নিজেদের দেশে ফিরবেন রোহিঙ্গারা। প্রতিদিন ৩০০ জন রোহিঙ্গাকে ফেরত নেবে মিয়ানমার। সপ্তাহে দেড় হাজার রোহিঙ্গা ফিরে যাবেন নিজেদের দেশে।
এ ব্যাপারে আজ মঙ্গলবার মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ। মিয়ানমারের নেপিদোতে ওই চুক্তিতে সই করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক এবং মিয়ানমারের মিন্ট থোয়ে।
বিবিসি জানিয়েছে, ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ (ভৌত কাঠামোর আয়োজন) নামে ওই চুক্তির বিষয়ে গতকাল সোমবার থেকে দুই দেশের সচিব পর্যায়ের বৈঠক হয়। তবে ঠিক কবে থেকে ওই ফেরত প্রক্রিয়া শুরু হবে তা নির্দিষ্ট করে জানাননি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক।
জানা যায়, তিন মাস পর ফেরত যাওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বাড়ানো হবে। যেদিন থেকে যাওয়া শুরু হবে, তার পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে প্রক্রিয়াটি শেষ হবে বলে জানা যায়।
পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক বিবিসিকে বলেন, ‘চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন (সপ্তাহে পাঁচদিন) ৩০০ জন রোহিঙ্গাকে ফেরত নেবে।’ তিনি জানান, বাংলাদেশ প্রতি সপ্তাহে ১৫ হাজার রোহিঙ্গা ফেরত পাঠানোর দাবি করেছিল। কিন্তু মিয়ানমার সপ্তাহে দেড় হাজার রোহিঙ্গা ফেরত নিতে রাজি হয়েছে।
শহিদুল হক জানান, উভয় পক্ষই তিন মাস পরে চুক্তি বিষয়ে পর্যালোচনা করবে।
পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, ‘এ ধরনের অবস্থায় এ ধরনের প্রত্যাবাসন এভাবেই হয়। কারণ আমরা সবকিছু চাইতে পারি না। আমরা তাদের নিরাপত্তার কথাও বলব, আবার আমরা চাইব যে একসঙ্গে সবাইকে পাঠিয়ে দেব, ওরা এখনি তা দিতে পারছে না। সবচেয়ে বড় বিষয়টি হলো, আমরা এখানে একটি ধারা রেখেছি, যেখানে বলা আছে যেদিন থেকে যাওয়া শুরু হবে, সেদিন থেকে দুই বছরের মধ্যে ওই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শেষ হবে।’
কিন্তু কবে থেকে রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়া শুরু হবে তা জানাতে পারেননি শহীদুল হক। তিনি বলেন, ‘পদ্ধতি শুরু হয়েছে, এখন দ্রুততম সময়ে তাদের যাওয়া শুরু হবে।’
এদিকে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো একটি বিবৃতিতে জানানো হয়, দুই দেশের সম্মতিতে একটি ফরম পূরণ, যাচাই বাছাইয়ের পর প্রত্যাবাসনের জন্য রোহিঙ্গাদের বাছাই করা হবে। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি পরিবারকে একটি ইউনিট বলে বিবেচনা করা হবে।
যে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা এখন দুই দেশের সীমান্তে জিরো পয়েন্টে আছে, তাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়টি মিয়ানমার সবার আগে বিবেচনা করবে বলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
দুটি যৌথ কমিটি এসব কার্যকলাপ নজরদারি করবে। এর একটি যাচাই বাছাই ও অন্যটি প্রত্যাবাসনের বিষয়টি দেখবে।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে গত ২৩ নভেম্বর একটি সমঝোতা স্মারকে একমত হয় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার।
গত বছর আগস্টের শেষদিকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। কক্সবাজার ও বান্দরবানের বিভিন্ন পথ দিয়ে এসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। কক্সবাজারের উখিয়ায় একাধিক ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন এসব রোহিঙ্গা।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন জানিয়েছে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ছয় লাখ ৪৭ হাজারেরও বেশি। অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের নিবন্ধনকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ১০ লাখের বেশি।