ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্টের অভিযোগে গ্রেফতার রসরাজ দাসের পরিবার এখনও গ্রামে ফেরেনি। সবাই জানে তারা ভারতে চলে গেছে। তবে সরাসরি কেউ স্বীকার করেনি। হিন্দুদের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা-ভাংচুরের আগের দিন রাতে তাদের মতো বেশ কয়েকটি পরিবার গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। ইতিমধ্যে অন্য পরিবারগুলো ফিরে এসেছে। শুক্রবার নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামে রসরাজের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, তালাবদ্ধ ঘর, চারদিকে সুনসান নীরবতা।
এদিকে হামলার ঘটনায় এখনও অনেকে আড়ালে রয়ে গেছেন। এর মধ্যে একজন নাসিরনগর ফান্দাউক ইউপি চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা কামরুজ্জামান মামুন। একটি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যানুযায়ী ঘটনার দিন মূল হামলায় তাকে দেখা গেছে। এমন একটি ছবিও এসেছে যুগান্তরের কাছে। কিন্তু হামলাকারী সন্দেহভাজনদের তালিকার কোথাও তার নাম নেই।
ফেসবুক পোস্টে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে ২৯ অক্টোবর বিকালে হরিণবেড় গ্রামের রসরাজকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। এদিন রাতেই রসরাজের পরিবারের সদস্যরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যান। ২৭ দিনেও তাদের কোনো খোঁজ মেলেনি। স্থানীয়রা বলছেন, তারা কোথায় আছেন কেউ জানেন না।
শুক্রবার হরিণবেড় গ্রামের পশ্চিমপাড়ায় রসরাজের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পুরো বাড়ি খাঁখাঁ করছে। কোথাও কেউ নেই। ঘরের দরজায় তালা। সামনে পড়ে আছে রসরাজের পরিবারের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন মাছ ধরার জাল। এ ছাড়া ৩০ অক্টোবর সকালে হামলা-ভাংচুরের ছাপ দেখা যায় বাড়িটিতে।
স্থানীয়রা জানান, শুধু রসরাজের পরিবারই নয়, হামলার আগের রাতে এবং হামলা পর বেশ কয়েকটি পরিবার গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। অন্যরা ইতিমধ্যে ফিরে এলেও রসরাজের পরিবার ফেরেনি।
প্রতিবেশী ঝর্ণা রাণী দাস বলেন, ‘২৯ অক্টোবর রসরাজকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর ওইদিন মধ্যরাতে কাউকে কিছু না বলে রসরাজ ও তার কাকা জয়দেব দাসের পরিবার গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। তবে তারা কোথায় গেছে আমরা কেউ জানি না। পরদিন হামলার পর আমরাও বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম। পরিস্থিতি শান্ত হলে আমরা ফিরে আসি।’
আরেক প্রতিবেশী রঞ্জন দাস বলেন, ‘রসরাজের পরিবারের কারও ফোন নম্বর না থাকায় আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না।’ এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, রসরাজের পরিবারকে খোঁজার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন স্থানে সন্ধান চালানো হয়েছে। তবে এখনও তাদের পাওয়া যায়নি। আমরা চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।
কোথাও নাম নেই চেয়ারম্যান মামুনের : নাসিরনগরের ফান্দাউক ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি কামরুজ্জামান মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও মন্দির ভাংচুরের ঘটনায় সরাসরি অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। কিন্তু তারপরও অভিযুক্তদের তালিকায় কোথাও তার নাম নেই।
একটি গোয়েন্দা সূত্র জানায়, হামলার দিন বহু যুবকের মাঝখানে তাকেও দেখা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থাটি এমন তথ্য, ভিডিওচিত্র এবং ছবিও পেয়েছে। যুগান্তরের হাতেও এমন একটি ছবি এসেছে। এতে বোঝা যায় চেয়ারম্যান মামুন ওই হামলায় সরাসরি জড়িত ছিল। কিন্তু মামলা কিংবা সন্দেহভাজনদের তালিকায় কোথাও তার নাম নেই। এ ব্যাপারে কথা বলতে একাধিকবার চেয়ারম্যান মামুনের মুঠোফোনে কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, চেয়ারম্যান মামুনের হামলার ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের উদ্যোগে শুক্রবার দুপুরে নাসিরনগরে দত্তবাড়িতে ৩০ জন ক্ষতিগ্রস্তের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। এ সময় তাদের টিন, নগদ অর্থ ও কম্বল দেয়া হয়।