।’ তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের নির্দেশে ভাস্কর্যটি সরানো হচ্ছে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ভাস্কর্যটি অপসারণের দাবিতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠান। বিবৃতিতে ভাস্কর্যটিকে মূর্তি হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। এরপর থেকে ভাস্কর্যটি সরানোর দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছিল সংগঠনটি। এই ‘মূর্তি’ সরানো না হলে আবারও শাপলা চত্বর ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দেবেন বলে জানান সংগঠনটির নেতারা। এর আগে ১৩ দফা দাবিতে ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও সহিংসতা হয়েছিল।

গত ১১ এপ্রিল রাতে গণভবনে কওমি মাদ্রাসার বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিদের এক সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তিনি উচ্চ আদালত প্রাঙ্গণের সামনে স্থাপিত গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য সরানোর পক্ষে। তিনি বলেন, ‘আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এটা এখানে থাকা উচিত নয়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের হাইকোর্টের সামনে গ্রিক থেমিসের এক মূর্তি লাগানো হয়েছে। সত্য কথা বলতে কি, আমি নিজেও এটা পছন্দ করিনি। কারণ, গ্রিক থেমিসের মূর্তি আমাদের এখানে কেন আসবে।’

গত বছরের শেষ দিকে এ ভাস্কর্যটি সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বসানো হয়।

তথ্য-প্রথমআলো