ঢাকা, মে ৬, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ০৪:৩৬:৪২

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

একীভূত হতে চাওয়া ব্যাংকের সম্পদের দাম যেভাবে নির্ধারণ করা হবে টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি বিএফইউজে’র দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিএনপির মাথাব্যথার কারণ নেই : ওবায়দুল কাদের বিএনপি একটি রাজনৈতিক দৈত্যের দল : পররাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তি বজায় রাখার জন্য যা-যা করার আমরা করবো: বান্দরবানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবারের ঈদ যাত্রাও স্বস্তিদায়ক হচ্ছে: সেতুমন্ত্রী কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট শিশুদের নতুন করে বাঁচার পথ খুলে দেয় : সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ আসন্ন পবিত্র রমজানে সরকারিভাবে বড় ইফতার পার্টি না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর পুলিশকে জনগণের বন্ধু হয়ে নিঃস্বার্থ সেবা দেয়ার নির্দেশ রাষ্ট্রপতির

ফেসবুকে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি রংপুরে পুলিশ-মুসল্লি সংঘর্ষ শিবমন্দিরে অগ্নিসংযোগ, ১২ বাড়ি ভাংচুর লুটপাট

| ২৭ কার্তিক ১৪২৪ | Saturday, November 11, 2017

ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননাকর স্ট্যাটাস দেয়ার অভিযোগ তুলে শুক্রবার রংপুরের গঙ্গাচড়ার হরকলি ঠাকুরপাড়া গ্রামে পুড়িয়ে দেয়া হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি। নিজ বাড়ির সামনে এক বৃদ্ধার আহাজারি

রংপুরে পুলিশ ও মুসল্লিদের সংঘর্ষে দু’জন নিহত হয়েছেন। এ সময় আরও ৩০ জন আহত হন। ফেসবুকে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করার প্রতিবাদে শুক্রবার দুপুরে মুসল্লিরা সমাবেশ করার পর হিন্দুপাড়ায় ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এতে পুলিশ বাধা দিলে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। সদর উপজেলার খলেয়া ইউনিয়নের শলেয়া শাহ বাজারে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী ঠাকুরপাড়ার হিন্দু সম্প্রদায়ের ১২টি বাড়ি ভাংচুর ও একটি শিবমন্দির পুড়িয়ে দিয়েছে। এ সময় ওইসব বাড়িতে লুটপাটও করা হয়। জুমার নামাজ শেষে এলাকার ১০টি মসজিদ থেকে মুসল্লিদের ঠাকুরপাড়া গ্রামে মানববন্ধন ও সমাবেশের ডাক দিলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। আহ্বানে সাড়া দিয়ে পাশের আটটি গ্রামের ১০ হাজারের অধিক মুসল্লি ঠাকুরপাড়া গ্রামে সমাবেশে যোগ দেয়। সমাবেশ চলাকালে একটি মহল হঠাৎ উত্তেজনা ছড়িয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় তারা একটি শিবমন্দিরে আগুন ধরিয়ে দিলে তা ভস্মীভূত হয়। এ সময় খগেন চন্দ্র রায়, খিরোদ চন্দ্র রায়, সুধীর চন্দ্র রায়, অমূল্য রায়, বিধান রায়, বিপুল রায়, কৌশল্লা, সুধীর মহন্তসহ ১২টি বাড়িতে হামলা করে ভাংচুর করা হয়। এ সময় নূপুর রায়ের একটি গুদাম ঘরসহ প্রায় ২৫টি বাড়িতে লুটপাট করা হয়। পরে হামলাকারীরা রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কে প্রায় এক কিলোমিটারজুড়ে অবস্থান নেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে তারা পুলিশের ওপর দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালান। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অর্ধশতাধিক টিয়ার শেল ও ৩০ রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়ে। সংঘর্ষের সময় হাবিবুর রহমান (২৬) ও সিএনজি চালক হামিদুল ইসলাম (৩০) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। পুলিশসহ ৩০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে জাহাঙ্গীর হোসেন (২৫), মাহবুল ইসলাম (৩০), রিপন ইসলাম (২৫), আমিনুল ইসলাম (৩৫), শাহজাহান মিয়াসহ (৪৫) ছয়জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। বাকিরা পুলিশের গ্রেফতার এড়াতে গোপনে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বিকালে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত এ সংঘর্ষ চলে। পুলিশ এলাকা ঘিরে রেখেছে।

 

রংপুর পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবিএম জাকির হোসেন বলেন, তারা এ ঘটনা নিয়ে কয়েক দিন ধরে এলাকার লোকজনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। মামলার আসামিকে গ্রেফতারের জন্য চেষ্টা করে আসছেন। এমনকি আসামিকে গ্রেফতারের জন্য নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় পুলিশ অভিযান চালায়। কিন্তু অভিযুক্ত টিটুল চন্দ্র রায়কে পাওয়া যায়নি। পুলিশের একাধিক সদস্য শুক্রবার এলাকার বিভিন্ন মসজিদে নামাজ আদায় করে গ্রামবাসীকে উসকানি না ছড়ানোর আহ্বান জানান। কিন্তু একটি মহল মসজিদে মসজিদে গোপনে প্রচারণা চালিয়ে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সমাবেশের নামে এই ধর্মীয় উন্মানদনা ছড়িয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এখন পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের সাতজন সদস্য আহত হয়েছে। তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে পরিস্থিতি আরও অবনতি ঘটত। হামলাকারীরা মহাসড়ক অবরোধ করে অবস্থান নিয়েছিল।

জানা যায়, রংপুরের পাগলাপীর শলেয়া শাহ এলাকার খগেন চন্দ্র রায়ের ছেলে টিটুল চন্দ্র রায় (৪০) রোববার ইসলাম ধর্ম ও নবীকে নিয়ে ‘ফেসবুকে’ কটূক্তি করে প্রচার চালায়। এ নিয়ে এলাকায় মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনের মাঝে ক্ষোভ দেখা দেয়। এ নিয়ে সোমবার মামলা করা হয়। টিটুলকে গ্রেফতারে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় অভিযান চালায় পুলিশ। কিন্তু টিটুল গ্রেফতার না হওয়ায় এলাকায় এ নিয়ে উত্তেজনা চলতে থাকে। এ নিয়ে উসকানি না দেয়ার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে তিন দিন ধরে প্রচার চালানো হয়। কিন্তু একটি মহল ধর্মীয় উস্কানি ছড়িয়ে গ্রামবাসীর উত্তেজিত করে। কয়েক দিন ধরে তারা বিভিন্ন মসজিদে বৈঠক করে ধর্মীয় ‘সেন্টিমেন্ট’ কাজে লাগিয়ে মসজিদের মাইক ব্যবহার করে প্রচার চালিয়ে আসছিল। গতকাল জুমার নামাজ শেষে এ ঘটনার প্রতিবাদে এলাকার ১০টি মসজিদে মুসল্লিদের ঠাকুরপাড়া গ্রামে মানববন্ধন ও সমাবেশের ডাক দেন।