ঢাকা, মে ৫, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ০৮:০৩:০১

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

একীভূত হতে চাওয়া ব্যাংকের সম্পদের দাম যেভাবে নির্ধারণ করা হবে টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি বিএফইউজে’র দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিএনপির মাথাব্যথার কারণ নেই : ওবায়দুল কাদের বিএনপি একটি রাজনৈতিক দৈত্যের দল : পররাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তি বজায় রাখার জন্য যা-যা করার আমরা করবো: বান্দরবানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবারের ঈদ যাত্রাও স্বস্তিদায়ক হচ্ছে: সেতুমন্ত্রী কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট শিশুদের নতুন করে বাঁচার পথ খুলে দেয় : সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ আসন্ন পবিত্র রমজানে সরকারিভাবে বড় ইফতার পার্টি না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর পুলিশকে জনগণের বন্ধু হয়ে নিঃস্বার্থ সেবা দেয়ার নির্দেশ রাষ্ট্রপতির

প্রেষণে নিয়োগ ও সুপার নিউমারারি পদসহ একগুচ্ছ দাবি পুলিশের

| ১৩ মাঘ ১৪২৩ | Thursday, January 26, 2017

 

Image result for পুলিশের

সরকারি বিভিন্ন দফতরে প্রেষণে (ডেপুটেশন) পুলিশ কর্মকর্তা নিয়োগ ও পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের জন্য সুপার নিউমারারি পদ সৃষ্টিসহ একগুচ্ছ দাবি জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। পুলিশ সপ্তাহ-২০১৭ উপলক্ষে মঙ্গলবার তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সভায় এসব দাবি জানানো হয়। সভায় দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ক্রমে এসব দাবি পূরণের আশ্বাস দেন।

সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্বরাষ্ট্র সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ, আইজিপি একেএম শহীদুল হক, অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মো. মোখলেসুর রহমান, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম, ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম, পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি (সংস্থাপন) হাবিবুর রহমান, গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন উর রশীদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।

 

সভায় আইজিপি একেএম শহীদুল হক পুলিশের কাজে গতিশীলতা আনার জন্য স্বতন্ত্র পুলিশ ডিভিশন গঠনের দাবি তোলেন। একই সঙ্গে তিনি প্রস্তাবিত পুলিশ অধ্যাদেশ-২০০৭ পাস করে আইনে পরিণত করার দাবি জানান।
ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া পুলিশে গ্রেড-১ ও গ্রেড-২ কর্মকর্তার পদ বাড়ানোর প্রস্তাব তুলে ধরে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ছিল পুলিশে পাঁটি গ্রেড-১ পদ থাকবে। কিন্তু দুটি গ্রেড-১ পদ দেয়ার পর আর দেয়া হয়নি। একই সঙ্গে গ্রেড-২ পদ ১০ করার প্রতিশ্রুতি থাকলেও তিনটি গ্রেড-২ পদ দিয়ে আর দেয়া হয়নি। ডিএমপি কমিশনার প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা অর্থাৎ ইন্সপেক্টর থেকে আইজিপি পদমর্যাদার কর্মকর্তা সবার জন্য ঝুঁকিভাতা চালুর দাবি জানান। একই সঙ্গে কনস্টেবল থেকে এসআই পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের ঝুঁকিভাতা দেয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যমান বেতন স্কেলে যে বৈষম্য করা হয়েছে, সেটা দূর করার প্রতি জোর দেন। এ ছাড়া ডিএমপি কমিশনার পুলিশে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ, রাজনৈতিক নেতাকর্মী কর্তৃক পুলিশের ওপর হামলার প্রতিকার চান। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন দলের কোনো কোনো নেতাকর্মীর হাতে পুলিশ আক্রান্ত বা লাঞ্ছিত হলে পুলিশের মনোবল দুর্বল হয়ে পড়ে। একই রেশনে নিুমানের চাল দেয়ার বিষয়টিও তুলে ধরেন ডিএমপি কমিশনার। তিনি পুলিশ সদস্যদের জন্য উন্নতমানের চাল ও রেশন সরবরাহের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম প্রেষণে (ডেপুটেশন) সরকারি বিভিন্ন সংস্থা যেমন- সিটি কর্পোরেশন, বিআরটিএ, বিআরটিসি, বিআইডব্লিউটিএ, রাজউক, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, শুল্ক গোয়েন্দা, ভ্যাট গোয়েন্দাসহ এবং বিভিন্ন দফতর ও অধিদফতরে পুলিশ কর্মকর্তা নিয়োগের দাবি তোলেন। তিনি বলেন, আমরা যারা বিসিএস অষ্টম ব্যাচে ছিলাম, প্রশাসনসহ অন্যান্য ক্যাডারে আমাদের ব্যাচমেটরা অতিরিক্ত সচিব ও সচিব হয়ে গেছে। অথচ পদ খালি না থাকায় আমরা এখনও ডিআইজি পদেই আছি, যা আমাদের মানসিক যন্ত্রণার কারণ। তিনি বলেন, আমাদের একই দায়িত্বে সংযুক্ত রেখে সুপার নিউমারারি পদ সৃষ্টির মাধ্যমে পদোন্নতি দেয়ার প্রস্তাব করেছি। প্রশাসন (অ্যাডমিন) ক্যাডারে এভাবে পদোন্নতি দেয়া হয়। কিন্তু পুলিশকে ‘সুপার নিউমারারি’ পদ থেকে বঞ্চিত রাখা হচ্ছে। সভায় ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও ডিআইজি মনিরুল ইসলাম জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের (সিটিটিসি) সফলতার কথা তুলে ধরেন। তিনি জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় সারা দেশে সিটিটিসির কার্যক্রম চালুর প্রস্তাব করেন। একই সঙ্গে সিটিটিসির সদস্যদের আধুনিক ও বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ দেয়ার দাবি জানান তিনি।
সভায় পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি (সংস্থাপন) হাবীবুর রহমান ঢাকায় একটি আন্তর্জাতিক মানের ট্রেনিং সেন্টার প্রতিষ্ঠার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, এ ট্রেনিং সেন্টারে জঙ্গি প্রতিরোধ, সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধ, টুরিস্ট পুলিশ, নৌপুলিশ, শিল্প পুলিশসহ পুলিশের সব ইউনিটের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার সুযোগ থাকতে হবে। এর প্রস্তাবিত নাম হতে পারে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার। এ ছাড়া টাঙ্গাইলের মহেরা ট্রেনিং সেন্টারের অনুরূপ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুরুষ পুলিশ সদস্যদের জন্য তিনটি ও নারী পুলিশ সদস্যদের জন্য একটি পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করার প্রস্তাব করেন তিনি।
সভায় গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার ও পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোতে একজন করে পুলিশ কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়ার প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, বিদেশে বাংলাদেশীরা নানা ধরনের অভিযোগ ও সমস্যার মধ্যে পড়ে দূতাবাসগুলোতে আসেন। তাদের পুলিশ ক্লিয়ারেন্সসহ পুলিশ সংক্রান্ত নানা বিষয়ে সাহায্যের প্রয়োজন হয়। কোনো বিষয়ে প্রয়োজন হলে দূতাবাস থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হয়। সেখান থেকে আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে পুলিশ সদর দফতরে যায়। পুলিশ সদর দফতর থেকে সংশ্লিষ্ট রেঞ্জ, জেলা ও থানায় যায়, যা অনেক সময়সাপেক্ষ বিষয়। দূতাবাসে একজন করে পুলিশ কর্মকর্তা থাকলে তিনি সরাসরি পুলিশ সদর দফতরের মাধ্যমে প্রবাসীদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে পারবেন।
হারুন অর রশীদ আরও বলেন, পুলিশের আবাসন, ব্যারাক ও যানবাহনের সমস্য প্রকট। থানা ও জেলায় গাড়ির সংখ্যা খুবই কম। এর মধ্যে কোনো ভিআইপি জেলায় গেলে তার প্রটেকশনে সব গাড়ি ব্যস্ত থাকে। এতে অন্য কাজ ব্যাহত হয়। জেলায় ভিআইপি প্রটেকশনের জন্য কমপক্ষে দুটি করে গাড়ি বরাদ্দ দেয়া, থানায় গাড়ির সংখ্যা বাড়ানো, আবাসন সংকট সমাধানের দাবি করেন তিনি।
সভায় আরও বলা হয়, পুলিশকে রাজনৈতিক চাপ মোকাবেলা করে কাজ করতে হয়। রাজনৈতিক নেতাদের অন্যায় চাপের কারণে মামলা তদন্ত বাধাগ্রস্ত হয়। এতে মানুষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ৯-৫টা ডিউটি করেন। কিন্তু পুলিশকে ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা ডিউটি করতে হয়। এজন্য তাদের ওভারটাইম দেয়া হোক। এ ছাড়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বছরে ১০৪ দিন ছুটি পান। পুলিশের ক্ষেত্রে ছুটি একেবারেই কম। এই বাড়তি ডিউটির জন্য ভাতা দাবি করা হয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে। সভায় উত্থাপিত দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের সব দাবি সম্পর্কে আমি অবগত। পর্যায়ক্রমে আপনাদের যৌক্তিক সব দাবি পূরণ করব।