ঢাকা, এপ্রিল ২৬, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ১৬:১৭:৪৭

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

একীভূত হতে চাওয়া ব্যাংকের সম্পদের দাম যেভাবে নির্ধারণ করা হবে টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি বিএফইউজে’র দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিএনপির মাথাব্যথার কারণ নেই : ওবায়দুল কাদের বিএনপি একটি রাজনৈতিক দৈত্যের দল : পররাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তি বজায় রাখার জন্য যা-যা করার আমরা করবো: বান্দরবানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবারের ঈদ যাত্রাও স্বস্তিদায়ক হচ্ছে: সেতুমন্ত্রী কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট শিশুদের নতুন করে বাঁচার পথ খুলে দেয় : সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ আসন্ন পবিত্র রমজানে সরকারিভাবে বড় ইফতার পার্টি না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর পুলিশকে জনগণের বন্ধু হয়ে নিঃস্বার্থ সেবা দেয়ার নির্দেশ রাষ্ট্রপতির

মতিয়ারের অত্যাচারে দাসপাড়াবাসীর চোখে ঘুম নেই

| ২১ শ্রাবণ ১৪২২ | Wednesday, August 5, 2015

 খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার মাগুরাঘোনা ইউনিয়নের দাসপাড়া। শান্ত-সুনিবিড় এই পাড়ায় ছোট ছোট মাটির ঘরে দলিত সম্প্রদায়ের (ঋষি) শান্তিপ্রিয় ৮০টি পরিবারের বসবাস। পাড়ার মূল রাস্তার পাশে ছোট একটি দোকান। এখানে বসেই সারা দিন ফন্দি আঁটেন আর ইচ্ছামাফিক দলবল নিয়ে নিরীহ এ মানুষগুলোর ওপর অত্যাচারের খড়্গ চালান মতিয়ার।

মেয়েদের বিয়ে, সন্তানদের স্কুলে পাঠানো, ব্যক্তিগত গবাদিপশু ও গাছ বিক্রি, সালিস—এমন কোনো কাজ নেই, যা স্বাধীনভাবে করতে পারে এ পাড়ার বাসিন্দারা। বছরের পর বছর সব কাজেই তাদের ওপর সন্ত্রাসী মতিয়ার বাহিনীর চাঁদাবাজি-খবরদারি। পান থেকে চুন খসলেই হামলা-মারধর।
অভিযোগ উঠেছে, এ পাড়ার মেয়ে ও গৃহবধূদের অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছে বাহিনীর লোকজন। প্রতিবাদ করলেই মারধর। সম্প্রতি পাড়ার একজনের ওপর হামলার পর এখন রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন এখানকার পুরুষ সদস্যরা।
সরেজমিন দাসপাড়া ঘুরে ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাহিনীর সদস্যদের প্রাণনাশের হুমকিতে কোনো কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না দলিত সম্প্রদায়ের মানুষেরা। নীরবেই সব সহ্য করছেন তাঁরা।
মাগুরাঘোনা ইউনিয়নের আসফার সরদারের ছেলে মতিয়ার সরদার (৩৫) ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, তাঁর আশ্রয়দাতার ভূমিকায় আছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আবুল হোসেন।
সন্ত্রাসী মতিয়ারের সংঘবদ্ধ বাহিনীর সদস্যসংখ্যা ২০ থেকে ২৫ জন। বাহিনীর অন্যতম নাটের গুরু ভাগনে সোহেল মোড়ল। নিজেকে ছাত্রলীগের কর্মী দাবি করেন সোহেল। তাঁর বিরুদ্ধে চিংড়ি পোনাসহ ট্রাক ছিনতাইয়ের অভিযোগও আছে বলে এলাকাবাসী জানান। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের মধ্যে আছেন মোজাফ্ফর, শহিদুল শেখ, ইয়াসিন আলী।
মতিয়ার ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি হওয়ার কথাটি নিশ্চিত করেছেন আওয়ামী লীগের নেতা শেখ আবুল হোসেন। মতিয়ার তাঁর নির্দেশে কাজ করেন কি না, জানতে চাইলে বলেন, ‘মতিয়ার আমার নির্দেশে কাজ করে না। তবে সংগঠনের ছেলে হিসেবে তাকে সহযোগিতা করতে হয়।’
মতিয়ার বাহিনীর অত্যাচারের বর্ণনা দিয়েছেন বাসিন্দাদের অনেকেই। সম্প্রতি এক বাবা তাঁর মেয়ের বিয়ের উদ্যোগ নেন। খবর পেয়ে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন মতিয়ার সরদার। বাবা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে মেয়েটির বিয়ে দিতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেন মতিয়ার।
এ ঘটনার কিছুদিন পর ওই পরিবার একটি ঝামেলায় পড়লে মতিয়ার স্বপ্রণোদিত হয়ে দলবল নিয়ে সালিস ডাকেন। সালিসে ওই বাবাকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় এবং তাঁর গোয়ালঘর থেকে একটি গরু নিয়ে যায় মতিয়ারের লোকজন।
মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে আরেক বাবার কাছে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন এই মতিয়ার। অভাবের কারণে তিনি টাকা দিতে পারেননি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁর একটি গরু নিয়ে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেওয়া হয়।
এলাকা ঘুরে এ রকম আরও বেশ কিছু অত্যাচারের কাহিনি জানা গেছে। অনেকে প্রকাশ্যে নির্যাতনের কথা জানালেও নিরাপত্তার কথা ভেবে তাঁদের নাম প্রকাশ করা হলো না।
এলাকাবাসী বলেন, মতিয়ার উচ্চ সুদে তাঁদের ঋণ নিতে বাধ্য করেন। ঋণ নেওয়ার সময় সাদা স্ট্যাম্পে সই বা টিপসই করিয়ে নেন। সময়মতো ঋণের টাকা দিতে ব্যর্থ হলে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি ধরে নিয়ে যায় তাঁর বাহিনী। কেটে নিয়ে যায় বাড়ির গাছপালা। আবার এ পাড়ার কোনো গরু, ছাগল বা গাছ বিক্রি করলে তারও একটা অংশ চাঁদা হিসেবে দিতে হয় মতিয়ারকে।
এসব ঘটনায় অতিষ্ঠ একজন বাসিন্দা বেসরকারি সংস্থা ‘পরিত্রাণ’-এর সহায়তায় গত ৮ জুলাই ডুমুরিয়া থানায় একটি মামলা করেন। মামলার এজাহারভুক্ত আসামি সোহেল মোড়ল ও শহীদুল শেখ গ্রেপ্তার হলেও পুলিশ মতিয়ারকে ধরেনি। মামলা করায় প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বাদী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের।
বাসিন্দারা বলেন, মামলার দিন রাতেই পাড়ায় হামলা চালাতে আসে মতিয়ার বাহিনী। কিন্তু সবাই সংগঠিত হয়ে ধাওয়া করলে তারা পালিয়ে যায়। হামলার আশঙ্কায় এরপর থেকে রাত জেগে এলাকা পাহারা চলছে।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে মতিয়ারের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে প্রতিবারই তা অন্য মানুষকে ধরিয়ে দেওয়া হয়। তাঁরা অভিযোগের ব্যাপারে কিছু বলতে রাজি হননি।
তবে ভাগনে সোহেলকে এলাকার উঠতি সন্ত্রাসী উল্লেখ করে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম মসিউর রহমান বলেন, ‘সে এলাকায় অনেক অপকর্ম করে আসছে। তার বিরুদ্ধে কেউ কোনো অভিযোগ করত না। এ কারণে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারিনি। অভিযোগ পেয়েই তাকে গ্রেপ্তার করেছি। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
ওসি দাবি করেন, ‘মতিয়ারের ব্যাপারে এর আগে কখনো কোনো অভিযোগ আসেনি। তাই তাঁর ব্যাপারে তেমন কিছু জানি না।’
জানতে চাইলে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলামও বলেন, তাঁদের কাছে মতিয়ার বাহিনী সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই। তবে কেউ অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।