ঢাকা, মে ৩, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ০৬:৩৬:১১

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি বিএফইউজে’র পুনর্বাসন না করে বস্তিবাসীদের উচ্ছেদ করা হবে না: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি হিসেবে ফের নিয়োগ পেলেন বিপ্লব বড়ুয়া সংসদ অধিবেশন উপলক্ষে সংসদ ভবন ও আশপাশের এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ আপিলে দ্বিতীয় দিনে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন ৫১ জন নির্বাচনে ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি সেনাবাহিনী চায় ইসি : পিএসও আদালত আবমাননায় বিচারক সোহেল রানার সাজার বিরুদ্ধে আপিলের রায় ২৩ জানুয়ারি রাজধানীর ২১টি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৪ জন গ্রেফতার : ডিএমপি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হবে কিনা, জানালেন ইসি

বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার ও রিমান্ড : হাইকোর্টের নির্দেশনা বহাল

| ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৩ | Tuesday, May 24, 2016

ঢাকা : ৫৪ ধারায় বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার এবং ১৬৭ ধারার রিমান্ড আইন সংশোধন সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ আজ এ রায় দেয়। সংক্ষিপ্ত রায়ে আদালত আপিল খারিজ করলেও কিছু মডিফিকেশন থাকবে বলে উল্লেখ করেছে। এ ব্যাপারে কিছু গাইডলাইন দেওয়া হবে বলে আদালত উল্লেখ করেছে।
রায়ের পর সিনিয়র আইনজীবী ড. কামাল হোসেন বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেফতার ও ১৬৭ ধারার রিমান্ড সংক্রান্ত বিষয়ে হাইকোর্টের রায়ে যে ১৫ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল সেগুলোই আপিল বিভাগ বহাল রেখেছে। তবে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় পেলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম বলেন, হাইকোর্টের ১৫ দফা নির্দেশনা আপিল বিভাগ কখনও স্থগিত করেনি। সরকারের আপিল খারিজ হওয়ায় এ সব নির্দেশনা প্রতিপালন করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্তব্য। আইনের শাসন রক্ষার জন্যই এটি করতে হবে। তিনি বলেন, আইন সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত এ নির্দেশনাগুলোই কার্যকর থাকবে।
রিট আবেদনকারী পক্ষের অন্যতম আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনাগুলি বহাল থাকছে। তা মানায় এক ধরনের বাধ্যবাধকতা তৈরি হল। ১৮ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটল।
রিট আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী ইদ্রিসুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, অন্য একটি মামলায়ও আদালত ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৩৯ এবং ৪৩৯ এ ধারা পরস্পরের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে তা সংশোধনের পক্ষে রায় দিয়েছিল। কিন্তু ৩৩ বছরেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। আজ এই মামলায় আপিল বিভাগ বলেছে, হাইকোর্টের সুপারিশগুলো কিছু সংশোধন করে একটি গাইডলাইন করে দেবে। গাইডলাইনে কী থাকবে তা পূর্ণাঙ্গ রায় পেলে জানা যাবে।
গত ১৭ মে আপিলের ওপর রাষ্ট্র ও রিটকারী পক্ষে শুনানি শেষে বিষয়টি আজ রায়ের জন্য ধার্য ছিলো। রায়ের সময় রাষ্ট্রপক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা।
১৯৯৮ সালে ডিবি পুলিশ ঢাকার সিদ্ধেশরী এলাকা থেকে বেসরকারী বিশ^বিদ্যালয় ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনির্ভাসিটির ছাত্র শামীম রেজা রুবেলকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করে। পরে পুলিশী হেফাজতে থাকা অবস্থায় রুবেল মারা যায়। ওই ঘটনার পর বিচারপতি হাবিবুর রহমান খানের নেতৃত্বে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে সরকার। তদন্ত শেষে ওই কমিটি ৫৪ ও ১৬৭ ধারা সংশোধনের পক্ষে কয়েকটি সুপারিশ করে। সেসব সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়ায় এবং পুলিশ হেফাজতে রুবেলের মৃত্যুর ঘটনায় মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাষ্ট) হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করে। ২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল হাইকোর্ট ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেফতার ও রিমান্ড সংক্রান্ত ১৬৭ ধারার বিধান ৬ মাসের মধ্যে সংশোধনে রায় দেয়। পাশাপাশি উক্ত ধারা সংশোধনের পূর্বে হাইকোর্টের কয়েক দফা নির্দেশনা মেনে চলার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়।
হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৪ সালে আপিল দায়ের করে তৎকালীন সরকার। তখন আপিল বিভাগ “লিভ পিটিশন” মঞ্জুর করলেও হাইকোর্টের নির্দেশনাসূমহ স্থগিত করেনি। গত ২২ মার্চ আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয় এবং গত ১৭ মে উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আজ রায় দেয় সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ।
হাইকোর্টের নির্দেশনায় বলা হয়েছিলো: ক. আটকাদেশ (ডিটেনশন) দেয়ার জন্য পুলিশ কাউকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করতে পারবে না। খ. কাউকে গ্রেফতার করার সময় পুলিশ তার পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য থাকবে। গ. গ্রেফতারের কারণ একটি পৃথক নথিতে পুলিশকে লিখতে হবে। ঘ. গ্রেফতারকৃতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকলে তার কারণ লিখে তাকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে ডাক্তারি সনদ আনবে পুলিশ। ঙ. গ্রেফতারের তিন ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতারকৃতকে এর কারণ জানাতে হবে। চ. বাসা বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য স্থান থেকে গ্রেফতারকৃতর নিকটাত্মীয়কে এক ঘন্টার মধ্যে টেলিফোন বা বিশেষ বার্তাবাহক মারফত বিষয়টি জানাতে হবে। ছ. গ্রেফতারকৃতকে তার পছন্দসই আইনজীবী ও নিকটাত্মীয়র সঙ্গে পরামর্শ করতে দিতে হবে। জ. গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদের (রিমান্ড) প্রয়োজন হলে ম্যাজিষ্ট্রেটের আদেশক্রমে কারাগারের অভ্যন্তরে কাঁচ নির্মিত বিশেষ কক্ষে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। তখন কক্ষের বাইরে তার আইনজীবী ও নিকটাত্মীয় থাকতে পারবেন। ঝ. কারাগারে জিজ্ঞাসাবাদে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া না গেলে তদন্তকারী কর্মকর্তা ম্যাজিষ্ট্রেটের আদেশক্রমে সর্বোচ্চ তিনদিন পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে। তবে এ ক্ষেত্রে উপযুক্ত কারণ থাকতে হবে। ঞ. জিজ্ঞাসাবাদের আগে ও পরে ওই ব্যক্তির ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে হবে। ট. পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ উঠলে ম্যাজিষ্ট্রেট সঙ্গে সঙ্গে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করবেন। বোর্ড যদি বলে ওই ব্যক্তির ওপর নির্যাতন করা হয়েছে তাহলে পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ম্যাজিষ্ট্রেট ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং তাকে দন্ডবিধির ৩৩০ ধারায় অভিযুক্ত করা হবে। ঠ. পুলিশ হেফাজতে বা কারাগারে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি মারা গেলে সঙ্গে সঙ্গে নিকটস্থ ম্যাজিষ্ট্রেটকে জানাতে হবে। ড. পুলিশ বা কারা হেফাজতে কেউ মারা গেলে ম্যাজিষ্ট্রেট সঙ্গে সঙ্গে তা তদন্তের ব্যবস্থা করবেন। মৃত ব্যক্তির ময়না তদন্ত করতে হবে। ময়না তদন্তে যদি মনে হয় ওই ব্যক্তি কারা বা পুলিশ হেফাজতে মারা গেছে তাহলে ম্যাজিষ্ট্রেট মৃত ব্যক্তির আত্মীয়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তা তদন্তের নির্দেশ দিবেন।