ঢাকা, মে ৩, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ০৭:২৮:৩৬

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি বিএফইউজে’র পুনর্বাসন না করে বস্তিবাসীদের উচ্ছেদ করা হবে না: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি হিসেবে ফের নিয়োগ পেলেন বিপ্লব বড়ুয়া সংসদ অধিবেশন উপলক্ষে সংসদ ভবন ও আশপাশের এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ আপিলে দ্বিতীয় দিনে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন ৫১ জন নির্বাচনে ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি সেনাবাহিনী চায় ইসি : পিএসও আদালত আবমাননায় বিচারক সোহেল রানার সাজার বিরুদ্ধে আপিলের রায় ২৩ জানুয়ারি রাজধানীর ২১টি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৪ জন গ্রেফতার : ডিএমপি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হবে কিনা, জানালেন ইসি

বিচারাধীন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে : শেখ হাসিনা

| ১২ শ্রাবণ ১৪২৩ | Wednesday, July 27, 2016

সংসদ ভবন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন দেওয়ানী ও ফৌজদারী মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে বর্তমান সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

প্রধানমন্ত্রী আজ সংসদে তাঁর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদের এক প্রশ্নের জাবাবে আরো বলেন, এসব পদক্ষেপের ফলে এ বিষয়ে
উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হয়েছে।।
তিনি বলেন, পুরাতন মামলাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিষ্পত্তির লক্ষ্যে প্রত্যেক আদালত সাক্ষীর সমন জারী নিশ্চিত পূর্বক সাক্ষীগণকে হাজির করে দ্রুততম সময়ে সাক্ষ্য গ্রহণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। পুরাতন মামলাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সলিসিটরের নেতৃত্বে মনিটরিং সেল কাজ করছে। মনিটরিং সেল গঠিত হওয়ার পর হতে দেশের বৃহত্তর জেলাগুলোতে পর্যায়ক্রমে ৫ থেকে ১০ বছর এবং ১০ বছরের অধিক সময়ের পুরাতন ফৌজদারী মামলাসমূহ দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে মতবিনিময় সভার আয়োজন করছে এবং মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সুপরিশমালা প্রণয়ন করছে। সর্বশেষ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশের ৬টি বৃহত্তর জেলায় মনিটরিং সেল মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতি জেলায় কেস ম্যানেজম্যান্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে বিচারকের শূন্যপদ পূরণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং আরও অধিক সংখ্যক বিচারক নিয়োগসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে। বিচার কাজে গতিশীলতা বাড়ানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের বিচারকের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে এবং উচ্চ আদালতে ও নিম্ন আদালতে বিচারক নিয়োগ অব্যাহত রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিগত ৭ বছরে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট, আপিল বিভাগে ১৭ জন এবং হাইকোর্ট বিভাগে ৪৭ জন বিচারক নিয়োগ করা হয়েছে। পাশাপাশি অধঃস্তন আদালতে চার ব্যাচে ৫৮৭ জন সহকারী জজ নিয়োগ করা হয়েছে। ৩৪০ জনকে অতিরিক্ত জেলা জজ হতে জেলা জজ পদে, ২৭৫ জনকে যুগ্ম জেলা জজ হতে অতিরিক্ত জেলা জজ পদে, ৩৪০ জনকে সিনিয়র সহকারী জজ হতে যুগ্ম জেলা জজ পদে ও ৭৬৩ জনকে সহকারী জজ হতে সিনিয়র সহকারী জজ পদে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতি সম্প্রতি ২১৫ জন সিনিয়র সহকারী জজ বা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অথবা সমপর্যায়ের বিচারকদের যুগ্ম জেলা জজ বা সমপর্যায়ের পদে পদোন্নতি প্রদান করায় উক্ত পদগুলো শূন্য হয়েছে। ইতোমধ্যে ৯ম জুডিসিয়াল সার্ভিস পরীক্ষার মাধ্যমে সহকারী জজ বা সমপর্যায়ের কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য ১শ’ জন প্রার্থীকে মনোনীত করা হয়েছে। মনোনীত প্রার্থীদের চূড়ান্তভাবে নিয়োগের জন্য তাদের প্রাক-পরিচয় পুলিশের মাধ্যমে যাচাইয়ের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুরোধ জানিয়ে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এছাড়া ৪১টি নারী ও শিশু নির্যাতন অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল (সহায়ক কর্মচারীসহ) সৃজনের কার্যক্রমও বর্তমানে চলমান রয়েছে। তাছাড়া, ঢাকা ও চট্টগ্রামে ২টি সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনাল সৃজনের ফলে মোকাদ্দমার নিষ্পত্তির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের বিগত ৭ বছরে (২০১৫ সাল পর্যন্ত) সকল জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এবং সমপর্যায়ের ট্রাইব্যুনাল নিষ্পতিকৃত মোট দেওয়ানী মামলার সংখ্যা ১২ লাখ ১৮ হাজার ৩৬৩টি এবং ফৌজদারী মামলা সংখ্যা ১৩ লাখ ১১ হাজার ১৮৭টি। তাছাড়া, সকল সিএমএম/সিজেএম আদালতে মোট ৪৮ লাখ ১২ হাজার ২৭৪টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দ্রুততম সময়ে বিচারিক আদালত কর্তৃক সাক্ষ্য প্রমাণ গ্রহণ শেষে সিলেটের চাঞ্চল্যকর শিশু রাজন হত্যা মামলা এবং খুলনার চাঞ্চল্যকর শিশু রাকিব হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সিলেটের চাঞ্চল্যকর শিশু রাজন হত্যা মামলায় অভিযোগ দায়েরের
পর ১৭ কার্যদিবসে অভিযোগ পত্রে উল্লেখিত ৩৮ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শুনানী শেষে রায় ঘোষণা করা হয়েছে। উক্ত রায়ে ১৩ জন আসামীর মধ্যে ৪ জনের মৃত্যুদন্ড, ১ জনের যাবজ্জীবন কারাদ-, ৩ জনের ৭ বছরের কারাদ-, ২ জনের ১ বছর কারাদ- এবং ৩ জনকে খালাস প্রদান করা হয়েছে। ডেথ রেফারেন্স শুনানীর জন্য ইতোমধ্যে নথি হাইকোর্ট বিভাগে প্রেরণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৫ সালে ৩ আগস্ট খুলনায় শিশু রাকিবকে পৈশাচিক ও নির্মমভাবে হত্যা করা হলে উক্ত তারিখে থানায় মামলা দায়ের করা হয়। ২০১৫ সালে ২৫ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দায়ের করা হলে ২০১৫ সালে ৪ অক্টোবর বিচারিক আদালত চার্জ গঠন করেন। ২০১৫ সালে ১১ অক্টোবর সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু করে ২০১৫ সালে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত অভিযোগ পত্রে উল্লেখিত ৪০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শুনানী শেষে ২০১৫ সালে ৮ নভেম্বর ৩ জন আসামীর মধ্যে ২ জন আসামীকে মৃত্যুদ- ও ১ জন আসামীকে খালাস প্রদান করে রায় ঘোষণা করা হয়।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার বিগত ২০১০ সালে ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত (৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখ পর্যন্ত) সর্বমোট ৪২টি মামলা বিচারের জন্য গ্রহণ করা হয় ও ২২টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে এবং অবশিষ্ট ৬টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এ পর্যন্ত ৫টি মামলায় প্রদত্ত মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে। অস্বচ্ছল নাগরিককে আইনি সেবা প্রদানের জন্য বর্তমান সরকার ৬৪টি জেলায় জেলা লিগ্যাল এইড অফিস স্থাপন করেছে এবং জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে কর্মসম্পাদনের লক্ষ্যে জেরা লিগ্যাল এইড অফিসার ব্যতীত কর্মচারীর ১৯২টি পদ সৃজন করে নিয়োগ প্রদান করেছে। উক্ত লিগ্যাল এইড অফিসে আইনগত সেবা ছাড়াও ৩টি হট লাইন নম্বর ০১৭৬১২২২২২২২, ০১৭৬১২২২২২৩ এবং ০১৭৬১২২২২২৪ এর মাধ্যমে লিগ্যাল এইড বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। আমি ২০১৬ সালে ২৮ এপ্রিল সরকারি আইনি সহায়তায় জাতীয় হেল্প লাইন উদ্বোধনী করি, যার মাধ্যমে যে কোন ব্যক্তি ১৬৪৩০ নম্বরে টোল ফ্রি কল করে আইনে সহায়তা পেতে পারেন।
শেখ হাসিনা বলেন, এডিআর (অল্টারনেটিভ ডিসপুট রিসোলুশন বা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি) এর মাধ্যমে মামলার জট কমানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার মাধ্যমে সম্পূর্ণ সরকারি খরচে ২০১৬ সালে এপ্রিল পর্যন্ত মোট সরকারি আইনি সহায়তা প্রাপকের সংখ্যা ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪৮ জন, কারাগারে আটককৃত ব্যক্তির আইন সহায়তা প্রাপকের সংখ্যা ৩০ হাজার ৩৬৪ জন, আইনগত সহায়তা প্রাপ্ত নিষ্পত্তিকৃত মোট দেওয়ানী মামলার সংখ্যা ১৮ হাজার ২৩টি এবং মোট ফৌজদারী মামলার সংখ্যা ৩৪ হাজার ৫০১টি, জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার কর্তৃক প্রদত্ত আইনগত পরামর্শ গ্রহীতার মোট সংখ্যা ১৩ হাজার ৫৩ জন, জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার কর্তৃক পরিচালিত মিমাংসা বা মধ্যস্থতা (এডিআর) মাধ্যমে নিষ্পত্তিকৃত মামলা বা বিরোধের সংখ্যা ১ হাজার ১২৫টি, উপকার ভোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৬৭ জন এবং আদায়কৃত অর্থের মোট পরিমাণ ১ কোটি ৫০ লাখ ১৭ হাজার ৩শ’ টাকা, সুপ্রিমকোর্টে জেল আপিল মামলার সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৪৫০ জন, হটলাইনের মাধ্যমে আইনগত তথ্য সেবা গ্রহণকারী সংখ্যা ১৬ হাজার ৯২৭ জন। অতএব ২০১৬ সালে এপ্রিল পর্যন্ত সর্বমোট সরকারি আইনি সহায়তা প্রাপকের সংখ্যা ১ লাখ ৭১ হাজার ৮৪৯ জন।